শিশুদের বইয়ের সঙ্গে ভালোবাসা সৃষ্টি করতে হবে নিঃসন্দেহে। একবার যদি চিন্তা করি, প্লে শব্দের অর্থ খেলা করা। তা হলে প্লে ক্লাসে একটি শিশু খেলতে খেলতে শিখবে।
কিন্তু প্লে ক্লাসে যেনো যত বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতে হয়, দশম শ্রেণীতে যেনো এতো বই বহন করতে হয় না। প্লে থেকে কেজি ক্লাসের শিশুদের ব্যাগ এত বেশি ভারী থাকে যে তাদের ব্যাগ নিতে অনেক কষ্ট হয়!
আমি যখন প্রথম শ্রেণীতে পড়তাম তখন তিনটি বই ছিলো বাংলা, ইংরেজি, গনিত। আর এখন কেজি স্কুলের নার্সারীতে পড়ুয়া আমার ছোট ভাইটি বই-খাতা মোট ১২টি বই বহন করতে হয়। সাথে নিতে হয় পানির ফ্লাক্স, টিফিনবক্স, নোট বুক তো আছেই। শিশুদের বিভিন্ন রকমের পাঠ্যবই আনা-নেওয়া কাজে নিয়োজিত না করে সৃজনশীল পাঠ্যভ্যাসের জন্য বিকল্প কিছু চিন্তা করা দরকার।
অন্য দিকে ইট-পাথরের নগরীতে দিন দিনই কোণঠাসা হয়ে পড়ছে শিশুরা। নেই পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, নেই পারিবারিক বন্ধনও। বর্তমানে শহর থেকে গ্রাম পর্যায়েও ভাঙছে একান্নবর্তী পরিবারপ্রথা। একদিকে বাড়ছে ছোট পরিবারের সংখ্যা, অন্যদিকে আরও একা হচ্ছে শিশু। পারিবারিক বন্ধনে থাকার যে সুবিধা তা থেকে বঞ্চিত আজকের শিশুরা।
যে শৈশব হওয়ার কথা ছিল বর্ণাঢ্য ও বর্ণিল তা হয়ে পড়ছে নিরানন্দ। অন্যদিকে অভিভাবকরা সন্তানকে ‘মানুষ’ বানানোর প্রত্যয়ে ঘাড়ে চাপিয়ে দিচ্ছেন বইয়ের বোঝা। নানা ধরনের বইয়ের ভারে শিশুরা যেনো কুঁজো হয়ে উঠছে, মাথা উঁচু করে আকাশ দেখার আনন্দ, বাতাসকে অনুভব করার আনন্দ হারাচ্ছে শৈশবেই!
শতভাগ ভর্তি ও শিশুর মানসিক বিকাশ ঘটানো নিশ্চিতকরণ, শিক্ষায় প্রবেশাধিকার, উচ্চশিক্ষা ও পরিপূর্ণ উন্নতির ধারাবাহিকতার মাধ্যমে সামাজিক বৈষম্য হ্রাস, প্রায় দুই লাখ শিক্ষার্থীর জন্য শিশুবান্ধব শিক্ষাগ্রহণের পরিবেশ নিশ্চিতকরণসহ শিক্ষার মান বাড়াতে প্রকল্পটি অনুমোদনের নির্দেশনা অবশ্যই প্রশংসনীয় উদ্যোগ।
আমাদের প্রত্যাশা, শিক্ষকসহ অভিভাবকরা শিশু যাতে সত্যিকার অর্থে মানুষ হয়ে উঠতে পারে বিষয়টি নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন। শিশুরা যেন বেড়ে উঠতে পারে উন্মুক্ত জল-হাওয়ায় তা নিশ্চিত করা সময়ের দাবি।
লেখক: খালিদ আহম্মেদ রাজা
ইউনিসেফ প্রতিনিধি
কুড়িগ্রাম