প্রতিবছর এইসময়ে পাহাড়ের ঐতিহ্যবাহী বৈসাবী উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়ে যায়। কিন্তু এইবার উৎসবের সব আনন্দ কেড়ে নিলো বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাস। করোনা ভাইরাসের প্রকোপে স্তব্ধ পাহাড়ের বৈসাবী উৎসব সহ সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা। পাহাড়ে নেই কোন উৎসবের আমেজ, নেই কোন হৈ চৈ। এইবছর নীরবতার মধ্যে দিয়ে কাটছে সবার এই অন্যতম বৈসাবী উৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রামে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম তনচংগা সম্প্রদায়ের আজকের এই দিনে শুরু হয় ফুল বিষু উৎসব। এই ফুল বিষু উৎসবের দিনে তনচংগ্যা তরুণী-তরুণী সহ সকল বয়সীরা নদীতে গিয়ে ফুল ভাসাতো এবং তাদের জীবনে শান্তি কামনা করতো। প্রতিবছর বিষু উৎসব তনচংগ্যা সম্প্রদায়কে নতুন কিছু স্বপ্ন দেখায়। তারা নিজেদের শত দুঃখ ভুলে গেংখুলী, উবাগীত, দুদুক, হেংগরং এর মূর্ছনায় মাতিয়ে তুলতো পাহাড়ের প্রত্যেকটি জনপদ। গাবুরি গান করতো তার পাহাড়ি কন্ঠে। পাহাড়ের উচু নিচু পথ আনন্দে ভরে যেত চারিদিকে। একে অপরের হিংসা-ক্রোধ ভুলে সবাই বিষু উৎসবে মেতে ওঠতো। মূল বিষু দিনে তনচংগ্যা তথা পাহাড়িদের ঐতিহ্যবাহী তরকারি “পাঁচন” রান্না করে অতিথিদের আপ্যায়ন করা, চতুর্দিকে হৈ-চৈ করে আনন্দ করা এবং “গজ্জেপজ্জে” দিনে বরণ করা হতো নতুন বছরকে।
তনচংগ্যাদের ঘিলা খেলা, নাদেং খেলা আরও বিভিন্ন রকমের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে এই উৎসবের আনন্দে একাকার হয়ে যেতো এই পাহাড়ী জনপদ। কিন্তু বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসে স্থবির পুরো বিশ্ব। করোনা ভাইরাস সংক্রমন প্রতিরোধে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক সকল বৈসাবী অনুষ্ঠান বাতিলের সিন্ধান্ত হয়েছে। এ যেন পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর অন্যতম আনন্দ উৎসবে হরিষে বিষাদ।
রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলার ওয়াগ্গা সাফছড়ির বাসিন্দা সংগীতশিল্পী সূর্যসেন তনচংগা, জ্যাকলিন তনচংগা ও সুমনা তনচংগ্যার প্রতিক্রিয়ায় তাঁরা জানান, এই বিষু উৎসব উপলক্ষ্যে প্রতিটি পাড়ায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ঐতিহ্যবাহী তনচংগ্যা সম্প্রদায়ের খেলাধুলা হতো, কিন্ত আজ মহামারি করোনায় সব আনন্দ যেন কেড়ে নিয়েছে, নেই কোন উৎসব আমেজ। কেউ কারো বাসায় যাওয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারি নির্দেশে এখন ঘরে বসে শুধুমাত্র পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বিষু উৎসব পালন করছি।
অপরদিকে ১০০ নং ওয়াগ্গা মৌজার হেডম্যান অরুন তালুকদার জানান, তাঁর এলাকায় প্রতিবছর এই উৎসব উপলক্ষ্যে আনন্দ র্যালী হতো। এতে তনচংগ্যা সম্প্রদায় ছাড়া সকল ধর্মের লোক অংশ নিতো। এছাড়া প্রতিটি পাড়ায় আলাদা আলাদা ভাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং খেলাধুলা হতো, এই বছর করোনার কারনে সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা ঘরে বসে পালন করছি এই উৎসব।
পার্বত্য চট্টগ্রামের সকল সম্প্রদায় সহ সকল মানুষের এখন একটাই প্রত্যাশা হয়তো একদিন নতুন ভোর হবে, নতুন সূর্য্য উঠবে, কেটে যাবে আঁধার। সকল দুর্যোগ মোকাবিলা করে, পৃথিবী ফিরে পাবে তার আগের রূপ। এটাই হোক কামনা।
আনন্দবাজার/শাহী