ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“ব্লু ইকোনমি”

সমুদ্রের পানি নীল। আর এ নীল থেকেই আসে ব্লু ইকোনমি বা সুনীল অর্থনীতির ধারণা। এক কথায়, সমুদ্র সম্পদনির্ভর অর্থনীতি।

সহজ ভাষায়, সাগরের জলরাশি ও এর তলদেশের বিশাল সম্পদকে কাজে লাগানোর অর্থনীতি। ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক গুন্টার পাউলি ব্লু ইকোনমির বা সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির ধারণা দেন।

বিশ্বব্যাংকের মতে, “অর্থনৈতিক বিকাশের দিক বিবেচনায় উন্নত জীবনধারার জন্য সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র সংরক্ষণের দিকে লক্ষ্য রেখে সমুদ্র সম্পদের টেকসই এবং পর্যাপ্ত ব্যবহার হচ্ছে ব্লু ইকোনমি।”

ব্লু ইকোনমি সম্পর্কিত কিছু তথ্য নিয়ে আলোচনা করা যাক,

২০১৫ সালের WWF এর এক ব্রিফিংয়ে জানানো হয় মূল সমুদ্র সম্পদের মূল্য ২৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

৮০ শতাংশ বিশ্ব বাণিজ্যিক সম্পদ পরিবহন করা হয় সমুদ্রের সাহায্যে।

৪৩০ কোটিরও বেশি মানুষের ১৫ ভাগ প্রোটিনের জোগান দিচ্ছে সামুদ্রিক মাছ, উদ্ভিদ ও জীবজন্তু। এক্ষেত্রে এ্যাকুয়াকালচারের (জলের মধ্যে গাছপালা পালন অথবা জীবজন্তুর বংশবৃদ্ধির প্রচেষ্টা) ভূমিকা অপরিসীম।

পৃথিবী জুড়ে ৩০ শতাংশ গ্যাস ও জ্বালানি তেল সরবরাহ হচ্ছে সমুদ্রতলের বিভিন্ন গ্যাস ও তেলক্ষেত্র থেকে।

ফিশারি, ট্যুরিজম এবং সামুদ্রিক পরিবহণের মতো ক্রিয়াকলাপগুলি ছাড়াও নবায়নযোগ্য শক্তি, জলজ পালন বা এ্যাকুয়াকালচার, সমুদ্র সৈকত নিষ্কাশন কার্যক্রম এবং সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি এবং বায়োপ্রোস্পেকটিং সহ আরও কার্যকলাপের ক্ষেত্রে এর ভূমিকা অপরিসীম।

ব্লু ইকোনমিক মডেল সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রের পরিষেবাগুলিও আলিঙ্গন করার চেষ্টা করে যা বাজার দখল করে না তবে অর্থনৈতিক ও মানবিক ক্রিয়াকলাপে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কার্বন সিকোয়েস্টেশন, উপকূলীয় সুরক্ষা, বর্জ্য নিষ্কাশন এবং জীববৈচিত্র্যের অস্তিত্ব রক্ষা।

বিশ্বব্যাংকের মতে, তিনটি চ্যালেঞ্জ ব্লু ইকোনমির বিকাশের সম্ভাবনাকে সীমাবদ্ধ করে।
১. বর্তমান অর্থনৈতিক প্রবণতাগুলো যা সামুদ্রিক সম্পদ দ্রুত হ্রাস করে চলেছে।
২. ব্লু ইকোনমিক মডেলের প্রস্তাবিত খাতগুলিতে কর্মসংস্থান এবং উন্নয়নের জন্য বিনিয়োগের অভাব।
৩. সামুদ্রিক সংস্থান এবং ইকোসিস্টেম পরিষেবাগুলির পর্যাপ্ত যত্ন না নেয়া।

ব্লু ইকোনমি এবং বাংলাদেশ:

বঙ্গোপসাগরের অভ্যন্তরে অর্থনৈতিক অঞ্চলের ২০০ নটিক্যাল মাইল সহ বাংলাদেশের ৭১০ কিলোমিটার দীর্ঘ উপকূলরেখা রয়েছে।  সামুদ্রিক ফিশারিজ দেশের মোট মাছ উৎপাদনের প্রায় ১৯.৪ শতাংশ পর্যন্ত অবদান রাখে।

এছাড়াও, কক্সবাজার দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত হওয়ায় গড়ে প্রায় ৮১% আন্তর্জাতিক পর্যটক বাংলাদেশে আসেন।

বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতিতে বাংলাদেশের মোট সংযোজন ছিল ৬,১৯২.৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় ৩.৩৩ শতাংশ।

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই ব্লু ইকোনমি, সারা দেশে এবং দক্ষিণাঞ্চলে বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি করার মাধ্যমে এর সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখতে পারে।

বাংলাদেশ তার সমুদ্রনির্ভর অর্থনীতির অগ্রসর হওয়ার দিকে মনোযোগ দেয়া শুরু করেছে বলা যায়।
মৎস্য ও জলজ পালন(এ্যাকুয়াকালচার), শিপ বিল্ডিং, শিপ ব্রেকিং, লবণের উৎপাদন এবং বন্দর সুবিধাগুলির মতো কয়েকটি খাতকে কাজে লাগালেও, এই সেক্টরগুলির বেশিরভাগ এখনও ডিজিটালাইজড হয়নি।

এছাড়াও প্রচুর অর্থনৈতিক সম্ভাবনা সহ অনেকগুলো ব্লু ইকোনমি খাত রয়েছে। যেমন-
সীফুড প্রসেসিং, সামুদ্রিক জৈবপ্রযুক্তি, তেল, গ্যাস এবং অন্যান্য খনিজসম্পদের সন্ধান এবং বিশেষ করে ব্লু কার্বন যেখানে অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অংশগ্রহণ সীমিত বা অনুপস্থিত।

বর্তমানে অনেক উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশ তাদের অর্থনীতির বর্তমান এবং ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলো সমাধান করার জন্য সামুদ্রিক সম্পদ সম্পর্কে খুব উদ্বিগ্ন হয়ে উঠছে।

বাংলাদেশ সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে খুব দ্রুত মধ্যম আয়ের দেশের রুপে ঘুরে দাঁড়াতে পারে।

লেখক: জুলফিকার দিহান
ছাত্র, পরিবেশ ও প্রাকৃতিক সম্পদ অর্থনীতি বিভাগ।
ঢাকা স্কুল অব ইকোনমিক্স।

সংবাদটি শেয়ার করুন