উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তরা হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত! আর নিম্নবিত্তবানরা যে কি হচ্ছে তা আর সবার বুঝার বাকি নেই!
পৃথিবী আজ যেন মানবশূন্য! চারিদিকে শুধু মৃত্যুর মিছিল। মহামারী করোনা ভাইরাস ধ্বস নামিয়ে দিয়েছে মানুষের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক সব ক্ষেত্রে। উচ্চবিত্ত পরিবারগুলো হয়ে যাচ্ছে মধ্যবিত্ত। মধ্যবিত্তরা হয়ে যাচ্ছে নিম্নবিত্ত! আর নিম্নবিত্তবানরা যে কি হচ্ছে তা আর সবার বুঝার বাকি নেই! এমন অবস্থায় বাসা ভাড়া নিয়ে বিপাকে পড়েছেন সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরীহ শিক্ষার্থীরা। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই মধ্যবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান।
তাই অনেকেই টিউশনি করে তাদের বাসা ভাড়া ও হাত খরচ চালাতেন। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের দরুন গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ রয়েছে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। যার ফলে তাদের অনেকের সাধারণ জীবন যাপন যেখানে কষ্টকর, সেখানে বাসা ভাড়ার অতিরিক্ত টাকা সংগ্রহ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন হাজারো শিক্ষার্থী। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মোঃ আশিকুর রহমান।
ক্যাম্পাস বন্ধ হওয়ার পর কেমন যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের বর্তমান অবস্থা। বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটি বিষয় কমন পাওয়া যায় তা হলো বাসা ভাড়া নিয়ে দুষ্চিন্তা। এ বিষয়ে ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্স এ পড়ুয়া শিক্ষার্থী হ্লা মং উ মারমা বলেন, ‘ আমরা যারা দুর্গম এলাকা থেকে পড়াশোনা করতে আসি বিগত বছরের তুলনায় এই কয়েক মাসের অনেক পিছিয়ে গেছি। এমনিতেই লকডাউন সারাদেশ, আবার থানচি অগ্নিকাণ্ডের কথা নিশ্চয়ই সবাই শুনেছেন। এমন অবস্থায় বাসা ভাড়া দেওয়াটা বাড়তি বুঝা। আমার আহ্বান এবং অনুরোধ এই পরিস্থিতিতে সকল ছাত্রছাত্রীদের বাড়ি ভাড়া মওকুফ করানো হোক।
এ বিষয়ে বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তানজুম আক্তার বলেন, ‘ গত ১৭ই মার্চ থেকে নিজ পরিবারের সাথে গ্রামে অবস্থান করছি। আমাদের পরিবার সবাই গ্রামের সাধারণ কৃষক, পড়াশোনা খরচ চালানোর একমাত্র উৎস কৃষি কাজ ।পড়াশোনার ফাঁকে টিউশনি করে নিজের খরচ চালায় । কিন্তু দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকার এর নির্দেশে সকলেই ঘর বন্দী হয়ে আছি। এরই মধ্যে বাসার মালিক গত কয়েক মাসের বাসা ভাড়ার জন্য আমার উপর বিভিন্ন ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। পরিবারের খরচ চালাতেই হিমসিম খাচ্ছে পরিবার সেখানে এই বাসা ভাড়ার টাকা বিপদ আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি গণ বিশ্ববিদ্যালয় এর একজন ছাত্রী হিসেবে এই বিষয়ে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি ।
মন্তব্য করেন ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং ( ইইই) বিভাগের শিক্ষার্থী এহসান উল করিম। তার মতে, ‘সাম্প্রতি করোনা ভাইরাসের কারণে দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন বন্ধ আছে,আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কবে খুলবে এখনও নিদিষ্ট করে বলা কঠিন। আমাদের বেশীর ভাগ শিক্ষার্থীই টিউশন করে জীবিকা নির্বাহ করি , এখন আমাদের টিউশন ও নাই যার কারনে বাসা ভাড়া দিতে রীতিমত কষ্ট সাপেক্ষ ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে।
কথা হয় ফিজিওথেরাপি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাইয়েদ আফ্রিদির সাথে। তিনি জানান, ‘ মহামারী এই মূহুর্তে অনেক পরিবারের আয়ের পথ বন্ধ। তাদেরকে এখন শেষ সঞ্চয় দিয়ে চলতে হচ্ছে। এই মূহুর্তে সঞ্চয় হতে সম্পূর্ণ বাসা ভাড়া দেওয়াটা অযৌক্তিক। বেশিরভাগ জেলা লকডাউন হয়ে আছে। বাসা ভাড়া দেওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাহিরে যেতে হয়। এই ক্ষেত্রে বাড়ির মালিক দের অনুরোধ করব সকলের সমস্যা বিবেচনা করে বাসা ভাড়া মূল টাকা হতে কমিয়ে অর্ধেক নিন এবং যাদের সমস্যা তাদেরক্ষেত্রে শিথিল করুন ।
এ বিষয়ে আরও কথা হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ এর ফার্মেসী বিভাগের বিভাগীয় প্রতিনিধি শর্মীলা ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, ‘গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত অনেক শিক্ষার্থীরাই টিউশন করে তাদের বাসা ভাড়া চালায়। আবার কারো কারোর পরিবার অর্থ উপার্জন করে দিনমজুরি করে। করোনা মহামারীর লকডাউনে সেসব পরিবার কর্মহীন হয়ে পড়ায় সেসব শিক্ষার্থীদের আর্থিক অসচ্ছলতা দেখা দেওয়ার কারণে তাদের পক্ষে বাসা ভাড়া দেয়া নিঃসন্দেহেই কষ্টসাধ্য। তাই প্রকৃতপক্ষেই যারা সমস্যার সম্মুখীন সেসব শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনা করে তাদের বাড়ি ওয়ালারা যদি তাদের ভাড়া মওকুফ করে তাহলে তারা উপকৃত হবে।
মহামারী এ করোনা ভাইরাস এর হাত থেকে বাচতে সরকার কয়েক দফায় ছুটি বৃদ্ধি করেন। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী এ ছুটি বাড়িয়ে ৩০ মে পর্যন্ত করা হয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ব্রিফিং অনুযায়ী করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়তে পারে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটির মেয়াদকাল, যা শিক্ষার্থীদের উপর সৃষ্টি করছে বাড়তি চাপ। বাসা ভাড়া মওকুফ ও খুব দ্রুত স্বাভাবিক জীবন যাপনে ফিরার প্রত্যাশা এখন সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের।
আনন্দবাজার/শাহী