ঢাকা | বুধবার
১৬ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৩১শে আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গবেষণা / দেশে কলেরার জীবাণু আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে

দেশে কলেরার জীবাণু আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠছে

বাংলাদেশে কলেরার জীবাণুর মিউটেশন (পরিব্যক্তি) ঘটছে। বিজ্ঞানীরা এমন একটি বিশেষ জিন আবিষ্কার করেছেন যেটির কারণে কলেরা দিন দিন আরও গুরুতর এবং দ্রুত এর প্রভাববিস্তার ঘটানোর সক্ষমতা অর্জন করছে বলে গবেষণায় উঠে এসেছে।

নেচার কমিউনিকেশনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এই আবিষ্কার তুলে ধরে গবেষকেরা বলছেন, এই আবিষ্কার গবেষকদের কলেরা ব্যাকটেরিয়াকে মারাত্মক অসুস্থতা সৃষ্টি করা থেকে প্রতিরোধ করতে সহায়তা করতে পারে। এ বিজ্ঞান সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া এমনভাবে বিকশিত হচ্ছে যা কলেরাকে আরও গুরুতর এবং নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন করে তুলছে। গবেষকেরা বাংলাদেশের ছয়টি অঞ্চলে ২০১৫ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত কলেরা রোগীদের কাছ থেকে সংগৃহীত ব্যাকটেরিয়ার নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন।

এই উপাত্ত বিশ্লেষণে প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে তাঁরা ২০২২ সালের বিধ্বংসী প্রাদুর্ভাবের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়ার স্ট্রেনের (ধরন) অনন্য জিন এবং মিউটেশনের একটি সেট চিহ্নিত করতে পেরেছেন। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই জিনগুলো ব্যাকটেরিয়ার দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া, তীব্র পেটব্যথা, বমি, পানিশূন্যতা এবং গুরুতর ক্ষেত্রে মৃত্যু ঘটানোর সক্ষমতার সঙ্গে যুক্ত।

কিছু জিন ব্যাকটেরিয়াকে আরও সহজে ছড়িয়ে পড়তে এবং মানুষের অন্ত্রে টিকে থাকতে সাহায্য করে উল্লেখ করে গবেষকেরা বলছেন, এই বিশেষ বৈশিষ্ট্যের জিন ব্যাকটেরিয়াকে পরিবেশগত চাপের জন্য স্থিতিস্থাপক এবং রোগ সৃষ্টিতে আরও দক্ষ করে তোলে।

কলেরার সংক্রমণ এবং তীব্রতা উভয়কেই চালিত করে এমন মূল জেনেটিক কারণগুলো শনাক্ত করে আমরা আরও কার্যকর চিকিৎসা এবং সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপের বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেছি বলে জানান এই গবেষণার প্রধান যুক্তরাজ্যের নটিংহাম বিশ্ববিদ্যালয়ের তানিয়া ডটোরিনি। এক বিবৃতিতে আরও বলেন, আমাদের অনুসন্ধান কলেরা গবেষণার একটি নতুন যুগের দরজা খুলে দিয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করার জন্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামগুলোর বিকাশ ঘটাতে পারি এবং সম্ভাব্য গুরুতর প্রাদুর্ভাব ঘটার আগেই প্রতিরোধ করতে পারি।

প্রসঙ্গত, কলেরা একটি তীব্র ডায়রিয়াজনিত রোগ। বিশ্বব্যাপী ১৩০ কোটি মানুষ এই রোগের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে অনুমান করা হয় এবং বছরে প্রায় ১৩ লাখ থেকে ৪০ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হন, এর মধ্যে ২১ হাজার থেকে ১ লাখ ৪৩ হাজার জনের মৃত্যু হয়। শুধু বাংলাদেশেই আনুমানিক ৬ কোটি ৬০ লাখ মানুষ কলেরার ঝুঁকিতে রয়েছে। যেখানে প্রতি বছর কমপক্ষে ১ লাখ আক্রান্ত হন এবং ৪ হাজার ৫০০ জন মারা যান।

জানা যায়, বৈশ্বিকভাবে ব্যাকটেরিয়ার ও১ সেরোগ্রুপ কলেরার প্রাথমিক কারণ হিসেবে চিহ্নিত। ও১ সেরোগ্রুপটি প্রধান সেরোটাইপ ওগাওয়া এবং ইনাবা দুই ভাগে বিভক্ত। এদের আবার দুটি বায়োটাইপ রয়েছে- ক্ল্যাসিক্যাল এবং এল টর (৭ম মহামারির জন্য দায়ী), যা আবার জিনগত ভাবে এবং গঠনগতভাবে স্বতন্ত্র। বাংলাদেশে কলেরা সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ার বৈজ্ঞানিক নাম ভিব্রিও কলেরি। এই ব্যাকটেরিয়া সময়ের সঙ্গে জিনগত এবং গঠনগত পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা দেখিয়েছে। ফলে এটি মহামারির ধারাবাহিক তরঙ্গের জন্ম দিয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন