নুরুল্লাহ নুর
বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া কোভিড-১৯ ভাইরাসটি মহামারি আকার ধারণ করেছে। যার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অর্থনীতি এবং প্রশাসনসহ অনেক ক্ষেত্রে। এরই মধ্যে আমরা হারিয়েছি কোভিড-১৯ প্রতিরোধে কাজ করা সম্মুখ যোদ্ধাদের। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন একজন রোগীকে সুস্থ করার জন্য রাত-দিন পরিশ্রম করা ডাক্তার, রাষ্ট্রের অতন্দ্র প্রহরী পুলিশ, সংবাদকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিগণ।
অন্যদিকে প্রায় চার মাস ধরে বন্ধ রয়েছে সব ধরনের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এসএসসি পরীক্ষা হয়ে গেলেও এইচএসসি, জেএসসি এবং পঞ্চম শ্রেণি সমাপনী পরীক্ষা হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
চীন থেকে কোভিড-১৯ ভাইরাসটির উৎপত্তি হওয়ার পর বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তির কথা প্রথম জানা যায় চলতি বছরের ৮ই মার্চ এবং প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ১৮ই মার্চ।
তিন মাসের ব্যাবধানে সংক্রমিত রোগীর সংখ্যা ৩ জন থেকে ২ লক্ষ জনে উন্নীত হয়েছে। যার অন্যতম প্রধান কারণটি হচ্ছে ‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত না নেয়া’।
আমরা দেখেছি পৃথিবীর প্রভাবশালী দেশসমূহের সবচেয়ে ব্যস্ত সড়কগুলোও পরিবহন শুন্য। সংকটপূর্ণ সময়ে বন্ধ রাখে সবধরনের অফিসিয়াল কার্যক্রম ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। পক্ষান্তরে আমাদের দেশে আমরা দেখছি বিপরীত চিত্র। প্রশাসন বারবার নিষেধ করা সত্ত্বেও বন্ধ করতে পারছেনা মানুষের চলাফেরা। ঈদ উপলক্ষে প্রথম দিনের লঞ্চে ছিলো উপচে পড়া ভীড়, যা অবাক করেছিলো সচেতন মহলকে৷ লকডাউন ঘোষিত বিভিন্ন এলাকায়ও মানুষ স্বাভাবিক যাতায়াত করছে, যেন কেউই মানতে চায়না পুলিশের নিষেধাজ্ঞা। অথচ একটু সচেতনতাই পারতো পরিস্থিতির পরিবর্তন করতে।
কোভিড-১৯ ভাইরাসটি যখন চীনে ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন আমরা বলেছিলাম চীনেই তো আমাদের দেশে তো নয়! তারপর যখন আমাদের দেশে ছড়াতে শুরু করে তখন আমরা বলেছিলাম এখনো তো ঢাকায়, আমার এলাকায় তো নয়।
আমরা অনেকেই ‘বয়েলিং ফ্রগ’ তত্ত্ব (Boilling frog theory) সম্পর্কে অবগত। ব্যাঙটি যদি সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে পাত্র থেকে লাফিয়ে পড়তো, তাহলে ব্যাঙটির মৃত্যু ঘটতো না।
তারপরও কিছু লোক বলতে থাকবে যে, ভাগ্যে যা আছে তা-ই হবে। অথচ স্বয়ং মহানবী (সা.) বলেছেন সতর্কতা অবলম্বন করতে। এ বিষয়ে হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিস, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি আগে আমার উট বাঁধব, এরপর আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করব, নাকি উট ছেড়ে দেব, এরপর তাওয়াক্কুল করব?’ রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, ‘প্রথমে উটকে বাঁধো, এরপর তাওয়াক্কুল করো।’ (তিরমিজি)।
সম্প্রতি জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন (২০ জুন,২০২০) অনুসারে, কোভিড-১৯ ভাইরাসে সংক্রমিত রোগী শনাক্তের তালিকায় শীর্ষ ২৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯তম এবং দক্ষিণ এশিয়ায় ৩য়।
কোভিড -১৯ এ সংক্রমিত হওয়া সত্ত্বেও নিউজিল্যান্ড, স্লোভেনিয়া, মন্টিনিগ্রো এবং তানজানিয়া সহ বেশ কয়েকটি দেশ নিজেকে কোভিড -১৯ মুক্ত বলে ঘোষণা করতে সক্ষম হয়েছে। তারা সচেতন ছিল বলে শুরু থেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো এবং কোভিড-১৯ ভাইরাস থেকে নিজেদেরকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
সর্বোপরি সচেতন হতে হবে আমাকে, আপনাকে। প্রত্যেকের স্ব-স্ব স্থান থেকে সচেতনতাই পারে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ মুক্ত পরিবেশ গড়তে৷
নুরুল্লাহ নুর
শিক্ষার্থী
আনন্দবাজার/শাহী