পপি গাছ একটি আফিম গাছ নামেও পরিচিত। এটি আফিম তৈরির কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হয়। একারণে পপি চাষ দেশে সম্পূর্ণ নিষেধ। অথচ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হল, একাডেমিক ও বাসভবন থেকে শুরু করে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সৌন্দর্যবর্ধনের আড়ালে বাগানে পাওয়া গেছে হেরোইনের উপাদান পপি ফুলের গাছ।
পপি শব্দটি মানুষের নাম হিসেবে স্বাভাবিক মনে হলেও এই ফুলের নাম শুনলেই অনেকে আতকে উঠেন। কেননা ‘পপি ফুল’ নিষিদ্ধ দামি মাদক ‘আফিম’ তৈরীর একমাত্র কাঁচামাল। এই ফুল থেকেই আফিম তৈরি হয় আর সেই আফিম থেকে হিরোইন ও মরফিন পাওয়া যায়। আর তাই এই ফুলের চাষ বাংলাদেশে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের হল ও বাসভবনে ৪(চার) প্রজাতির পপি ফুল চাষ লক্ষ্য করা যায় এর মধ্যে সাদা, লাল, গোলাপি ও হলুদ রঙের ফুল রয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সরেজমিনে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, সৈয়দ আমীর আলী, মতিহার, মাদারবক্স, শহীদ জিয়াউর রহমান, শহীদ শামসুজ্জোহা, শেরে-বাংলা হল- প্রাধ্যক্ষের বাস ভবন ও মমতাজউদ্দীন কলাভবন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ভবনসহ উপাচার্যের বাসভবনেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই পপি ফুলের গাছ। কিছু সংখ্যক ‘পপি’ গাছ দেখে যে কারও মনে হতে পারে, কৌশলে অন্য ফুল গাছের আড়ালে সেগুলো ঢেকে রাখা হয়েছে। তবে কোনটি আবার প্রকাশ্যেই রয়েছে। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হলের সামনে ও অভ্যন্তরে রয়েছে অসংখ্য পপি ফুলের গাছ। হলের সামনে সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য লাগানো ফুল গাছের আড়ালেই দেখা মিলবে অসংখ্য এই গাছ।
এছাড়াও হলের অভ্যন্তরে প্রবেশের ডান ও বাম পাশেও বাহারি ফুলের আড়ালে রয়েছে সারিবদ্ধ এই গাছ। সৈয়দ আমীর আলী হলের অভ্যন্তরেও রয়েছে নিষিদ্ধ এই ফুলের অসংখ্য গাছ। হলটির বাগানে অন্যান্য ফুল গাছের সাথে মিশে আছে এগুলো। এদিকে মতিহার হলে প্রবেশর বাম পাশের বাগানে বাহারী সব ফুলের মাঝে চাষ করা হচ্ছে পপি ফুল। এছাড়াও পপি ফুলের গাছ রয়েছে জিয়া ও জোহা হলের ১ম ব্লক, মাদারবক্স হলের ৩য় ব্লকে পাওয়া গেছে পপি ফুলের অসংখ্য গাছ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে যে কোন প্রজাতির পপি ফুল গাছ উৎপাদন, বাজারজাত ও চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তবুও কেন বাগানে পপিফুল চাষ করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মালিদের সে বিষয়ে সেই প্রশ্ন করা হলে আমীর আলী হলের মালি বলেন, “আসলে পপি ফুল শুধু সৌন্দর্যের কথা চিন্তা করেই চাষ করেছিলাম, কিন্তু ভালোমতন জানার পর গাছগুলো কেটে ফেলি। এখনকার গাছগুলো আগের গাছেরই ফল থেকে ঝরে পড়া বীজ থেকে হয়ছে। এগুলোও কেটে ফেলবো ।”
এবিষয়ে বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ ড. রওশন জাহিদ বলেন, “আমরা ফুলটি বহুবার পর্যবেক্ষণ করেছি তবে তা পপি, আমি জানতাম না।
“উল্লেখ্য বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ গত শুক্রবার পপি ফুলের বিষয়টি অবহিত হওয়ার সাথে সাথেই হলের পপি ফুলগাছগুলো নির্মূল করেন।”
পপি ফুলের ছবিসহ কয়েকটি ফুল ও ফল দেখালে উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মুঞ্জুর হোসেন বলেন, এটি অবশ্যই নিষিদ্ধ পপি ফুল যেটি বাংলাদেশে চাষ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ । ক্যাম্পাসে পপি ফুল গাছ আছে তা আমি আগে জানতাম না । তবে এই বিষয়গুলো প্রশাসনের আরো সচেতন হওয়া উচিত ।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী কার্যালয়ের উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান বলেন, ‘পপি গাছ দুই প্রজাতির হয়। এর একটি থেকে রস সংগ্রহ করে ‘আফিম’ তৈরি করা গেলেও অন্য প্রজাতি থেকে রস সংগ্রহ করা যায় না। কিন্তু বাংলাদেশে সব ধরনের ‘পপি’ গাছ লাগানো নিষেধ। সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য বাগানে লাগানোও বৈধ নয়।’
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. লুৎফর রহমান বলেন, ‘আমি বিষয়টি সম্পর্কে জানি না এবং বিষয়টি অজানা থাকায় আমি মন্তব্য করতে পারছি না। ঘটনাটি সত্য হয়ে থাকলে আমরা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।”
আনন্দবাজার/শাহী