পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরে আসা ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের জাহাজটির লোকাল এজেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা।
জানা যায়, পাকিস্তান থেকে আসা জাহাজটি দু্বাই ভিত্তিক শিপিং কোম্পানি ফিডার লাইন্স ডিএমসিসির। বাংলাদেশে তাদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলি গ্রুপের রিজেন্সি লাইন্স লিমিটেড। কর্ণফুলি লিমিটেড একটি বহুমুখী এবং খ্যাতনামা ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৫৪ সালে প্রয়াত হেদায়েত হোসেন চৌধুরী প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে কর্ণফুলি গ্রুপের পরিচালনায় রয়েছেন হেদায়েত হোসেন চৌধুরীর পুত্র সাবের হোসেন চৌধুরী। পরবর্তী প্রজন্মের প্রতিনিধিত্ব করছেন হামদান হোসেন চৌধুরী। যিনি প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক। এছাড়া রাইমা চৌধুরী এবং আরাজ চৌধুরীও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।
কর্ণফুলি গ্রুপ বাংলাদেশের পোর্ট, শিপিং, লজিস্টিকস, মিডিয়া, মোটরসাইকেল উৎপাদন, রিয়েল এস্টেট ও এয়ার কার্গোসহ বিভিন্নখাতে কাজ করে। প্রতিষ্ঠানটি দেশের প্রথম আন্তর্জাতিক মান সংস্থা (আইএসও 9002) সার্টিফিকেশন পাওয়া কোম্পানি হিসেবেও পরিচিত। কর্ণফুলি গ্রুপের সদর দপ্তর রাজধানীর কাকরাইলে অবস্থিত।
মূলত এটি সাবের হোসন চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান। যিনি সদ্য পতন হওয়া আওয়ামী লীগ সরকারের একজন কুশীলব ছিলেন। যদিও পাকিস্তান থেকে জাহাজ আসা নিয়ে সামাজিক দুনিয়ায় তোলপাড় শুরু করেছে আওয়ামীপন্থি অ্যাক্টিভিস্টরা।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৩ নভেম্বর) পাকিস্তানের করাচি বন্দর থেকে ‘এমভি ইউয়ান জিয়ান ফা ঝং’ নামের জাহাজটি সরাসরি চট্টগ্রাম বন্দরে ভেড়ে। এত বছর পর পাকিস্তান থেকে কনটেইনারবাহী ওই জাহাজ কেন বাংলাদেশে এলো, কেনই বা এটি এত তাৎপর্যপূর্ণ তা নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। যদিও চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের পর ইতোমধ্যে পরবর্তী গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা হয়েছে জাহাজটি।
জানা গেছে, ‘দুবাই টু চট্টগ্রাম’ রুট হয়ে করাচি থেকে বাংলাদেশে আসা কনটেইনারবাহী জাহাজটির পরবর্তী গন্তব্য ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরের নিকটবর্তী এশিয়ার দেশ ইন্দোনেশিয়া। চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য খালাসের পর গত বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) জাহাজটি ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে ছেড়ে যায়।
একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের পর থেকে দীর্ঘসময় বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে সরাসরি বাণিজ্য হতো না। পরবর্তী সময়ে আবারও পাকিস্তানে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হলেও দেশটি থেকে সাধারণত সরাসরি পণ্যবাহী জাহাজ চট্টগ্রামে আসতো না। প্রথমে শ্রীলঙ্কায় কনটেইনার খালাস করতো পাকিস্তানের জাহাজ, এরপর অন্য জাহাজে শ্রীলঙ্কা থেকে সেসব কনটেইনার বাংলাদেশে আসতো।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার শাসনামলে পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক শীতল থাকলেও ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশটির সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম সীমিত হতে থাকে। একপর্যায়ে নিরাপত্তাজনিত কারণ দেখিয়ে দেশটি থেকে আমদানি করা অধিকাংশ পণ্য ‘লাল তালিকাভুক্ত’ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। অবশ্য, আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর পাকিস্তানের অনুরোধে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটির সব ধরনের পণ্য ‘লাল তালিকা’ থেকে মুক্ত হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সম্পর্ক উন্নয়নে নানা তৎপরতাও দেখা যাচ্ছে।