ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘ক্ষতি পোষাতে’ বেচা-বিক্রির সময় বাড়াতে চায় ব্যবসায়ীরা

সারাদেশ ব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে দীর্ঘদিন ধরে বেচা-বিক্রি বন্ধ থাকায় যে ক্ষতি হয়েছে, তা পুষিয়ে নিতে ঈদের সময় দোকান খোলা রাখার সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

পাশাপাশি, সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে মার্কেট-দোকান বন্ধের নির্দেশনায় শেষ দিকের তাড়াহুড়োতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যায় বলেও যুক্তি দিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা জানান, দোকান খোলা রাখার সময়সীমা যদি অন্তত দুই ঘণ্টা বাড়ানো হয় তাহলে ক্রেতাদের নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে কেনাকাটার সুযোগ করে দিতে পারবেন তারা।

এদিকে, করোনা মহামারিতে সংক্রমণ এড়াতে রাজধানীর বড় বড় শপিং সেন্টারগুলোকে সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে প্রশাসন। গত ১ জুলাই থেকে এই নির্দশনা মেনেই হচ্ছে বেচাকেনা। তার আগে গত ১ জুন থেকে টানা এক মাস সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সীমিত পরিসরে চলে বেচাকেনা।

বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিন শনিবার জানান,“ দোকান মালিকদের আবেদনের জেরে গত প্রায় ২০ দিন আগে বেচাকেনার সময় বাড়ানোর জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছি। উনারা বিবেচনা করবেন জানালেও এখনও কিছু হয়নি। ঈদের বাকী আছে আর মাত্র পাঁচ দিন।

ঢাকার নিউ মার্কেট দোকান মালিক সমিতির সভাপতি ডাক্তার শাহীন আহমেদ জানান, “ব্যবসায়ীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন, মহামারির মধ্যেও দিনের বেলায় বিপণিবিতানগুলোতে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তির মধ্যে দূরত্ব বজায় রেখে স্বাভাবিক বেচাকেনা চলছে। কিন্তু সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ রাখার বাধ্যবাধকতার কারণে বিকাল ৫টার পর থেকে ক্রেতাদের মাঝে এক ধরনের  লেগে যাচ্ছে। কারণ ওই সময়টাই বেচাকেনার সবচেয়ে সঠিক সময়। কোরবানির ঈদের মওসুম কাছে আসার কারণেও এমনটি হয়ে থাকতে পারে। এই পরিস্থিতিতে বেচাকেনার সময় বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বিকল্প দেখছি না।”

তিনি জানান, “প্রশাসনের নির্দেশ মোতাবেক সন্ধ্যা ৭টার মধ্যে দোকানপাট বন্ধ করতে হচ্ছে। আমরা এখন চাচ্ছি অন্তত ঈদের আগ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞাটা যেন তুলে নেওয়া হয়। ক্ষুদ্র দোকানিরা যেন কিছুটা বেচাকেনা করে তাদের দীর্ঘদিনের ক্ষতি পুষিয়ে আনতে পারেন।”

এদিকে, মহামারি আসার পূর্বে স্বাভাবিক সময়ে ঢাকার বিপণিবিতানগুলো রাত ৮টার পর থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হত। ব্যবসায়ীরা নতুন স্বাভাবিকতায় আরও এক ঘণ্টা সময় বাড়িয়ে ৯টা পর্যন্ত বেচাকেনার সুযোগ চাচ্ছেন।

মিরপুর-২ নম্বর সেকসনের মিরপুর শপিং সেন্টারের ব্যবস্থাপক আবুল হোসেন জানান, এই মার্কেটের দুটি ফ্লোর নিয়ে পার্কিং অবস্থিত। প্রতি শক্র শুক্রবার বিকাল ৩টা থেকে ৫টা নাগা পার্কিংয়ের দুটি ফ্লোরই গাড়িতে পূর্ণ হয়ে যায়। “অর্থাৎ অন্তত ১০০ গাড়ি সেখানে একত্রিত হয়। কিন্তু বিক্রি জমে উঠতে না উঠতেই ৬টা থেকে দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিতে হয়েছে।”

এই ব্যবসায়ী আরও জানান, “সকাল ১০টায় দোকান খুললে পরিষ্কার করতে করতেই ১১টা বেজে যায়। কিছুক্ষণ বিক্রির পর দুপুরে খাবারের বিরতি। অন্যদিকে বিকাল নাগাদ ক্রেতাদের আনাগোনা অনেক কম থাকে। আবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে গিয়ে দোকানের ভেতরে ২-১ জনের বেশি ক্রেতা এলাউ করা যায়নি। অর্থাৎ বেচাকেনা চলে ধীর গতিতে।”

এই মার্কেট ও মিরপুর-১ নম্বরে কো-অপারেটিভ মার্কেট ব্যবসায়ী সমবায় সঞ্চয় সমিতির সভাপতি নাসির উদ্দিন ভূইয়া জানান, “সরকার যদি আপতত ঈদের আগ পর্যন্ত রাত ৯টা পর্যন্ত বিক্রির সুযোগ দেন এবং ঈদের পরবয় আবার ৮টার সিডিউল ফিরিয়ে আনেন তাহলে ব্যবসায়ীদের উপকার হবে। “এতে করে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার উদ্দেশ্যটিও আরও ভালোভাবে পালন হবে। ক্রেতারা বাড়ি থেকে কেনাকাটা করতে বেরিয়ে আসলে আমরা ব্যবসায়ীরা তো আর তাদের ফিরিয়ে দিতে পারি না।”

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন