চট্টগ্রাম ইপিজেডের ৪৬টি এবং কর্ণফুলী ইপিজেডের ২৩টি কারখানা লে-অফের জন্য আবেদন করেছে। কার্যাদেশ না থাকা, শিপমেন্ট না হওয়ার কারণে দেশি-বিদেশি এসব কারখানার মালিকরা ‘লে-অফের জন্য ইপিজেড কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলো জানিয়েছে।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ও কর্ণফুলী ইপিজেডে দেশি-বিদেশি মিলিয়ে কারখানা আছে ২ শতের মতো। এর মধ্যে কর্ণফুলী ইপিজেডে কারখানা আছে ৪১টি এবং শ্রমিক কাজ করে ৭৬ হাজারের মতো। অন্যদিকে চট্টগ্রাম ইপিজেডে কারখানার রয়েছে ১৫৮টি। সেখানে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। ফলে লে-অফ কার্যকর হলে ২ ইপিজেডের প্রায় ১ লাখ শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়বে।
এদিকে ইপিজেডগুলোর কর্তৃপক্ষের কাছে করা লে-অফের আবেদনে প্রতিষ্ঠানগুলো কারণ হিসেবে দেখিয়েছে কাঁচামাল না থাকা, বিদেশি ক্রেতাদের পক্ষ থেকে কার্যাদেশ বাতিল হওয়া, নতুন কার্যাদেশ না থাকা, শিপমেন্ট না হওয়া ছাড়া সারা বিশ্বে করোনাভাইরাসে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতেও কার্যাদেশ পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তাসহ বিভিন্ন কারণ। লে-অফ চাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক, জুতা, তাঁবু, ফেব্রিক্স ও ইলেক্ট্রনিক্স পণ্য তৈরির কারখানা।
বাংলাদেশের শ্রম আইনের ভাষায়, লে-অফ হল কোনো কারখানায় কাঁচামালের স্বল্পতা, মাল জমে যাওয়া কিংবা যন্ত্রপাতি নষ্ট হওয়ায় শ্রমিককে কাজ দিতে না পারার অক্ষমতা।
কারখানা কর্তৃপক্ষের লে-অফ ঘোষণার উদ্যোগে উদ্বেগ জানিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের প্রতিনিধিরা। তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে লে-অফ ঘোষণা কাম্য নয়। সরকার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে, তার মধ্যে লে-অফ শ্রমিকদের আরও ‘বেশি ঝুঁকিতে ফেলে দেবে’।
এ ব্যাপারে কর্ণফুলী ইপিজেডের জিএম মশিউদ্দিন বিন মেজবাহ বলেন, ‘গত ৫ এপ্রিল থেকে বিভিন্ন কারখানা কর্তৃপক্ষ লে-অফের জন্য আবেদন করেছে। তাদের ইপিজেডে মোট ২৩টি কারখানা বিভিন্ন মেয়াদে লে-অফের জন্য আবেদন করেছে।’
এ বিষয়ে বেপজার মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) নাজমা বিনতে আলমগীর জানান, বিভিন্ন কারখানা বন্ধ, কাঁচামাল নেই, কার্যাদেশ বাতিল হয়েছে। সব মিলিয়ে তারা বিভিন্ন মেয়াদে লে অফে যাচ্ছে।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের মধ্যে শ্রমিকদের কারখানায় এনে স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে ফেলার চেয়ে কর্তৃপক্ষ লে অফ ঘোষণা করলে ঝুঁকি অনেক কমে যাবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, “কারখানাগুলো লে অফে গেলেও নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকদের সকল পাওনা পরিশোধ করতে হবে।”
শ্রম আইন অনুযায়ী, লে-অফ চলাকালে প্রথম ৪৫ দিনের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন শ্রমিকের মোট মূল মজুরি, মহার্ঘ ভাতার অর্ধেক দিতে হয় মালিককে। পরের ১৫ দিনের জন্য শ্রমিক পাবে ২৫ শতাংশ মূল বেতন এবং বাড়ি ভাড়া। আর বন্ধ ঘোষণা করতে হলে প্রতিবছর চাকরির জন্য এক মাসের মূল মজুরি ও এক মাসের মজুরি ক্ষতিপূরণ হিসেবে দিতে হবে। এ ছাড়া ভবিষ্য তহবিল (প্রভিডেন্ট ফান্ড) ও পাওনা ছুটির অর্থ পরিশোধ করতে হবে।
আনন্দবাজার/শাহী