ঢাকা | শনিবার
২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শীতলক্ষ্যার জেগে ওঠা চরে স্ট্রবেরি চাষ

গাজীপুর জেলার শ্রীপুর ও কাপাসিয়া উপজেলার বুক চিরে বহমান শীতলক্ষ্যার তীরে জেগে উঠা চরে স্ট্রবেরির ভালো ফলন হয়েছে। শীতপ্রধান দেশের ফল হিসেবে স্ট্রবেরির প্রচলন থাকলেও প্রান্তিক কৃষকের কল্যানে এখন স্ট্রবেরি পরিচিত হয়ে উঠছে সবার মধ্যে। দাম ও ফলন ভালো পাওয়ায় প্রতিনিয়ত কৃষকের মধ্যে জনপ্রিয় হচ্ছে স্ট্রবেরি চাষ।গাজীপুরের শীতলক্ষ্যা নদীর তীরের কাপাসিয়ার সিংহশ্রী ইউনিয়নের একটি গ্রাম কুড়িয়াদী। এই গ্রামের গুটিকয়েক কৃষক কৃষক নদীর তীরে জেগে উঠা চরে শীতকালীন  ফসলের চাষ করলেও অধিকাংশ জমিই পতিত ছিল।

কৃষিকাজে ভিন্নতা আনতে চলতি মৌসুমে পাশের শ্রীপুর উপজেলার ফুল চাষী দেলোয়ারের পরামর্শে গ্রামের কয়েকজন কৃষক স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেন, এদেরই একজন তোফায়েল আহমেদ বিদ্যুৎ। তিনি জানান, বর্ষা শেষে নদীর পানি নেমে যায়, জমে থাকা পলিমাটি থাকে খুব উর্বর। যে ফসলের চাষ করা হয় তাতেই মেলে সফলতা। তিনি দেলোয়ারের মালিকানাধীন মৌমিতা ফ্লাওয়ারস থেকে ১হাজার স্ট্রবেরির চারা কেনেন, প্রতিটি চারার দাম ছিল ৩০টাকা করে। কয়েকমাস পরিচর্যা করার পর এখন ফল পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিকেজি স্ট্রবেরি তিনি ৭’শ থেকে ৮’শত টাকা কেজি করে বিক্রি করেছেন। এ পর্যন্ত তিনি দেড় লাখ টাকার স্ট্রবেরি বিক্রি করেছেন।

তার পাশাপাশি নদীর চরে স্ট্রবেরির চাষ করেছেন একই এলাকার আব্দুর রাজ্জাক প্রধান কাজি। তিনি রোপন করেছেন ৭হাজার স্ট্রবেরির চারা এছাড়াও হুমায়ুন কবির জাপানি  নামের এক যুবক রোপন করেছেন ১৩হাজার স্ট্রবেরির চারা।কৃষিকাজে সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী নয়ন জুড়ানো রঙ,গন্ধ,বর্ণে ও স্বাদে আকর্ষণীয় ফল হচ্ছে স্ট্রবেরি। ফলের রস আইসক্রীম,জ্যাম,মিল্ক শেক তৈরীতে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। শিল্পায়িত খাদ্যেও স্ট্রবেরির সুগন্ধ ব্যবহার করা হয়। ১৭৪০ সালে ফ্রান্সে প্রথম স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়। পর্যায়ক্রমে চিলি, আর্জেন্টিনা সহ বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। শীতপ্রধান দেশে ফল স্ট্রবেরি হলেও বর্তমানে বাংলাদেশের যেসব এলাকায় শীত বেশী পরে সেসব এলাকায় বারি-১ জাতের স্ট্রবেরির চাষ হচ্ছে।

অনেকেই শখের বশে বা বাসা বাড়িতে চাষ করলেও এখন বানিজ্যিক ভাবে স্ট্রবেরির চাষ শুরু করেছেন কাপাসিয়ার কয়েকজন কৃষক।স্ট্রবেরি চাষী হুমায়ুন কবির জাপানির ভাষ্যমতে, অনেকেই অনেকভাবে টাকা পয়সা নষ্ট করে থাকেন। গত মৌসুমে পেপের বাগান করে শীলাবৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল, অনেক লোকশানের মুখোমুখি হয়েছিলাম। তাই এবার আমরা কয়েকজন মিলে একটি ঝুঁকি নিয়েছিলাম স্ট্রবেরি চাষের মাধ্যমে। নদীর তীরের পতিত চরে আমরা স্ট্রবেরি চাষে ভালো ফলন পেয়েছি। এখন আমাদের দেখাদেখি আগামী মৌসুমে অনেকেই স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহী হচ্ছেন।

আমাদের আশা লাভজনক চাষ বিধায় নদীর তীরে সম্ভাবনাময় স্ট্রবেরি চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে আগামীতে।গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারন বিভাগের উপপরিচালক মাহবুব আলম জানান, স্ট্রবেরীতে উচ্চমাত্রায় পুষ্টিমান বিদ্যমান। এই ফল রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি রোগমুক্তিতেও সহায়তা করে। গাজীপুরে বিক্ষিপ্তভাবে স্ট্রবেরির চাষ হলেও আমরা এর পরিমান নির্ধারন করতে পারিনি। অনেকে শখের বশে বাসাবাড়ীতে স্ট্রবেরির চাষ করলেও এখন কাপাসিয়ায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে জেগে উঠা চরে বানিজ্যিকভাবে স্ট্রবেরির চাষ করছেন। এই চাষ লাভজনক বিধায় গ্রামীন অর্থনীতিতে অবদান রাখবে।

আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন