ঢাকার পর এবার করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসায় চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ‘ফিল্ড’ হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে জেলার স্বাস্থ্য বিভাগ ও দেশের প্রথম সারির শিল্পগোষ্ঠী নাভানা গ্রুপ। প্রাথমিকভাবে নাভানা গ্রুপের ১২ হাজার বর্গফুটের বিশাল এলাকায় দুটি ভবনে এ অস্থায়ী হাসপাতাল চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। চট্টগ্রামের কিছু তরুণ চিকিৎসক হাসপাতালটি পরিচালনা করবেন।
জানা যায়, করোনাভাইরাসের রোগীদের সেবায় রাজধানীতে আকিজ গ্রুপের উদ্যোগে হাসপাতাল তৈরির ঘোষণার পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক সহ-সভাপতি (ভিপি) চট্টগ্রামের বাসিন্দা ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া এ হাসপাতাল তৈরির উদ্যোগ নেন। তিনি চট্টগ্রামে করোনা হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় সমাজের বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে নিজের ফেসবুক আইডি থেকে স্ট্যাটাস দেন।
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া লিখেন, ‘ঢাকায় বসুন্ধরা, আকিজ এগিয়ে আসলো ফিল্ড হসপিটালের জন্য। আমাদের চট্টগ্রামে এগিয়ে আসার মতো মানবিক বিত্তবান এর সত্যিই অভাব! আসুন চট্টগ্রামের মানুষ হিসেবে গর্ব করার মতো এমন কিছু করি।’
বিদ্যুৎ বড়ুয়ার সেই আহ্বানে সাড়া দিয়ে গত রোববার (২৯ মার্চ) নাভানা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে চট্টগ্রামে তাদের জমিতে ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেন। প্রধানমন্ত্রী তার প্রস্তাবে ইতিবাচক সাড়া দেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) নাভানা গ্রুপের প্রস্তাবিত এলাকা ও ভবন পরিদর্শন করেছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর বলেন, ‘ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া নাভানার প্রস্তাবটি আমাকে জানিয়েছেন। আজ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করলাম। ফৌজদারহাট এলাকায় নাভানা গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান আফতাব অটোমোবাইলস লিমিটেড কারখানার ভেতরে দোতলা একটি ভবন মোটামুটি প্রস্তুত করা আছে। এখানে চাইলেই অনায়াসে আইসিইউ সুবিধাসম্বলিত একটি ভালো হাসপাতাল পরিচালনা করা যায়।’
চট্টগ্রামের কিছু তরুণ চিকিৎসক হাসপাতালটি পরিচালনা করবেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘নাভানা গ্রুপের পক্ষ থেকে ভূমি ও ভবন দেয়ার কথা জানানো হয়েছে। আরও কেউ যদি এগিয়ে আসেন তাহলে আনুষঙ্গিক বিষয়ে প্রস্তুতি নিতে সেটা সহায়তা করবে। তবে আমরা ইতোমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, কয়েকজন তরুণ চিকিৎসক নিজেদের উদ্যোগেই এই হাসপাতাল পরিচালনা করতে ইচ্ছুক। আমরা আগামীকাল আবারও বসব।’
নাভানা গ্রুপের এই ভবন ও স্থাপনার সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো এটি চট্টগ্রামের বিশেষায়িত হাসপাতাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (বিআইটিআইডি) হাসপাতালের অদূরে অবস্থিত। তাই সম্ভাব্য করোনা রোগীদের এখান থেকে চিকিৎসা দেয়া সহজ হবে।
এসব সুবিধার কথা জানিয়ে নাভানা গ্রুপের ব্যবস্থাপক আরফাতুর রহমান বলেন, ‘বিআইটিআইডি হাসপাতাল আমাদের ফ্যাক্টরি থেকে নিকট দূরত্বেই। তাই প্রায় ১৩ হাজার বর্গফুটের এই কমপ্লেক্স ব্যবহার করে কয়েকশ’ রোগীর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব। এছাড়া এখন যে স্ট্রাকচার আছে সেখানে চাইলে ৫০ থেকে ৬০ জনের চিকিৎসা দেয়াও সম্ভব।’
উদ্যোগের পেছনের কথা জানাতে গিয়ে আরফাতুর রহমান বলেন, ‘রোববার (২৯ মার্চ) বসুন্ধরা গ্রুপের সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীকে চট্টগ্রামে হাসপাতাল করার প্রস্তাব দেন নাভানা গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান সাজেদুল ইসলাম। এসময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, যদি আপনারা পারেন তাহলে দেখেন। এরপর আমরা ডা. বিদ্যুৎ দাদার সঙ্গে যোগাযোগ করি। তিনি চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগকে সঙ্গে নিয়ে ফিল্ড হাসপাতাল চালুর জন্য কাজ করছেন। আমরা ভবন-ভূমি ছাড়াও পানি, বিদ্যুৎসহ বাকি সুবিধাগুলো নিশ্চিত করব বলে জানিয়েছি।’
ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, ‘ঢাকায় যখন আকিজ ও বসুন্ধরা ফিল্ড হাসপাতাল করার ঘোষণা দিলো, তখন অনুভব করলাম আমার চট্টগ্রামেও এমন কিছু হওয়া প্রয়োজন। কারণ করোনা এক বা দুই দিনের বিষয় নয়। তাই সাধারণ হাসপাতালগুলোতে এর চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। আর যদি এসব হাসপাতালে করোনা রোগীকে সেবা দেয়া হয় তবে সাধারণ রোগীরা সেবা বঞ্চিত হবেন।’
‘সেই চিন্তা থেকেই চট্টগ্রামে বিভিন্ন জনের সঙ্গে আলাপ শুরু করলাম। পরে ফেসবুকে দেয়া আমার একটি স্ট্যাটাসের সূত্র ধরে নাভানা গ্রুপ আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য) ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীরকে নিয়ে নাভানার ওই ভবন ও এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি আমরা কাজ শুরু করতে পারব।’
আনন্দবাজার/এফআইবি