ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাধবপুরে বন্ধ থাকা ৫ রেল স্টেশন অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানা

আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনের মাধবপুর উপজেলার ৫টি রেল স্টেশনের এখন করুণ দশা। রেলের মূল্যবান যন্ত্রপাতি লোপাট হয়ে যাচ্ছে। তালাবদ্ধ রেল স্টেশনগুলো চালু করার কোনো উদ্যোগ নেই। মাধবপুর উপজেলার মধ্যে কাশিমনগর,শাহপুর, তেলিয়াপাড়া, ইটাখোলা, ছাতিয়াইন প্রায় বন্ধ।

এর মধ্যে ইটাখোলা, তেলিয়াপাড়া, কাশিমনগরে তিনটি রেল স্টেশনে মাঝে মাঝে কিছু লোকাল ট্রেন যাত্রা বিরতি করলেও স্টেশন মাস্টার না থাকায় প্রচুর যাত্রী বাধ্য হয়ে বিনা টিকিটেই ট্রেন ভ্রমণ করছেন। স্টেশন ৫টি সংস্কার করে চালু করলে সরকারের রাজস্ব প্রাপ্তিসহ এলাকাবাসীর ট্রেন চলাচলে সুবিধা হতো।

এছাড়া স্টেশনগুলো বন্ধ ও পরিত্যক্ত হয়ে পড়ায় এখানে নানা অসামাজিক ও অপরাধীদের নিরাপদ আস্তানায় পরিণত হয়েছে। কাশিমনগর রেল স্টেশনের টিকিট মাস্টার নুরুল ইসলাম গত ৮ বছর আগে মারা যাবার পর এ স্টেশনে কোনো নতুন লোকবল পদায়ন করা হয়নি। যে কারণে রেল স্টেশনের কার্যালয়ে তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। স্টেশনের দোকানদার সুধীর চন্দ্র দাস জানান, এখন পার্শ্ববর্তী ১৫-২০টি গ্রাম থেকে আখাউড়া-সিলেট রোডে প্রায় প্রতিদিন ৪টি লোকাল ট্রেনে ২/৩শ যাত্রী সাধারণ ওঠানামা করে। কিন্তু এ স্টেশনে তালাবদ্ধ থাকায় যাত্রীরা বাধ্য হয়েই বিনা টিকিটেই ভ্রমণ করছেন। একই অবস্থা তেলিয়াপাড়া ও শাহপুর, ইটাখোলা রেল স্টেশনের। ব্রিটিশ আমলে তেলিয়াপাড়া রেল স্টেশন এক সময় খুবই জমজমাট ছিল। পার্শ্ববর্তী সুরমা, তেলিয়াপাড়া চা বাগান থেকে উৎপাদিত চা-পাতা সহজেই চট্টগ্রাম ওয়ার হাউজে পাঠানো হতো। কিন্তু রেল স্টেশনটি ক্রমে ক্রমে এখন বন্ধ হয়ে পড়েছে।

প্রায় ৭ বছর আগে টিকিট মাস্টার আব্দুল হাই মারা যাবার পর এখানে নতুন করে কোনো জনবল দেওয়া হয়নি। এ রেল স্টেশনে অনেক সরকারি সম্পদ ইতিমধ্যে চুরি হয়ে গেছে। সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী প্রয়াত এনামুল হক মোস্তফা শহীদ তেলিয়াপাড়া রেল স্টেশন সংস্কারের উদ্যোগ নিলেও তিনি মারা যাবার কারণে তা আর হয়নি। এ ছাড়া ইটাখোলা স্টেশন একটি সু প্রসিদ্ধ স্টেশন ছিল। এ রেল স্টেশন থেকে অনেক পণ্য ও মানুষ রেলপথে আসা-যাওয়া করত। কিন্তু এ ঐতিহ্যবাহী রেল স্টেশনে এখন দু-একটি লোকাল ট্রেন যাত্রা বিরতি করলেও প্রায় এক যুগের বেশি সময় ধরে এটি বন্ধ রয়েছে। অনেক মূল্যবান যন্ত্রপাতি এখান থেকে খোয়া গেছে। ছাতিয়াইন ও সুতাং রেল স্টেশন প্রায় ২ যুগের বেশি সময় ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে।

২নং চৌমুহনী ইউ/পি চেয়ারম্যান আপন মিয়া জানান, মাধবপুরে দেশের প্রায় ১০০টির বেশি নামিদামি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এ কারণে এখন রেলপথে মানুষের পণ্য চালানসহ যাত্রীদের ভ্রমণ চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ছাড়া সড়ক পথে বেশি দুর্ঘটনা হওয়ায় রেল পথকে মানুষ বেশি আরামদায়ক ও নিরাপদ মনে করে। এ কারণে বন্ধ ৫টি রেল স্টেশন সংস্কার করে চালু করলে এলাকার মানুষের সুবিধার পাশাপাশি শিল্প প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী চালান দেওয়া সহজ হবে। এতে সরকারেরও রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

মাধবপুর বাসী বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাহবুব আলীর দৃষ্টি আকর্ষন করে দাবি জানান মাধবপুরের বন্ধ ৫টি রেল স্টেশন সংস্কার ও লোকবল নিয়োগ খুবই প্রয়োজন। ৫ টি রেল স্টেশন চালু হলে রেল পথে মানুষের ভ্রমণ সহজ হবে।

আনন্দবাজার/শাহী/লিবি

সংবাদটি শেয়ার করুন