ঢাকা | বুধবার
২৩শে অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রপতি এবং সংবিধান গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অকার্যকর হয়ে গেছে: তথ্য উপদেষ্টা

‘শেখ হাসিনা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদত্যাগ করেন নাই। এটাতো আমাদের সকলের কাছে স্পষ্ট। তার পতন হয়েছে উল্লেখ করে তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি এবং সংবিধান অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অকার্যকর হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার করার জন্য আমরা তার (রাষ্ট্রপতির) অধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কিন্তু, যদি প্রয়োজন হয় সেটাকেও আমরা নতুন করে ভাবতেছি।’

বুধবার (২৩ অক্টোবর) বিকেল পৌনে ৫টায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখা আয়োজিত ‘গণঅভ্যুত্থানের সরকার: প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। জাবির জহির রায়হান মিলনায়তনে এই আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘শেখ হাসিনা তো নিয়মতান্ত্রিকভাবে পদত্যাগ করেন নাই। এটাতো আমাদের সকলের কাছে স্পষ্ট। তার পতন হয়েছে। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করেছে, বাংলাদেশের ছাত্র-জনতা। তাহলে আপনি বলতে পারেন কেন সংবিধানের অধীনে সরকার গঠিত হলো? সেই সময়ে আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়েছে, রাষ্ট্রের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা। রাষ্ট্রপতি এবং সংবিধান অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে অকার্যকর হয়ে গেছে। রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা রক্ষার করার জন্য আমরা তার (রাষ্ট্রপতির) অধীনে দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। কিন্তু, যদি প্রয়োজন হয় সেটাকেও আমরা নতুন করে ভাবছি।’

এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকার এক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বা অভ্যুত্থান থেকে সরকার, এই সরকারকে অনেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসেবে তুলনা করার চেষ্টা করে। আমি মনে করি, এই তুলনাটা একেবারে ভুল। একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার অন্তর্বর্তী সময়ের জন্য দায়িত্ব নেয়  এবং নির্বাচন আয়োজন করে ক্ষমতা হস্তান্তর করে। এবারের সরকার অভ্যুত্থানের যে প্রত্যাশা বা কিছু মৌলিক সংস্কার যদি করে যেতে না পারে– তাহলে গণতন্ত্রের রূপান্তরের পথটি মসৃণ হবে না। ফলে আমাদের অবশ্যই কিছু মৌলিক সংস্কার করে যেতে হবে। এই সংস্কারের ভিতরে আছে রাজনৈতিক বন্দোবস্ত। রাজনৈতিক বন্দোবস্ত মানে রাষ্ট্রের চরিত্রটা কী হবে, রাষ্ট্রে কারা রাজনীতি করতে পারবে, কারা পারবে না, রাষ্ট্রের আদর্শ, জাতীয় সংস্কৃতি এই জিনিসগুলো নির্ধারণ করা।

উপদেষ্টা বলেন, কোনো ব্যক্তি পরিবর্তনের লড়াই করে এতোগুলো মানুষ শহীদ হয় নাই। এটা এরকম না যে শেখ হাসিনাকে সরিয়ে দেওয়া হলো, এবং ড. ইউনূসকে সে জায়গায় বসিয়ে দেওয়া হলো। আমরা চাই ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন।  যাতে ওই ব্যবস্থার মধ্যে যেই আসুক না কেন– সে যেন আরেকজন শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে না পারে। এটা এই সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে।

আওয়ামী লীগের ফ্যাসিস্ট রাজনীতি করার অধিকার থাকবে কি-না এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘যাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হলো সেই আওয়ামী লীগের নতুন বাংলাদেশে রাজনীতি করার অধিকার থাকবে কি থাকবে না—এই বিষয়ে কোনো দ্বিধা রাখার সুযোগ নেই। যদি আওয়ামী লীগকে আমরা একটা ফ্যাসিস্ট দল বলি, যাদের আমরা ফ্যাসিস্ট বলতে বলতে মুখের ফেনা তুলে ফেলছি, তাহলে একটা ফ্যাসিস্ট দল গণতান্ত্রিক কাঠামোতে কীভাবে রাজনীতি করতে পারে? তাকে ফ্যাসিস্ট বললে তার রাজনীতি করার অধিকার থাকে না। আর কেউ যদি বলে, আওয়ামী লীগের রাজনীতি করার অধিকার আছে—তাহলে দয়া করে তাকে (আওয়ামী লীগকে) ফ্যাসিস্ট বলবেন না।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যে মতাদর্শ দিয়ে, যে প্রক্রিয়ায় রাজনীতি করেছে — অবশ্যই এইভাবে আওয়ামী লীগ আর কখনোই আসবে না। যদি আসে সেটা এই অভ্যুত্থানের শহীদদের কাছে প্রতারণার শামিল হবে। এবং অবশ্যই আমরা আমাদের জীবন থাকতে – এটা হতে দেব না।’

সংবাদটি শেয়ার করুন