মেহেরপুরের সাবিত্রী মিষ্টির বয়স প্রায় দেড়শো বছর ছুইছুই। পুরনো এই মিষ্টি স্বাদে যেমন অনন্য তেমনি দেশজুড়ে রয়েছে এর সুনাম। শুধু দেশ কি এই মিষ্টির সুনাম দেশের বাইরেও সমানভাবে ছড়িয়ে রয়েছে। প্রতিদিন দূর-দুড়ান্ত থেকে এই মিষ্টি কিনতে ভিড় জমায় ক্রেতারা। আর মেহেরেপুরের মিষ্টি প্রিয় মানুষের কাছে এই মিষ্টির স্বাদ যেন অমৃত। যে কোন ছোট বড় অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি যেন না থাকলেই নয়।
মেহেরপুরে জমিদার আমল থেকেই এই মিষ্টির প্রচলন আরম্ভ হয়। শহরের বাসুদেব কুমারের সৃষ্টি এই মিষ্টি তখন থেকেই ব্যাবসায়িকভাবে তৈরী ও বিক্রি শুরু হয়। দ্রুতই জমিদারদের কাছে সুস্বাদু হয়ে ওঠে এই মিষ্টি। পরে, ব্রিটিশ আমলে ইংরেজদের কাছেও এই মিষ্টি সুনাম লাভ করে। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি সাবিত্রী মিষ্টির কর্ণধারকে ।
একজন ক্রেতা বলেন, ‘বাপ-দাদার আত্মীয় স্বজনদের মুখ থেকে এই মিষ্টির কথা প্রথম শুনি। তখন থেকেই সাবিত্রী মিষ্টি কিনে নিজেরা খাই। এমনকি বিদেশে আত্মীয় স্বজনদের কাছেও পাঠাতে হয়।’
এখন প্রতিবছর যে কোন উৎসব এলেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব ও অনুষ্ঠানে এই মিষ্টি বিনিময় ও খাবার আনন্দের চিরায়ত প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। মেহেরপুরে প্রতিদিনই এই মিষ্টি বিক্রির ধুম পড়ে। মিষ্টিটির বিশেষত্ব হলো, শুধুমাত্র খাঁটি দুধকে নিদিষ্ট তাপমাত্রায় জ্বাল দিয়ে ঘন করে গুটি ছানা হওয়ার পর, তা বিশেষ পদ্ধতিতে আরও জ্বাল দিয়ে সাবিত্রী মিষ্টি তৈরী করা হয়।
বর্তমানে ঠাকুরদাদার এই পেশা ধরে রেখেছে তিন প্রজন্মের পরের সন্তানেরা। বাজারে মিষ্টির কদর ও চাহিদা বাড়লেও পর্যাপ্ত দুধ ও জনবলের অভাবে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪ মণ এর বেশি মিষ্টি তৈরী করতে পারেনা কারিগররা।
বাসুদেব গ্র্যান্ড সন্স এর বর্তমান স্বত্বাধিকারী বিকাশ কুমার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ সহ বিশেষ কোন দিনে মিষ্টির কদর বাড়ে। তাছাড়া দুধ ও কারিগরের অভাবে চাহিদামত মিষ্টি তৈরী ও সরবরাহ করতে পারি না। ১২৫ বছরের পুরানো এই মিষ্টিটি বর্তমানে পারিবারিক ও মেহেরপুরের ঐতিহ্য হওয়ায় আমরা এই পেশা ধরে রেখেছি।
আনন্দবাজার/এফআইবি