মানবজাতি প্রাণঘাতী রোগ থেকে নিজেদের প্রতিরোধ করতে যুগ যুগ ধরে ব্যবহার করছে শক্ত খোলসবিশিষ্ট সামুদ্রিক প্রাণিটির ফ্যাকাশে নীল রক্ত! তবে কল্পকাহিনীর মতো শোনালেও, এটি কিন্তু বেশ পুরনো বিজ্ঞান। এই প্রাণিটিকে বলা হয় হয় ‘জীবন্ত জীবাশ্ম’ এবং পরিচিত রাজকাঁকড়া (হর্সহো ক্র্যাব) নামে।
জানা গেছে, আবিষ্কৃত ওষুধ মানুষের শরীরের জন্য কতোটা নিরাপদ সেটা যাচাই করতে ব্যবহার করা হয় এই রাজকাঁকড়ার রক্ত। বিগত কয়েক দশক ধরেই এটি হয়ে আসছে। প্রতি বছর লাখ লাখ রাজকাঁকড়া ধরে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন গবেষণাগারে। সেখানে কাঁকড়াগুলোর ঠিক হৃৎপিণ্ডের কাছের একটি শিরা কেটে বের করে নেয়া হয় কিছুটা রক্ত। এরপর পুনরায় সেটিকে প্রকৃতিতে ছেড়ে দেয়া হয়।
বর্তমানে চলতি করোনা মহামারীর সময় নতুন করে প্রাসঙ্গিক এবং অপরিহায হয়ে উঠেছে এই রাজকাঁকড়ার নীল রক্ত।
সুনির্দিষ্ট রোগের জন্য তৈরি ওষুধে কোনো বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া আছে কিনা- তা যাচাই করতেই রাজকাঁকড়ার রক্তের প্রয়োজন হয়। এগুলো এমন এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া, যা খুব অল্প পরিমাণেও মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে। রাজকাঁকড়ার রক্ত এই যাচাইয়ের কাজটি নিখুঁতভাবে করতে পারে। কারণ, এই রক্ত সামান্য উপাদানগত পরিবর্তনে দৃশ্যমান কিন্তু বড় প্রতিক্রিয়া দেখায়।
তবে রাজকাঁকড়ার রক্তের বিকল্প খুঁজতে অনেক গবেষণা হয়েছে। এমনকি একটি বিকল্প দিয়ে ওষুধ পরীক্ষা করা ইউরোপে ২০১৬ সালে অনুমোদনও পেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু সংস্থাও এতে যুক্ত হয়েছে।
কিন্তু আমেরিকান ওষুধ নিরাপদ কিনা তা যাচাই করতে কী ব্যবহার করা হবে সেটি যারা নির্ধারণ করে সেই সংস্থা জানিয়েছে, বিকল্প উপায়গুলো যথেষ্ট পরিমাণে কার্যকরী কিনা তা তারা প্রমাণ করতে সক্ষম নন। তাই যুক্তরাষ্ট্রে ওষুধ বিক্রি করতে হলে সব সংস্থাকে ওষুধ পরীক্ষার জন্য রাজকাঁকড়ার রক্তের ব্যবহার চালিয়ে যেতে হবে।
ফলে কেউ যদি যুক্তরাষ্ট্রে করোনার ভ্যাকসিন মানুষের দেহে প্রয়োগ করতে চায়, তবে তাকে অবশ্যই পুরনো উপায়েই আগে পরীক্ষা করতে হবে। তবে কিছু ওষুধ সংস্থা বলছে, তারা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম কাঁকড়া থেকে রক্ত নিয়ে করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষা করতে পারে।
যেহেতু বিভিন্ন দেশে বিকল্প উপায়ে ওষুধ বা ভ্যাকসিন পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেহেতু বিকল্প উপায় খুঁজে দেখার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানাচ্ছেন ডা. বারবারা। তিনি বলেন, এখানে অন্তত ৩০টি সংস্থা করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে এবং তাদের প্রত্যেককেই এই পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে। সুতরাং আমার উদ্বেগের ব্যাপার হলো রাজকাঁকড়ার সংখ্যা নিয়ে, কারণ তারা বাস্তুতন্ত্রের মূল একটি অংশ। তাই জীববৈচিত্র্য রক্ষায় আমাদের প্রাকৃতিক উৎসের ওপর এই নির্ভরতা কমাতে হবে।
আনন্দবাজার/এইচ এস কে