ঢাকা | সোমবার
২৫শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

উদ্ভাবিত হলো বিইউ হাইব্রিড লাউ ১

লাউ একটি জনপ্রিয় সবজি। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা উদ্ভাবন করেছেন সারা বছর চাষযোগ্য লাউয়ের একটি জাত। বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ নামে উদ্ভাবিত এই জাতটি ইতোমধ্যে কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। নতুন উদ্ভাবিত এই লাউ অল্প জমিতে চাষযোগ্য, রোগ সংক্রমণ কম এবং উৎপাদন বেশি হওয়ায় সবজির চাহিদা পূরণের ক্ষেত্রে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে দাবি করছেন বিজ্ঞানীরা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. এ. কে. এম আমিনুল ইসলাম দীর্ঘ ৮ বছর গবেষণার পর বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ ও বিইউ লাউ-১ নামের লাউয়ের দুটি নতুন জাত উদ্ভাবন করেছেন।

সুস্বাদু এই লাউ ফসলের আধুনিক ও বাণিজ্যিক চাষাবাদের ক্ষেত্রে যুগান্তকারী পরিবর্তন নিয়ে আসবে বলে দাবি করেছেন এই উদ্ভাবক। উচ্চফলনশীল এই জাত দুটির মধ্যে একটি হাইব্রিড এবং অন্যটি উন্মুক্ত পরাগায়িত (ওপি)। দুটি ফলনের তুলনায় অঙ্গজবৃদ্ধি খুব কম যা আধুনিক বা স্মার্ট কৃষির জন্য একেবারে লাগসই। তাছাড়াও পুং ও স্ত্রী ফুলের অনুপাত কম হওয়ায় গাছে খাদ্যের যে যোগান দেয়া হয় সরাসরি ফল উৎপাদনে ব্যবহার হয়।

এতে অন্যান্য প্রচলিত জাতের তুলনায় অপচয় কম হয় এবং ফল কম ঝরে পড়ে।নতুন উদ্ভাবিত জাত দুটি চাষাবাদে খরচ এবং রোগ সংক্রমণের হার কম হওয়ায় অনেক চাষী এই লাউ চাষে ঝুকছেন। তারা বলছেন, এই লাউ পোকা মাকড় দ্বারা তেমন আক্রান্ত হয়না, অন্যান্য লাউয়ের তুলনায় অধিক ফলন হয়।উদ্ভাবক আমিনুল ইসলাম বলেন, হাইব্রিড জাতটি আলোক অসংবেদনশীল হওয়ায় সারাবছরই চাষযোগ্য, খেতে খুব সুস্বাদু এবং গ্রীষ্মকালীন স্বাদেও খুব একটা হেরফের হয়না। দেশীয় লাউয়ের ন্যায় জনপ্রিয় হালকা সবুজ বর্নের লাউ প্রতি গিঁটে গিঁটে ধরে।

ফলের গড় ওজন ৩-৪ কেজি। বিইউ লাউ-১ জাতটির বৈশিষ্ট্য হলো এর ফলগুলো ছোট (১.০-১.২ কেজি ওজনের) যা বর্তমান আধুনিক সমাজের ক্ষুদে পরিবারগুলোর চাহিদার সাথে মানানসই। সচরাচর লাউয়ের ফল বেশ বড় হওয়ায় এক বেলার জন্য কেটে রান্না করে বাকিটা পরের বেলার জন্য রেখে দিতে হয় যার স্বাদ ও গুণাগুণ অনেক সময় নষ্ট হয়ে যায়। যা এই জাতের লাউয়ের ক্ষেত্রে এড়ানো সম্ভব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. গিয়াস উদ্দিন মিয়া বলেন, কম জায়গায় বেশি ফলন উপযোগী এ জাত দুটো বাড়ির উঠোনে বা আঙ্গিনায় এমনটি ভবনের ছাঁদেও সফল ভাবে চাষ করা যাবে। দরিদ্র জনগোষ্ঠী এ লাউ চাষ করে নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে সারা বছর বাজারে বিক্রি করে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হবে।অঙ্গজ আকৃতির দিক থেকে এই দুটি জাতের লাউ গাছ ছোট হওয়ায় এবং গাছের একেবারে গোড়া থেকে ডগা অবদি ফল ধরায় এটি ছাদকৃষি বা ভার্টিক্যাল এগ্রিকালচারেও অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে অন্তর্ভূক্ত করা যাবে। এতে সবজি উৎপাদনে বহুগুন বাড়বে বলে মনে করছেন তিনি ।

তিনি আশা করছেন বিএডিসির মাধ্যমে দ্রুত এ জাত দুইটি দেশে ছড়িয়ে যাবে। গবেষক জানান, সারা বছর চাষ যোগ্য বিইউ হাইব্রিড লাউ-১ চার মাস অন্তর অন্তর বীজ বপন করে সারা বছর চাষাবাদ করা যায়। প্রতিটি গাছে ২৫-৩০টি করে লাউ ধরে যা খেতে অত্যন্ত সুস্বাদু। তবে বিইউ লাউ-১ জাতের বীজ লাগাতে হয় সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে। চারা উৎপাদনের ৪০-৪৫দিন পর চারা থেকে ফুল দেয়া শুরু হয়। এতেও প্রতি গাছে ২৫-৩০টি করে লাউ ধরে।

কৃষক পর্যায়ে চাষ হচ্ছে এ জাত দুইটি।গাজীপুরের শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার টোক এলাকার দুই কৃষক কামরুজ্জামান সবুর ও জামান জানান, ১৭শতাংশ জমিতে তিনি ওই দুই জাতের লাউ চাষ করেছেন। চলতি মৌসুমের এ সময়ে তিনি ৬০হাজার টাকার লাউ বিক্রি করেছেন। এখন ফলন দিচ্ছে। অল্প জমিতে অল্প খরচে এ লাউয়ের ফলন অনেক বেশি। এ লাউ চাষ করে হত দরিদ্ররা সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে পারেন এবং দেশে সব্জির ক্রাইসিস কমাতে ভুমিকা রাখতে পারেন।

 

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন