মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশ ফেরত প্রবাসীকর্মী এবং মৃত কর্মীর পরিবারের জন্য সম্প্রতি পুনর্বাসন ঋণ বিতরণের নীতিমালা প্রকাশ করেছে প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৩ জুলাই) প্রকাশিত নীতিমালায় জানানো হয়, প্রথম দফায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনার ২০০ কোটি টাকা ৪ শতাংশ সুদে ঋণ হিসাবে বিতরণ করবে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক।
জানা যায়, করোনার কারণে চলতি বছরের ১ মার্চের পর থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশে ফেরত আসা অভিবাসীকর্মীরা পাবেন এ ঋণ।
অন্যদিকে, বিদেশে থাকাবস্থায় যে প্রবাসীকর্মী মারা গেছেন, তার পরিবারের একজন সদস্য এ ঋণ পাওয়ার যোগ্য হবেন।
কর্মীদের মাঝে ঋণ বিতরণের জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে বিনা সুদে ২০০ কোটি টাকা জোগান দিয়েছে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড।
ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী, এক ব্যক্তিকে সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দিতে পারবে ব্যাংক। সরল সুদের এই ঋণের মেয়াদ হবে খাত অনুযায়ী ১ বছর থেকে ৫ বছরের মধ্যে।
এ বিষয়ে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী ইমরান আহমেদ সাংবাদিকদের জানান, ”করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসীকর্মীদের টেকসই পুনর্বাসনের লক্ষ্যে স্বল্প ও সরল সুদে এই ঋণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।”
এছাড়া, পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক প্রদত্ত ৫০০ কোটি টাকা দিয়ে আরও ব্যাপক আকারে পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রবাসী কল্যাণ ডেস্কের হিসাব মতে, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দুই লাখেরও বেশি শ্রমিক দেশে ছুটিতে এসেছিলেন, যারা মহামারির কারণে আটকে পড়েন।
ঠিক এরপর যখন ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেল, তখনও গত দুই মাসে চার্টার ফ্লাইটে করে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক দেশে আসেন বলেও তথ্য ব্র্যাকের অভিবাসন কর্মসূচির।
এদিকে, প্রনোদোনা পাওয়ার জন্য, আবেদনকারীর পাসপোর্টের (পাসপোর্টর বহির্গমন ও আগমন সিলযুক্ত পাতাসহ) সত্যায়িত ফটোকপির সাথে বিএমইটি’র স্মার্ট কার্ড বা চাকরিরত দেশের আইডি কার্ডের সত্যায়িত ফটোকপি বা বৈধ পথে বিদেশ গমনের প্রমাণপত্র বা বিদেশে চাকুরির চুক্তিপত্র বা বৈধ পথে রেমিটেন্স প্রেরণের প্রমাণপত্র জমা দিতে হবে।
একইসাথে ‘ক্ষতিগ্রস্ত অভিবাসী কর্মী’ মর্মে সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিসের প্রত্যয়নপত্র জমা দিতে হবে।
তাছাড়া, “অন্য কোনো সংস্থা, ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান অথবা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হতে ঋণ খেলাপি ব্যক্তি ঋণ পাবেন না। ঋণ আবেদনকারীকে অবশ্যই নন-জুডিশিয়াল স্টাম্পে এ সংক্রান্ত হলফনামা দাখিল করতে হবে।
পাশাপাশি, উন্মাদ, দেউলিয়া, মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি ও রাষ্ট্রদ্রোহী মামলার আসামি ঋণের জন্য অবিবেচিত হবেন বলেও শর্তে যুক্ত করেছে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
জানা যায়, সর্বোচ্চ দুই লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ‘সহজামানত’ রাখা না লাগলেও এর উর্ধ্বে হলে দেড় গুণ সমপরিমাণ সহজামানত ধার্য করেছে সরকার।
তবে, যে কোনো পরিমাণ ঋণে নেয়ার ক্ষেত্রে প্রকল্প, ব্যবসার মালামাল বা অস্থাবর ও অন্যান্য সম্পদ প্রাথমিক জামানত হিসেবে দায়বদ্ধ থাকবে ব্যাংকের নিকট।
এছাড়াও, ঋণ পরিশোধে সক্ষম ন্যূনতম এমন একজনকে গ্যারান্টার হিসাবে রাখার শর্ত দিয়ে নীতিমালায় জানানো হয়, এক্ষেত্রে আবেদনকারীর পিতা, মাতা, স্বামী বা স্ত্রী, ভাই, বোন বা নিকটতম আত্মীয়-স্বজনের বাইরে আর্থিকভাবে সচ্ছল ’সমাজের গণ্যমান্য ব্যক্তিকেও’ গ্যারান্টার হিসাবে রাখা হবে।
উল্লেখ্য, ৪ শতাংশ সরল সুদে ঋণ দেয়া হলেও মেয়াদি ঋণের ক্ষেত্রে কিস্তি খেলাপি এবং ক্যাশ ক্রেডিট ঋণের ক্ষেত্রে মঞ্জুরিপত্রের শর্ত মোতাবেক যথাসময়ে সমন্বয়ে ব্যর্থতার জন্য ‘২% দণ্ড সুদ আরোপ করা হতে পারে’ বলে নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।
আনন্দবাজাত/শাহী