ঢাকা | শুক্রবার
১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রেলপ্রকল্প থেকে ভারতকে বাদ দিল ইরান

সম্প্রতি চিনের সাথে প্রতিরক্ষা চুক্তির পর এ বার চার বছর আগে সই করা রেলপ্রকল্পের চুক্তি থেকে ভারতকে বাদ দিয়ে দিল ইরান। গেল সপ্তাহে লাইন পাতার কাজ একতরফা ভাবে উদ্বোধন করে এমন ইঙ্গিতই দিল ইরান। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ ব্যাপারে এখনও মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্তা শুধু এইটুকুই জানিয়েছেন, ‘‘পরেও প্রকল্পে জুড়ে যেতে পারি আমরা।’’

এদিকে, চাবাহার সমুদ্রবন্দর থেকে আফগানিস্তান সীমান্ত লাগোয়া ইরানি শহর জাহেদান পর্যন্ত ৬২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে রেল চালানোর জন্য ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের মধ্যে একটি ত্রিদেশীয় চুক্তি হয়েছিল ২০১৬ সালে। চুক্তির মূল উদ্দেশ্য ছিল, আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলির সাথে ভারতের একটি বিকল্প বাণিজ্য-পথ গড়ে তোলা।

কিন্তু দেখা যায় গত সপ্তাহে ওই রেলপ্রকল্পের একাংশে লাইন পাতার কাজ একতরফা ভাবেই উদ্বোধন করেন ইরানের পরিবহণ ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী মহম্মদ এসলামি। তিনি জানান, ওই রেলপথটি আরও একধাপ বাড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হবে আফগানিস্তান সীমান্তের আরও একটি শহর জারাঞ্জে। ইরান সরকারের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা পরে সংবাদমাধ্যমকে জানান, ভারতের কোনও সহায়তা ছাড়া তেহরানের রেল কর্তৃপক্ষ একাই ওই প্রকল্পটি করবে। কাজ শেষ হবে ২০২২ সালের মধ্যে। প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ৪০ কোটি ডলার দেবে ইরানের জাতীয় উন্নয়ন তহবিল।

বিশেষজ্ঞদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রকল্প থেকে ভারতের বাদ পড়ার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে দু’টি। চিন আর আমেরিকা। তেহরানের সাথে সম্প্রতি ২৫ বছর মেয়াদের ৪০ হাজার কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষর করেছে বেইজিং। জঙ্গিদের অর্থ ও অস্ত্রে মদত দেওয়ার অভিযোগে আমেরিকা অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা জারির পর যা খুব প্রয়োজন হয়ে পড়েছিল তেহরানের। অন্যদিকে, একই ইস্যুতে ইরানের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার জন্য দিল্লির উপর বছরদু’য়েক ধরেই রীতিমতো চাপ বাড়াচ্ছিল ওয়াশিংটন। যার পরিণতিতে ইরান থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সরকারকে।

অবশ্য আমেরিকা চাবাহার সমুদ্রবন্দর ও সংশ্লিষ্ট রেলপ্রকল্প নির্মাণ থেকে ভারতকে সরে আসার জন্য সরাসরি কোনরকম চাপ দেয়নি।

তবে এটাও সত্য, ২০১৬ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদী তেহরান সফরে গিয়ে ইরান ও আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্টের সাথে বৈঠকে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি করার পর রেলপ্রকল্প এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে ভারতের তরফে ততটা আগ্রহ দেখা যায়নি, জানাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহল। আরও জানা যায়, ভারতের তরফে কাজটা করার কথা ছিল ‘ইন্ডিয়ান রেলওয়েজ কনস্ট্রাকশান লিমিটেড (আইআরসিওএন)’-এর। প্রকল্পে আইআরসিওএন-এর ১৬০ কোটি ডলার খরচ করার কথা ছিল। ভারতের উদ্বেগ ছিল, কাজটা শুরু করলে আমেরিকা ভারতের বিরুদ্ধেও জারি করতে পারে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন