ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

“নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের করোনা হবেনা”

কক্সবাজার প্রতিনিধি

বিশ্বব্যাপী ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯)। এরই মধ্যে দুই লাখ ছাড়িয়েছে মৃতের সংখ্যা। বাংলাদেশে মৃত্যুর সংখ্যা দেড়শ ছাড়িয়েছে, আক্রান্ত ৭ হাজারের উপরে। কক্সবাজারেও প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা রোগীর সংখ্যা। কক্সবাজারে ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন মোট ২৪জন।

এরপরও কক্সবাজারে অবস্থানরত রোহিঙ্গারা এখনো মনে করছেন তাঁদের জন্য করোনা ভাইরাস আসেনি। কারন তারা নিরহ ও নির্যাতিত মুসলিম। তাই রোহিঙ্গাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হবে না। রোহিঙ্গাদের মতে, করোনা এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে ইহুদি বা অমুসলিমদের জন্য। যদিও তাদের যুক্তির কোন ভিত্তি নেই।

এরই মধ্যে মধ্যপ্রাচ্যসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে লক্ষাধিক মুসলমান করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। মৃত্যু সংখ্যাও কয়েক হাজার। রোহিঙ্গারা বলছে, পৃথিবীর সবচেয়ে নির্যাতিত মুসলিম জনগোষ্ঠী তারা। এবং তাঁরাই একমাত্র দেশ পালিয়ে বেড়ানো অসহায় মুসাফির। এ কারণে রোহিঙ্গাদের আল্লাহ বাঁচিয়ে দিবেন।

করোনার সংক্রমণ রোধে রোহিঙ্গাদের সচেতনত করতে গেলে এসব কথাই বলেন বেশিরভাগ রোহিঙ্গা।

রোহিঙ্গাদের প্রতিবেশি স্থানীয় নুরুল বশির, মোঃ আমিন, শাকের উল্লাহসহ কয়েকজন জানান, রোহিঙ্গারা আইনশৃংঙ্খলা বাহিনী ব্যতীত সংগঠন বা ব্যক্তি যারাই করোনা বিষয়ে তাদের সচেতন থাকার কথা বলে, তাদেরকে পাল্টা জবাব দেন। রোহিঙ্গারা বলেন, তাদের কারোই করোনা হবে না। বরং রোহিঙ্গাদেন যারা নির্যাতন করেছেন তারাই করোনায় আক্রান্ত হবেন এবং মারা যাবেন বলে দাবি করেন রোহিঙ্গারা।

সচেতন রোহিঙ্গা নেতা বলছে, মিয়ানমারে তারা স্কুল কলেজের প্রতিষ্ঠানিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। ঘরোয়া পরিবেশে সেখানকার হুজুরদের থেকে যা শিক্ষা পেয়েছেন তাও ভুলভাল। এ কারনে রোহিঙ্গাদের বেশিভাগই অজ্ঞ।তবে নেতাদেরও বিশ্বাস রোহিঙ্গাদের আল্লাহ করোনা থেকে বাঁচাবেন।

রোহিঙ্গা অধ্যুষিত পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী বলেছেন, হাজারও রোহিঙ্গা এক সঙ্গে রাস্তায় নামছে আগের মতই। ক্যাম্পের ভিতর গণজমায়েত করে আড্ডা দিচ্ছে। চলমান লকডাউন কিছুতেই মানছে না তারা। অথচ রোহিঙ্গাদের খাবারের কোন অভাব পড়েনি যে রাস্তায় নামতে হবে।
তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যাপক তৎপরতায় গত দুইদিন ধরে রোহিঙ্গাদের ক্যাম্পের বাইরে কম দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন গফুর উদ্দিন চৌধুরী।

টেকনাফ উখিয়ার মধ্যখানে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় শরণার্থী শিবির এটি। এখানের ৩৪টি ক্যাম্পে প্রায় ৬ থেকে ৭লাখ রোহিঙ্গাদের বসবাস। দুই উপজেলায়ই এরই মধ্যে করোনা রোগীর শনাক্ত হয়েছে। বুধবার ২৯ এপ্রিল পর্যন্ত উখিয়া-টেকনাফে ৪ করে মোট ৮ জন করোনায় রোগী শনাক্ত হয়েছে। যা স্থানীয়দের পাশাপাশি প্রশাসনকেও ভাবাচ্ছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভিতরে যদি করোনা প্রবেশ করে যার ফলাফল হবে ভয়াবহ। চিকিৎসা সেবার যতই প্রস্তুুতি থাক নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হবে মন্তব্য বিশ্লেকদের।

এদিকে ঝুঁকিতে থাকায় প্রায় মাসখানেক আগেই রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ কক্সবাজার জেলা লকডাউন করেছেন প্রশাসন। শুরু থেকে করোনার সংক্রমণ রোধে উখিয়া- টেকনাফের ৩৪ ক্যাম্পে ব্যাপক তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে প্রশাসন। এখনো পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের কেউ করোনায় আক্রান্ত না হলেও কেউ একজন আক্রান্ত হলে ঘনবসতি হওয়ায় পরিণাম হবে ভয়াবহ। এর পরও রোহিঙ্গারা চলছে রোহিঙ্গাদের মতই।

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন