শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ইকুয়েডরে হাসপাতালের বাথরুমেও লাশের স্তূপ

করোনাভাইরাস মহামারিতে লাতিন আমেরিকার মধ্যে সবেচেয়ে বাজে পরিস্থিতিতে রয়েছে ইকুয়েডর। সেখানকার একটি শহরে হাসপাতালে চিকিৎসকদের দৈনন্দিন যে পরিস্থিতির মুখে পড়ছেন, তার ভয়াবহ বর্ণনা দিয়েছেন সেখানকার চিকিৎসকরা।

হাসপাতালের স্বাস্থ্যকর্মীদের বরাতে বার্তা সংস্থা এএফপি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, করোনা রোগীর লাশে হাসপাতালটির মর্গ ভরে গেছে। তারা বাধ্য হয়ে বাথরুমে লাশ স্তূপ করে রেখেছে।

একজন চিকিৎসক জানান, চিকিৎসকেরা বাধ্য হয়ে হাসপাতালের বিছানা পুনরায় ব্যবহার করতে সেখানে থাকা লাশ জড়িয়ে রাখতে ও সংরক্ষণে বাধ্য হয়েছেন।

ইকুয়েডরে কোভিড-১৯ রোগে এ পর্যন্ত ২৩ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন এবং প্রায় ৬০০ জন মারা গেছেন। সেখানে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের শিকার হয়েছে গোয়কিল শহরটি। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি আরও মারাত্তক ভয়াবহ।

নাম প্রকাশ না করে হাসপাতালটির একজন নার্স বলেছেন, তিনি যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছেন, এর বিরূপ প্রভাব পেশাগত এবং ব্যক্তিগত পর্যায়ে তাঁর ওপর পড়েছে। গত মার্চ মাসে জরুরি পরিস্থিতিতে প্রত্যেক নার্সকে প্রতিদিন ১৫ থেকে ৩০ জন রোগীকে সেবা দিতে হয়েছে। তাররপর এত রোগী আসতে শুরু করল যে সেবা দিতে দিতে তাঁদের নিজের জীবন শেষ। করোনায় সংক্রমিত রোগীদের বেড খালি করতে অনেক রোগীকে অন্য কোথাও যেতে বলা হয়েছে, আবার অনেক রোগীকে বের করে দেওয়া হয়েছে।

ওই নার্স জানান, পরিস্থিতি এমন যে মানুষ একা, দুঃখে, ব্যথায় চিৎকার করতে শুরু করল, কেউ মলত্যাগ করল, কেউ অক্সিজেন চেয়ে হট্টগোল শুরু করল। পরিস্থিতি দিন দিন বেদনাদায়ক হয়ে উঠেছিল। শুধু হাসপাতাল নয়, মর্গের অবস্থাও অবর্ণনীয় হয়ে উঠল। মর্গের কর্মীরা আর লাশ নিতে আগ্রহী নন। তাই অনেক সময় লাশ মুড়িয়ে বাথরুমে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। লাশের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেগুলো একসাথে নিতে আসত।

আরও পড়ুনঃ  স্বাস্থ্যবিধি মেনে প্রস্তুত ট্রেন, নির্দেশনা পেলেই চালু

২৬ বছর বয়সী আরেক নার্স ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘বাথরুমে অনেকে মারা গেছেন, অনেকে মেঝেতে শুয়ে মারা গেছেন, কেউ চেয়ারে বসে মারা গেছেন।’

এপ্রিলের প্রথমার্ধে ইকুয়েডরের গায়াজ প্রদেশে মোট ৬ হাজার ৭০০ মানুষ মারা গেছেন, যা মাসিক গড়ের তিন গুণ বেশি। কিন্তু সরকার বলছে, সারা দেশে কোভিড-১৯–এ আক্রান্ত হয়ে ৬শ জন মারা গেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, দেশটিতে করোনাভাইরাসে প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি হবে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট লেনিন মরেনো এই পরিস্থিতির সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি মনে করেন, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা কম দেখাচ্ছে।

আনন্দবাজার/এফআইবি

 

সংবাদটি শেয়ার করুন