বাণিজ্যিকভাবে নার্সারি করে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা শুনলেও বাড়ির আঙিনায় গোলাপ চাষ করে স্বাবলম্বী হওয়ার কথা খুব একটা শোনা যায় না। তবে মেধা, শ্রম আর ইচ্ছা শক্তি কাজে লাগিয়ে যে কোনো কাজে এবং যে কোনো স্থানে সফলতা অর্জন সম্ভব, তার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেরপুরের নকলা উপজেলার বানেশ্বরদী ইউনিয়নের বানেশ্বরদী মধ্যপাড়া গ্রামের কলেজ পড়ুয়া মোশাররফ হোসেন বাবু। তিনি আঙিনায় গোলাপ চাষ করে বাড়তি আয় করছেন, যা দিয়ে তার লেখাপড়াসহ যাবতীয় খরচ চলছে। তার দেখাদেখি এলাকার অনেক শিক্ষার্থী আঙিনায় বিভিন্ন ফুলের চারা রোপণ করেছেন। এরই মধ্যে অনেকে সফলতার মুখ দেখতে শুরু করেছেন।
মোশাররফ জানান, ২০১৬ সাল শখের বসে বিভিন্ন রং ও বিভিন্ন জাতের পাঁচটি গোলাপের চারা আঙিনায় রোপণ করেন তিনি। জাতীয় দিবসগুলোয় স্থানীয় শিক্ষার্থীসহ অন্যরা তার কাছ থেকে গোলাপ ফুল কিনে নেওয়ায়, গোলাপ চাষে তার আগ্রহ বেড়ে যায়। এরপর থেকে জমির পরিমাণ বাড়াতে থাকে। আজ তিনি সফল গোলাপ ফুল চাষি। তার বাড়ির আশপাশের পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের গোলাপ চাষ করেছেন তিনি। আর এর আয় থেকেই তার লেখাপড়ারসহ যাবতীয় খরচ চলে।
মোশাররফের সফলতা দেখে অল্প বিনিয়োগ করে ফুলের বাগান করে লেখাপড়ার খরচসহ নিজেদের যাবতীয় খরচ চালানোর পথ খুঁজে পেয়েছেন উপজেলার অগণিত শিক্ষার্থী। তারা বাড়ির আঙিনায় গোলাপের চাষ করছেন। বাড়ির আঙিনায় গোলাপের গাছ দেখলেই বুঝা যায়, নিশ্চিত ওই বাড়িতে স্কুল বা কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী রয়েছেন। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, অমর একুশে, পহেলা বৈশাখসহ বিভিন্ন জাতীয় দিবস ও অনুষ্ঠানে গোলাপ ফুলের চাহিদা বেড়ে যায়। এসব দিবসে যে পরিমাণ গোলাপ বিক্রি করা হয়, সে আয় দিয়েই তাদের সারা বছরের লেখাপড়ার খরচ চলে।
এছাড়া বিভিন্ন দিবসে উপজেলার অন্তত ছোট-বড় অর্ধশত মৌসুমি ফুল বিক্রেতা তাদের বাগানের ফুল কিনে নিয়ে বিক্রি করে বাড়তি আয় করেন। ফুল ও ফুলের চারা বিক্রেতাদের অনেকেই জানান, সারা বছর যতটা না ফুল বিক্রি হয়, তারচেয়ে বেশি বিক্রি হয় বিভিন্ন দিবসে। প্রতিটি গোলাপ ১৫ থেকে ৩০ টাকা করে বিক্রি করেন তারা। আর উন্নত হাইব্রিড জাতের গোলাপ বিক্রি হয় আরও বেশি দামে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ পরেশ চন্দ্র দাশ বলেন, নকলা উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত নার্সারি রয়েছে। এতে সৃষ্টি হয়েছে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। নকলা উপজেলার নার্সারির মালিকরা আজ সবাই স্বাবলম্বী। এছাড়া আঙিনায় ফুলের বাগান করে অনেকে স্বাবলম্বী হয়েছেন।