শনিবার, ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সোনালি আঁশ রফতানিতে ফিরেছে আশা আলো

করোনার সংক্রমণ রুখতে নজিরবিহীন লকডাউনে অবরুদ্ধ সারা পৃথিবী। করোনার প্রভাব সরাসরি পড়েছে দেশের বিভিন্ন খাতে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, গত এপ্রিল মাসে রফতানি কমেছে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৮৩ শতাংশ। গতবছরে এই সময়ে রফতানি হয়েছিল ৩০৩ কোটি মার্কিন ডলার। আর এ বছরের এপ্রিলে রফতানি হয়েছে মাত্র ৫২ কোটি ডলার। এমতাবস্থায় আশা জাগাচ্ছে দেশের সোনালি আঁশ। বেড়েছে পাট ও পাটজাত পণ্যের রফতানি।

যেখানে প্রধান রফতানি পণ্য তৈরি পোশাক, চামড়াসহ সব খাতের অবস্থাই নাজুক, সেখানে চলতি অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানি করে ৭৯ কোটি ১৩ লাখ ডলার আয় করেছে বাংলাদেশ। এই অঙ্ক গত বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ বেশি। আর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৬ দশমিক ৬৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই-এপ্রিল মাসে রফতানি হয়েছিল ৬৯ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য।

সোনালি আঁশের সোনালি দিন ধরে রাখতে প্রণোদনা দাবি করেছে উদ্যোক্তারা। তাঁরা জানায়, পাটশিল্প বাঁচাতে হলে ২ শতাংশ সুদে দশ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন। ইতোমধ্যে এই পরিমাণ অর্থ সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ জুট মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিজেএমএ)।

বিজেএমএর চেয়ারম্যান মোহাম্মেদ মাহবুবুর রহমান পাটোয়ারী এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিবের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, করোনায় অন্যান্য সব খাতের পাশাপাশি পাটশিল্পেও বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। পাট ও পাটপণ্য রফতানি আদেশ ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাতিল ও পরিবর্তন করা হচ্ছে। নতুন করে রফতানির কোন আদেশও নেই। পাশাপাশি পাটকল শ্রমিকদের কর্মসংস্থান ঠিক রাখতে মিল চালু রাখা হয়েছে। কিন্তু উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করতে না পারায় মূলধন প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে। ফলে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারলে কুঋণ তৈরি হয়ে দেশের আর্থিক খাতে বিরাট সংকট তৈরি হবে।

আরও পড়ুনঃ  করোনাতেও চমক পুঁজিবাজারে

চিঠিতে আরও উল্লেখ আছে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চলতি বছর শেষে পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি আয় ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন কোনোভাবেই সম্ভব না। এ পরিস্থিতিতে আমাদের লক্ষ্য পাট শিল্প চালু রাখা। এর কারণে প্রয়োজন হবে দশ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও পাটকলগুলোর সব ধরনের ব্যাংক ঋণ ও আগামী দুই কোয়ার্টারের জন্য সুদ মওকুফ ও এক বছরের জন্য মরাটোরিয়াম সুবিধা প্রয়োজন। পাশাপাশি আগামী ছয় মাসের জন্য ভ্যাট, ট্যাক্স, এআইটি ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের কিস্তি বিলম্বিত করার সুযোগ দেওয়া; গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির বিল এক বছরের জন্য মুলতবি; শ্রমিকদের জন্য রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা জরুরী।

বিজেএমইএ মহাসচিব বারিক খান জানান, পাটশিল্পের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হলে ২ শতাংশ সুদে দশ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে হবে। সরকার ৩০ হাজার কোটি টাকার যে তহবিল গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সেখান থেকে পাটশিল্প লাভবান হবে না। তিনি আরও বলেন, রফতানি ভর্তুকির অর্থছাড়ের সময় পাট খাতের জন্য আলাদা বরাদ্দ দেওয়া হয়। পাটশিল্পের জন্য আলাদা দশ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন করতে হবে। তাহলেই পাটের উৎপাদন, রফতানি অব্যাহত থাকবে।

আনন্দবাজার/তা.তা

সংবাদটি শেয়ার করুন