সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া নবীনগরে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
রবিবার (২৯ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৪টায় নবীনগর উপজেলা প্রেসক্লাবের সামনে প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ঘণ্টাব্যাপী অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪শ সহকারী শিক্ষক ও শিক্ষিকা অংশ নেন।
মানববন্ধনে উপস্থিত শিক্ষকেরা সহকারী শিক্ষকদের জীবনমান উন্নত ও মর্যাদাসম্পন্ন করতে দশম গ্রেড বাস্তবায়নে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দশম গ্রেড বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, দশম গ্রেড শুধু আমাদের দাবিই নয়, এটি আমাদের ন্যায্য ও যৌক্তিক অধিকার। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্প্রতি প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকদের জন্য বেতন স্কেল ১৩তম থেকে ১২তম গ্রেড করার প্রস্তাব দিয়েছে। এটা প্রহসন, আমরা এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করি। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগে যোগ্যতার প্রয়োজন হয় স্নাতক সমমান অথচ বেতন গ্রেড ১৩তম। স্নাতক সম্পন্ন করে নিয়োগ পাওয়া একজন শিক্ষক কেন ১০ম গ্রেড পাবেন না।
বক্তারা আরো বলেন, প্রাথমিক শিক্ষকরাই শিক্ষার ভিত্তি স্থাপন করে থাকেন। কিন্তু চরম লজ্জার ও হতাশার বিষয় হচ্ছে, শিক্ষার বীজ বপনকারী শিক্ষকরা রাষ্ট্রের তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীর অভিশাপ থেকে আজও মুক্ত হতে পারেননি। এটি যেমন সকল শিক্ষক সমাজকে সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন করছে, তেমনি শিক্ষক তথা পুরো জাতির জন্যও অপমানজনক। এ ছাড়া, বিদ্যমান বেতন কাঠামো ও অত্যধিক মুদ্রাস্ফীতির কারণে শিক্ষকদের তিনবেলা আহার যোগাতেই বড় চ্যালেঞ্জে পড়তে হচ্ছে। একজন শিক্ষক টিফিন ভাতার জন্য মাসে মাত্র ২শ টাকা পান। এটি শিক্ষকদের সাথে প্রহসন করার সামিল।
এদিকে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ করে শিক্ষকরা বলেন, আপনি জানেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক একটি ব্লক পোস্ট, যেখানে অধিকাংশ শিক্ষকের এক চেয়ারেই কেটে যায় জীবন। তারা বিভিন্ন পেশার চাকুরিজীবিদের সাথে তুলনা করে বলেন, সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক, পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর, সিনিয়র নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদ সচিব ও বিভিন্ন মন্ত্রনালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ১০ম গ্রেডে বেতন পান। অথচ একই যোগ্যতা সম্পন্ন হয়েও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১৩তম গ্রেডে থাকেন এবং অধিকাশ শিক্ষক একই পদে চুকরী জীবন শেষ করেন। যা একটি চরম বৈষম্য। যার দরুণ অনেক মেধাবীরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় না এসে অন্য পেশায় ছুটছেন।
মানববন্ধনে শিক্ষকরা আরো বলেন, প্রাথমিক শিক্ষার গুনগতমান উন্নত করতে এবং শিক্ষকদের সামাজিক মর্যাদা পেতে ১০ম গ্রেডের ন্যায়সংগত দাবি বাস্তবায়নের জোর দাবি জানান। এছাড়া, মানববন্ধনের সমন্বয়ক ও উপজেলা শিক্ষক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও গোপালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. মনির হোসেন বলেন, ‘বর্তমান দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে একজন সহকারী শিক্ষকের ১৩তম গ্রেডে বেতন-ভাতা দিয়ে জীবন চালানো খুবই কঠিন। অনেক শিক্ষকের মাসের পর মাস ধারদেনা করে চলতে হয়। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার কাছে দাবি, উনি যেন আমাদের যৌক্তিক দাবিটি মেনে নেন।’
মানববন্ধনে সঞ্চালনা করেন হুরুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মো. বাবুল সরকার। মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাধ্যমে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি দেন শিক্ষকেরা।
আনন্দবাজার/কআ