ঢাকা | রবিবার
২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবাকে বাচাঁতে লিভার দান করলেন কুবি শিক্ষার্থী

২০১৬ সালের জানুয়ারি মাস। নারায়ন আচার্য্যের কিছুদিন ধরে পেটে ব্যথা, কিছু খেতে পারতেন না। হাসপাতালে ভর্তির পর জানা গেল তিনি লিভারের কঠিন রোগে আক্রান্ত। সুস্থ করার জন্য লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে! কিন্তু কে দেবে লিভার? এগিয়ে এলেন মেয়ে উর্মি আচার্য্য। এই সাহসী মেয়েই তার ৬৭ শতাংশ লিভার বাবাকে দান করেছেন।
শর্মী আচার্য্য ও উর্মি আচার্য্য দুইবোন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থী। বড়বোন শর্মী ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের (৭ম ব্যাচ) গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী। ছোটবোন উর্মি বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের (৮ম ব্যাচ) অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস (এআইএস) বিভাগে পড়েন। তাদের বাবা নারায়ন আচার্য্য দীর্ঘদিন যাবৎ লিভার সিরোসিসে ভুগছিলেন।
বাংলাদেশে চিকিৎসকদের পরামর্শে বাবাকে নিয়ে উর্মিরা ভারত যান গেল বছরের ২৬ ডিসেম্বর। ভর্তি হন দিল্লির ম্যাক্স হেলথকেয়ার হসপিটালে।
উর্মি আচার্য্য জানান, ‘১৫ লক্ষ টাকা নিয়ে দিল্লি গিয়েছিলাম। কিন্তু অপারেশনের জন্য দরকার ২৫ লক্ষ টাকা। এরমধ্যে সব পরীক্ষা করাতে প্রায় ২লক্ষ টাকা শেষ। এদিকে বাবার অবস্থা আরো খারাপ হতে লাগল। তাই ৭ জানুয়ারি অপারেশনের তারিখ দিল চিকিৎসকরা। কিন্তু অপারেশনের জন্য পুরো টাকা আগে জমা করতে হবে, আমরা জমা করতে পারিনি। তাই অপারেশন আরো পিছিয়ে গেল। বাবার শরীর আরো খারাপ হতে লাগে তখন ইমার্জেন্সি মোট ৬ বার হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয় বাবাকে। এইভাবে আমাদের হাতের টাকা কমতে থাকে। তাছাড়া সেখানে থাকা খাওয়াও অনেক ব্যয়বহুল। সবমিলিয়ে অনেক হতাশায় দিনপার করছিলাম।’
গত ১৭ জানুয়ারি লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্টের অপারেশন হয়। উর্মি দান করেন ৬৭ শতাংশ লিভার। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি বাবা নারায়ন আচার্য্যকে নিয়ে দেশে ফেরেন উর্মি।
উর্মি বলেন, দিল্লির চিকিৎসকরা আরো কিছুদিন থাকতে বলেছিলেন। কিন্তু আমাদের টাকা শেষ হওয়ায় আমাদের দেশে চলে আসতে হয়েছে। হাসপাতালে বাবাকে দেখেছেন বিখ্যাত লিভার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন ডা. সুভাষ গুপ্তা। তাকে আর্থিক ব্যাপারটা বুঝিয়ে বলাতে আমাদেরকে বাংলাদেশ আসতে দিয়েছেন। দেশে প্রতি সপ্তাহ পর পর সংশ্লিষ্ট পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট ইমেইল পাঠাতে বলেছেন তিনি।
উর্মি জানান, পরীক্ষাগুলো অনেক ব্যয়বহুল৷ আর বাবা এখন থেকে সারাজীবন অনেক দামি মেডিসিন নিতে হবে। আমি সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ছিলাম। এখন বাবাকে লিভার দেয়ায় আমিও কোন উপার্জন করতে পারব না। তাই অনেক দুশ্চিন্তায় দিন পার করতে হচ্ছে আমার।
তবে সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উর্মি আচার্য্য বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় বাবার অপারেশন সম্ভব হয়েছে। কৃতজ্ঞতা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বড় ভাই-বোন, সহপাঠী, অন্যান্য শিক্ষার্থীদের প্রতি। দেশের মানুষ যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা আমি মুখে বলে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারবোনা।’
নিজেদের সুস্থতার ব্যাপারে উর্মি বলেন, ‘বাবা সুস্থ হতে ছয় মাসের মতো লাগতে পারে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আমার সুস্থ হতে তিন মাসের মতো লাগতে পারে।’
বাবাকে লিভারের অংশ বিশেষ দেয়ার ব্যাপারে উর্মি জানান, ‘বাবাকে লিভার দান ছিল আমার কর্তব্যের অংশ। আর সকলের সহযোগিতা করার আগ্রহ আমার সাহসিকতাকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। সবকিছুর জন্য সৃষ্টিকর্তার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা।’
উল্লেখ্য, গেল বছর বাবার চিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চেয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন উর্মি আচার্য্য। সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দেশের জনগণ ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা।
আনন্দবাজার/এফআইবি

সংবাদটি শেয়ার করুন