ঢাকা | বৃহস্পতিবার
২৬শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করোনা ঠেকাতে পারে ‘নিশিন্দা’ গাছ

করোনাভাইরাসের (কোভিড-১৯)  চিকিৎসায় কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে ঔষধি গাছ ‘নিশিন্দা’। এমনটা ধারণা করছে ইউডা’র একদল গবেষক। গবেষণায় তারা এই গাছটিতে তিনটি উপাদান পেয়েছেন, যা করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়তে পারে।

আজ শনিবার ইউনিভার্সিটি অব ডেভেলপমেন্ট অল্টারনেটিভ (ইউডা) এর বায়োটেকনোলজি এন্ড জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের উদ্যোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে ‘করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিরাময়ের সম্ভাব্য ঔষধ আবিস্কারে বায়োইনফরমেটিক্স এর প্রয়োগ’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উঠে আসে। তবে এক্ষেত্রে এ বিষয়ে গবেষণাগারে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইফ সায়েন্স অনুষদের ডিন রহমত উল্লাহ বলেন, আমাদের দেশের নিশিন্দা নামের ঔষধি গাছটি কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে কাজ করতে পারে। এ গাছের মধ্যে কিছু কেমিক্যাল কমপাউন্ড আছে, যা করোনাভাইরাসকে নিষ্ক্রিয় করে, কম্পিউটার স্টাডিজ বলছে এটি। কিন্তু আসলে কাজ করবে কিনা, তা দেখতে হবে ভাইরাসের এগেইনস্টে।

মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, যেকোনো ভাইরাস বা ফাঙ্গাস প্রোটিন দিয়ে গঠিত। কিছু প্রোটিন আছে, যা ভাইরাসের বংশ বিস্তার এবং রোগ ছড়াতে কাজ করে। এরকম কোনো প্রোটিনের সাথে যদি কোনো ছোট যৌগিক পদার্থ যুক্ত করে দেওয়া যায়, তাহলে প্রোটিন কাজ করতে পারে না। ফলে বংশবিস্তার ঘটে না।

রহমত উল্লাহ বলেন, এ পদ্ধতিতে গবেষণা করে তারা নিশিন্দা গাছে পেয়েছেন অ্যাপিজেনিন, ভিটেক্সিন এবং আইসো ভিটেক্সিন নামের তিনটি যৌগিক পদার্থ যেগুলো নভেল করোনাভাইরাসের সি-৩ প্রোটিনের সাথে যুক্ত হতে পারে। ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও এই গবেষণাটি যথার্থ বলে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানান তিনি।

ইংল্যান্ডের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় ও নর্টিংহ্যাম বিশ্বদ্যিালয় এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয় সহযোগিতায় এ গবেষণা করা হয়। করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই তিনটি যৌগিক পদার্থ যথাক্রমে- Apigenin, Vitexin এবং Iso Vitexin এর যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হবার। কিন্তু তার আগে এটা গবেষণাগারে ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষার আরো প্রয়োজন রয়েছে।

চীনে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই গবেষণাটি শুরুর কথা জানান রহমত উল্লাহ। তারাই এটি প্রথম উদ্ভাবন করলেন কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, যেহেতু কোথাও এটা প্রকাশিত হয়নি, আমার জানা মতে আমরাই এটি প্রথম আবিষ্কার করেছি।

সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউডা’র প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি অধ্যাপক মুজিব খান, ইউডা’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম শরীফ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি ও মলিকুলার বায়োলোজী বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. মামুন রশিদ চৌধুরী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, করোনা ভাইরাস একটি ছোঁয়াচে রোগ। এই রোগ প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা। করোনা ভাইরাস নিরাময়ে সম্ভাব্য ঔষধ আবিষ্কারে বায়োইনফরমেটিক্স্র এর প্রয়োগ শীর্ষক সেমিনার আয়োজন করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানান তিনি।

আনন্দবাজার/রনি

সংবাদটি শেয়ার করুন