শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা প্রতিরোধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি

মরণঘাতী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ১০ দফা দাবি জানিয়ে খোলা চিঠি লিখেছেন ৬৩ নাগরিক।

সম্প্রতি অধ্যাপক আনু মুহম্মদ, গীতি আরা নাসরীন, রোবায়েত ফেরদৌস, জোবাইদা নাসরীনসহ ৬৩ নাগরিকের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিনা লুৎফা নিত্রা গণমাধ্যমে এই চিঠি পাঠিয়েছেন।

এতে জানানো হয়, করোনাভাইরাস অতি দ্রুতগতিতে ছড়িয়ে পড়ার মধ্য দিয়ে তা বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নিয়েছে। এই বৈশ্বিক ভয়ংকর মহামারির সময়ে দেশের হাসপাতাল, চিকিৎসালয় এবং জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার বিরাজমান দুর্বলতা ও প্রস্তুতিহীনতা অনুধাবন করে দেশের নাগরিক হিসেবে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে আছি।

দেশের নাগরিক হিসেবে সরকারের প্রতি আমাদের আশু দাবি হচ্ছে:

১। অবিলম্বে শ্বেতপত্রের মাধ্যমে করোনা মহামারি রোধের পরিকল্পনা ও তা কার্যকর প্রণালি করে জনসমক্ষে প্রকাশ করতে হবে। ঢাকাসহ প্রতিটি জেলা – উপজেলায় কতজন স্বাস্থ্যকর্মী আছেন এবং তাদের সুরক্ষার পর্যাপ্ত সরঞ্জাম নিশ্চিত করতে হবে, প্রতিটি হাসপাতালে সর্বোচ্চ কতটি বেড প্রস্তুত করা যাবে, প্রতিটি হাসপাতালে কতটি ভেন্টিলেটর প্রস্তুত আছে, করোনা পরীক্ষার কতগুলো কিট আছে, প্রতিদিনের ব্যবহারের মানসম্মত গ্লাভস, মাস্ক ইত্যাদির মজুত কত দিনের মধ্যে নিশ্চিত করা যাবে, এসব তথ্য প্রকাশ করতে হবে। এবং সেই অনুযায়ী যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এই কাজে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাযথ বরাদ্দ দিতে হবে এবং নিয়মিত তা স্বচ্ছতার সঙ্গে জনগণকে জানাতে হবে।

২। অবিলম্বে দেশের সর্বত্র বিনা মূল্যে করোনা টেস্ট করার জন্য প্রয়োজনীয় কিটসহ বিভিন্ন সামগ্রী সরবরাহ এবং তার ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে। মাস্ক, সাবান, স্যানিটাইজার জোগান নিশ্চিত রাখতে হবে। কিট তৈরির কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে দ্রুত খালাস ও ট্যাক্স মওকুফের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  শাঁখা-সিঁদুর না পরায় বিবাহবিচ্ছেদের অনুমতি

৩। দেশের সব প্রবেশ পথ – বিমান, নৌ, স্থলবন্দর, রেল স্টেশন, নৌঘাট কঠোর নজরদারির আওতায় নিতে হবে। অবিলম্বে করোনা সংক্রমণের সময় আক্রান্ত দেশগুলো থেকে ফিরে আসা আগত প্রবাসীদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে সম্ভাব্য বা ইতিমধ্যে আক্রান্ত অঞ্চলের মানচিত্র তৈরি করতে হবে (ম্যাপিং)। গুরুত্ব অনুযায়ী অঞ্চলভিত্তিক জরুরি ব্যবস্থা নিতে হবে। দেশের ভেতর কক্সবাজার, পার্বত্য চট্টগ্রামসহ পর্যটন গন্তব্যগুলো দ্রুত বন্ধ করে দিতে হবে।

৪। কোয়ারেন্টাইনের জন্য ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরে বড় হোটেল-মোটেল-রিসোর্টসহ উপযোগী ভবনগুলো অস্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য নির্দিষ্ট করতে হবে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে স্টেডিয়াম, জিমনেশিয়াম, খালি ভবনে অস্থায়ী হাসপাতাল নির্মাণ ও ব্যবস্থাপনায় সেনাবাহিনীকে নিযুক্ত করা সম্ভব হলে করতে হবে। সিএমএইচ, বেসরকারি হাসপাতালগুলোকে সমন্বিত পরিকল্পনায় আনার পরিকল্পনা করতে হবে।

৫। অতি দ্রুত ডাক্তার নার্স, চিকিৎসা কর্মীসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর নিরাপদ পিপিই পোশাক ও প্রয়োজনীয় উপকরণ সরবরাহ করতে হবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য এখুনিই প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে হবে। দেশের গার্মেন্টস কারখানাগুলো ব্যবহার করে স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তার জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিপিই (পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট ) সরবরাহ করতে হবে।

৬। গণপরিবহন ও গণপরিসরগুলো এবং সংক্রমণের হটস্পট প্রতিনিয়ত জীবাণুমুক্ত করার ব্যবস্থা নিতে হবে। জেলখানার ঝুঁকিপূর্ণ জনচাপ দূর করে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিতে হবে, জনচাপ কমাতে বিনা বিচারে আটক, মেয়াদ উত্তীর্ণদের মুক্তি দিতে হবে। ছিন্নমূল ভাসমান মানুষদের জন্য নিরাপদ স্থানের আশ্রয় শিবির খুলে তাদেরকে সরিয়ে নিতে হবে। গাদাগাদি বাস করা বস্তিবাসীদের নিরাপত্তা রক্ষার্থে প্রতিটি বস্তিতে পরিচ্ছন্নতার উপকরণ সরবরাহ এবং করোনা মনিটর সেল/ ক্যাম্প স্থাপন করতে হবে। রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রেও একই নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী করবার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হবে।

আরও পড়ুনঃ  করোনায় আক্রান্তের নতুন উপসর্গ!

৭। করোনা সংক্রান্ত জরুরি কাজ ছাড়া পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানার শ্রমিকদের বর্তমান সময়ে সবেতন ছুটি দিতে হবে। ছুটিকালীন শ্রমিকদের মজুরি যাতে ঠিকমতো পরিশোধ হয়, সরকারকে সে ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

৮। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মজুতদারী বন্ধ করে ন্যায্যমূল্যে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। স্বল্প আয়ের এবং রোজগার হারানো মানুষদের জন্য রেশনিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। অতি বিপন্ন মানুষ, যেমন, উদ্বাস্তু, দিনমজুর, রিকশাওয়ালা, বস্তিবাসী, কারখানার শ্রমিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, ছোট ব্যবসায়ী, যাদের জীবিকা হুমকির সম্মুখীন, তাদের জন্য বিশেষ ভাবে অর্থনৈতিক সুরক্ষা প্রদান করতে হবে। এই সুযোগে ঋণখেলাপি, চোরাই টাকার মালিকদের কোনো অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া যাবে না।

৯। বিশেষজ্ঞ, স্বাস্থ্যকর্মী, ধর্মীয় নেতাদের সাহায্য পাড়ায়, মহল্লায় স্থানীয় ক্লাব, সংগঠন ও কলেজ- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ ও পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম প্রদান করে তাদের প্রচার ও রোগ প্রতিরোধে কাজের সুযোগ দিতে হবে।

১০। পাশাপাশি ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া মোকাবিলায় সরকারের কী পরিকল্পনা তা দ্রুত প্রকাশ করতে হবে। বর্ষাকাল আসার আগেই আমাদের ডেঙ্গু মৃত্যু রোধ করবার প্রস্তুতিও শেষ করতে হবে, যেটি একই কমিটি থেকে পরিচালিত হতে পারে।

আনন্দবাজার/শাহী

সংবাদটি শেয়ার করুন