শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হিজলায় এমপি পঙ্কজ অনুসারীর ৩৮ গরীবের চাল চুরি

হিজলা প্রতিনিধি

মেহেন্দিগঞ্জের পর এবার হিজলায় চাল চুরির অভিযোগ উঠেছে এমপি পঙ্কজ নাথের অনুসারীর বিরুদ্ধে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় গ্রামীণ অতিদরিদ্র পরিবারের মাঝে বরাদ্ধকৃত ১০ টাকা মূল্যের প্রতিজনের ৩০ কেজি চাল বিতরণে চরম অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

হিজলা উপজেলার বড়জালিয়া ইউনিয়নের বাউশিয়া এলাকার ৩৮ হতদরিদ্রের সম্পূর্ণ চাল অর্থাৎ মোট ১ হাজার ১৪০ কেজি চাল স্থানীয় ডিলার সোলাইমান তালুকদার আত্মসাত করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

ওই হতদরিদ্রদের অভিযোগ, চাল বুঝিয়ে দেওয়ার কথা বলে গত পাঁচদিন যাবত তাদের আজ-কাল করে ঘুরিয়ে এখন পালিয়েছে ডিলার সোলাইমান।

এ ছাড়া সোলাইমানের বিরুদ্ধে আইন না মেনে ডিলার হিসেবে নিয়োগ এবং কার্ডে ভুয়া টিপসই বসিয়ে চাল বিতরণ দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।

চাল বঞ্চিত হতদরিদ্র নাজিম আলী হাওলাদার (ইউপি কার্ড নাম্বার-২৯৮৫) বলেন, ‘করোনাভাইরাসের আতঙ্ক মাথায় নিয়ে এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে উপজেলা সদরে প্রতিবারের ন্যায় কার্ড নিয়ে চাল সংগ্রহ করতে আমি যাই। কিন্তু আমিসহ ৩৮ জন কার্ডধারীকে ডিলার চাল দেননি। আমাদেরকে বলা হয় ২/১ দিন পর আপনাদের চাল দেওয়া হবে। ৫ দিন অতিবাহিত হলেও চাল দেননি। এখন তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।’

অপর চাল বঞ্চিত আলাউদ্দিন সিকদার (ইউপি কার্ড নাম্বার-৩৮৭৮) বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী ডিলারের এলাকায় বসে চাল বিতরণ কারার কথা। তবে এলাকা থেকে দুই কিলোমিটার দূরে বসে চাল বিতরণের ফাঁকে আমাদেরকে না দিয়ে তা বাজারের ব্যবসায়ীদের নিকট বিক্রি করে দেন।’ যতবার (বছরে পাঁচ মাস) চাল দেওয়া হয় প্রত্যেকবার ৩০ থেকে ৩৫ জন লোকের চাল এভাবে চুরি করে থাকেন বলে আলাউদ্দিনের অভিযোগ।

আরও পড়ুনঃ  বরখাস্ত মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে ৭ মামলায় জামিন

জানা গেছে, খাদ্য অধিদপ্তরের ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেতে হলে স্ব-স্ব এলাকার বাসিন্দা হতে হয়। কিন্তু অভিযুক্ত ৮ নম্বর ওয়ার্ডের ডিলার সোলাইমান তালুকদার ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। হিজলা-মেহেন্দিগঞ্জের এমপি পঙ্কজ দেবনাথের অনুসারী হওয়ায় তাকে অবৈধভাবে ডিলার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।

হিজলা উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘কিছু হতদরিদ্র চাল পাননি এটা লোকমুখে জানতে পেরেছি। তবে লিখিত অভিযোগ না পাওয়ায় কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।’

খাদ্য অধিদপ্তরের নিয়মের বাহিরে তিনি ডিলার হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন বলে স্বীকার করেন তৌহিদুর রহমান।

এদিকে পালিয়ে থাকা ডিলার সোলাইমান তালুকদার মুঠোফোনে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সত্য নয় দাবি করে বলেন, ‘আমি চাল চুরি করিনি। কিছু লোকের চাল দেওয়া এখনও বাকি রয়েছে তাদেরকে দেওয়া হবে।’

বড়জালিয়া ইউপি চেয়ারম্যান পন্ডিত সাহাবুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বেশ কয়েকজন চাল বঞ্চিত হতদরিদ্র আমার কাছে চাল না পাওয়ার কথা বলেছেন। আমি স্থানীয় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহত করেছি।’ অভিযুক্ত ডিলার ওই এলাকার বাসিন্দা নন বলে তিনি নিশ্চিত করেন।

হিজলা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. আমীনুল ইসলাম বলেন, ‘চাল বঞ্চিত বেশ কয়েকজন হতদরিদ্র আমাকে বিষয়টি জানান। আমি তাৎক্ষণিক জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বলেছি।’

বরিশাল জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. তাজুল ইসলাম বলেন, ‘অনিয়মের বিষয়টি খতিয়ে অবশ্যই দেখা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন