ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

তাবলীগের বিদেশি সদস্যদের অবস্থান নিয়ে কৈফিয়ত চায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

তাবলীগ জামাতের প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশি সদস্য এখনও কেন ভারতে আটকা, কেন্দ্রকে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে বলে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আজ মন্তব্য করেছে। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকশো বাংলাদেশি সদস্যও রয়েছে।

এদিকে, তাবলীগ জামাতের বিদেশি সদস্যদের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ৩৪জন বিদেশি নাগরিক ভারতের শীর্ষ আদালতের শরণাপন্ন হয়েছেন। তাদের আবেদনের শুনানির প্রেক্ষিতেই সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা আজ এ মন্তব্য করেন।

অবশ্য মূল মামলাটি আগামী ২রা জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি ঘোষণা করা হয়েছে। কেননা কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে এখনও বিদেশি তাবলীগ সদস্যদের আবেদনের প্রতিলিপিই পৌঁছয়নি।

এর কিছুদিন আগে গত ২রা এপ্রিল ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ৯৬০জন বিদেশি তাবলীগ সদস্যকে দশ বছরের জন্য ‘ব্ল্যাক লিস্টেড’ (কালো তালিকাভুক্ত) করার কথা জানায়। ৪ঠা জুন সেই তালিকায় যোগ করা হয় আরও প্রায় ২৫০০ জনকে।

তাদেরকে এই কালো তালিকাভুক্ত করার অর্থ হল আগামী দশ বছরের জন্য তারা ভারতে আসার আর কোনো ভিসা পাবেন না।

জানা যায়, এই বিদেশি নাগরিকরা অনেকেই গত মার্চে দিল্লিতে তাবলীগের সদর দফতর মারকাজ নিজামুদ্দিনে এক ধর্মীয় সমাবেশে যোগ দিয়েছিলেন। সরকার পরবর্তীতে যাকে করোনাভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম প্রধান হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করে।

ঠিক এরপরই তাবলীগ জামাতের বিরুদ্ধে ভারতে ইসলামোফোবিয়ার বিরাট ঝড় বয়ে যায়। তখন থেকেই সারা দেশজুড়ে বিদেশি তাবলীগ সদস্যদের খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হতে থাকে।

বর্তমানে তাবলীগের এমনই ৩৪ জন বিদেশি সদস্য – যারা ৩৪টি বিভিন্ন দেশের নাগরিক – তারা সম্মিলিতভাবে ভারত সরকারের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গেছেন। যেখানে তাদের মধ্যে মূল আবেদনটি করেছেন ফরাসি নাগরিক, মওলানা আল হাদরামি।

ওই আবেদনে জানানো হয়েছে, যেভাবে বিদেশি নাগরিকদের বক্তব্য না-শুনেই ভারত সরকার ‘একতরফাভাবে’ এই ‘ব্ল্যাক লিস্ট’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সংবিধানের আর্টিকল ২১-র পুরপুরি পরিপন্থী।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট

মওলানা আল হাদরামি তাদের আবেদনে আরও জানিয়েছেন, ভারত সরকার ইচ্ছে করে তাদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে রাখায় এই শত শত বিদেশি তাবলীগ সদস্য এখন দেশেও ফিরতে পারছেন না।

এর মধ্যে জানা যায় আবেদনকারীদের মধ্যে একজন থাই মহিলাও আছেন – যিনি আবার সাত মাসের গর্ভবতী। তার অবস্থাও অবিকল একই রকম। তিনিও আজ পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইন সেন্টারেই থাকতে বাধ্য হচ্ছেন।

থাইল্যান্ডে ফিরে গিয়ে যেন তিনি নিজের দেশে নিরাপদে ও মর্যাদার সাথে সন্তানের জন্ম দিতে পারেন, ভারতীয় সুপ্রিম কোর্টের কাছে তিনি সেই আর্জিও জানিয়েছেন।

সুপ্রিম কোর্টের অবকাশকালীন বেঞ্চের তিনজন বিচারপতি – এ এম খানউইলকর, দীনেশ মাহেশ্বরী ও সঞ্জীব খান্নার এজলাসে আজ সোমবার সকালে এই মামলার শুনানি শুরু হয়।

মামলার শুনানির শুরুতেই বেঞ্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের একটি প্রতিলিপি দেখতে চান। যখন জানা যায়, এ ব্যাপারে সরকার এখনও পর্যন্ত শুধু প্রেস বিবৃতিই দিয়েছে – কিন্তু কোনরকম নির্দেশ জারি করেনি, বিচারপতিরা রীতিমতো বিস্ময় প্রকাশ করেন।

আবেদনকারীদের পক্ষে সিনিয়র আইনজীবী সি ইউ সিং জানান, “সরকার এই বিদেশি নাগরিকদের ঢালাওভাবে কালো তালিকাভুক্ত করলেও তাদের কাউকে ব্যক্তিগতভাবে কোনও নোটিশ ধরায়নি। যেখানে তাদের ভিসা বাতিল করে কোনও নির্দেশও জারি হয়নি।”

কলকাতার এই হজ ক্যাম্পেই কোয়ারেন্টাইনে আছেন তাবলীগ সদস্যরা

“অথচ এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের সবার পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে নেওয়ার ফলে তারা নিজের দেশেও ফিরতে পারছেন না!” এরপরই সুপ্রিম কোর্ট শুনানি ২রা জুলাই পর্যন্ত মুলতুবি করার সিদ্ধান্ত নেয়।

তবে সেই সাথে বিচারপতিরা জানান, “এই বিদেশি নাগরিকরা কেন এখনও ভারতে রয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারকে আমাদের কাছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে।”

“তাদের ভিসা যদি বাতিল না-করা হয়ে থাকে, তাহলে শুধুমাত্র সেই কারণেই এই আবেদন খারিজ করা যেতে পারে”, বলেও মন্তব্য করেন তারা।

উল্লেখ্য, এই মামলার রায়ের ওপরেই এখন নির্ভর করছে ভারতে আটকে পড়া শত শত বাংলাদেশি-সহ বিদেশি তাবলীগ সদস্য কবে নিজের দেশে ফিরতে পারবেন। এছাড়া আগামী এক দশকে তারা আদৌ কখনও আর ভারতে আসতে পারবেন কি না!

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন