ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

একাধিক চুরির ঘটনায় আতঙ্কে বশেমুরবিপ্রবি’র অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা

চলমান করোনা পরিস্থিতিতে টানা লকডাউন এবং দেশের অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত গোপালগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বশেমুরবিপ্রবি) দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধের কারণে মেস ভাড়া নিয়ে নিয়ে একদিকে শিক্ষার্থীদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই, অন্যদিকে মেস ফাঁকা থাকার সুবাদে একের পর এক চুরির ঘটানা বেড়েই চলেছে।

বশেমুরবিপ্রবি’র বিভিন্ন স্তরের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত মেস ভাড়া মওকুফ কমিটির মাধ্যমে স্থানভেদে ২৫ থেকে ৪০ শতাংশ মেস ভাড়া মওকুফ করা সম্ভব হলেও মেসগুলোর নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা যাচ্ছে না।

এখন পর্যন্ত গত এক মাসে গোপালগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৬টি ছাত্রাবাসে চুরির ঘটনা ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে ৷ এ সকল ছাত্রাবাসে বশেমুরবিপ্রবির শিক্ষার্থীরা ভাড়া থাকেন। একের এক চুরির ঘটনায় আতঙ্কে রয়েছেন শিক্ষার্থীরা ৷ চুরির ভয়ে মেস ছেড়ে দিয়েছেন অনেকেই৷

সর্বশেষ গোপালগঞ্জের নবীনবাগের এক মেসের গ্রীল কেটে নগদ ১২ হাজার টাকা চুরির ঘটনা ঘটেছে ৷ এ বিষয়ে নবীনবাগে চুরি হওয়া মেসে বসবাসকারী বশেমুরবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী আল মাহমুদ মুরাদ জানায়, “হঠাৎ করে ছুটির ঘোষণার কারনে আমরা আমাদের সেমিস্টার ফি’র টাকা লকারে সাবধানে রেখে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু আজ বাসা ছাড়ার জন্য এসে চুরির ঘটনার শিকার হই ৷ ভেতর থেকে ছিটকানি লাগানো দেখে অবাক হই, অতঃপর বাসার মালিকের সহিত দরজা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ এর পর দেখি সব ছড়ানো ছিটানো। এমতাবস্থায় আমি কিছু বুঝে উঠতে পারছিনা কি করবো। এভাবে এই পরিস্থিতি এমন একের পর এক চুরি সত্যিই দুঃখজনক ৷”

এ ব্যাপারে বাড়ির মালিকের সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে বার বার যোগাযোগের চেস্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি ৷

এছাড়াও নবীনবাগে একদিন আগেই আরেক মেসে চুরির ঘটনা ঘটে ৷ সেখান থেকে নগদ ১৫ হাজার টাকা, একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা, একটি ল্যাপটপ এবং দুটি ফোনসহ প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়।

এ বিষয়ে ওই মেসে ভুক্তভোগী বশেমুরবিপ্রবির অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী নাফিজ ইমতিয়াজ আকাশ বলেন, “লকডাউন এতদিন দীর্ঘ হবে আমরা বুঝিনি তাই অনেক মূল্যবান জিনিসপত্র রেখে এসেছিলাম। পরবর্তীতে গত ১৩ জুন জানতে পারি মেসে চুরি হয়েছে এবং মেসে যাওয়ার পর দেখতে পাই প্রায় ১ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার মালামাল চুরি হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ছুটির সময়টায় কোনো সংঘবদ্ধ চক্র ছাত্রাবাসগুলোতে চুরির ঘটনা ঘটাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে পুলিশের একটি তদন্ত করা উচিত। এছাড়া শিক্ষার্থীদেরও সতর্ক থাকা উচিত, মূল্যবান জিনিসপত্র মেসে রেখে আসা উচিত নয়।”

এর আগে গোপালগঞ্জের গোবরা এলাকায় দুটি এবং চৌরঙ্গী সংলগ্ন এলাকায় একটি মেসে চুরির ঘটনা ঘটেছে।

গোবরা এলাকায় বসবাসকারী ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থী তাওহীদ ইসলাম বলেন, “আমাদের রুম থেকে কম্পিউটার সিপিইউ, স্যামসাং টিভি মনিটর, লজিটেক হেড ফোন, সাউন্ড বক্স, ফ্যান, একটি ফোন এবং পিসির হেডফোন চুরি হয়েছে।”

এধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বাড়ি মালিক ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নিকট সহযোগিতা কামনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমরা চাই বাড়িওয়ালারা আরো দায়িত্বশীল হোক, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী চুরির ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে ব্যবস্থা গ্রহন করুক এবং অনিরাপদ মেস পরিচালনার জন্য ক্ষতিপূরণ আদায়ে জেলা প্রশাসনের সহায়তা কামনা করছি। একই সাথে সাথে আরো প্রত্যাশা করছি যে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনও আবাসন সংকট সমস্যা কাটিয়ে ওঠতে অতি দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে।”

ঘটনার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে গোপালগঞ্জ সদর থানার ওসি মনিরুল ইসলাম বলেন, “কেউ মামলা করলে আমরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবো। এছাড়া প্রত্যেকের নিজের মালামাল রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা নিজেকেই করতে হবে। কারণ ছাত্রাবাসগুলো বিভিন্ন অলি গলিতে অবস্থিত, স্বল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়ে সকল ছাত্রাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।”

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন