ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বাংলাদেশের কয়েকটি জেলায় আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এই পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনা বা প্রেক্ষাপটের ছবি-ভিডিও ইন্টারনেটে প্রচার হচ্ছে, ছড়াচ্ছে বিভ্রান্তিকর নানা তথ্যও।
চলুন এক নজরে দেখে নেই সেই ভুল ও বিভ্রান্তিকর তথ্যগুলো –
বাংলাদেশে বন্যার দৃশ্য দাবিতে ভারতের ভিডিও প্রচার

সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি জেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই বন্যার করুণ চিত্র তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এর মধ্যে ফেনী জেলায় বন্যার পানি প্রবেশের দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। একই ভিডিও ছড়াচ্ছে সিলেটে সাম্প্রতিক বন্যার দৃশ্য দাবিতেও। মূলধারার গণমাধ্যমেও এই ভিডিওটি প্রচারিত হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচ্য ভিডিওটি বাংলাদেশের বন্যার নয়, বরং ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যে ঘটে যাওয়া বন্যার দৃশ্য।
পানিতে মহিষের পাল ভেসে থাকার দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয়

সম্প্রতি, সম্প্রতি অতি বৃষ্টি ও ভারত থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের ফলে ফেনী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি জেলার কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এই বন্যাকবলিত এলাকাগুলোর করুণ চিত্র তুলে ধরে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন ছবি এবং ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। এরই মধ্যে পানিতে মহিষের পাল ভাসার একটি দৃশ্য সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, পানিতে মহিষের পাল ভাসার দৃশ্যটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং, পুরোনো ভিডিওকে সাম্প্রতিক সময়ের দাবিতে প্রচার করা হচ্ছে।
শিশুদের নারিকেল গাছে আশ্রয় নেওয়ার এই ভিডিওটি সাম্প্রতিক বন্যার নয়

সাম্প্রতিক বন্যার পানি থেকে বাঁচতে কয়েকজন শিশু একটি নারিকেল গাছে আশ্রয় নিয়েছে দাবিতে সামাজিক মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বন্যা থেকে বাঁচতে শিশুদের নারিকেল গাছে আশ্রয় নেওয়ার ভিডিওটি সাম্প্রতিক বন্যার নয় বরং অন্তত ২০২২ সাল থেকেই এই ভিডিওটির অস্তিত্ব ইন্টারনেটে রয়েছে।
চলমান বন্যায় সড়কে ট্রাক উল্টে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার

বন্যা কবলিত এলাকায় ট্রাক উল্টে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ছবি গণমাধ্যমসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ছবিটি চলমান বন্যার ঘটনার নয় বরং ২০২২ সালের সিলেটের সুনামগঞ্জের বন্যার সময়কার ছবি উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
বন্যার দৃশ্য দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটি বাংলাদেশের নয়

বাংলাদেশে বন্যার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে।
এটি পাকিস্তানের করাচিতে অবস্থিত কালারি হ্রদের দৃশ্য।
সাম্প্রতিক বন্যায় শিশুকে নিয়ে এক যুবকের পানিতে ভেসে থাকার ভিডিও দাবিতে পুরোনো ভিডিও প্রচার

দুইজন ব্যক্তি একটি সাদা বস্তুতে একটি শিশুকে বসিয়ে গভীর পানির দিক থেকে ভেসে ভেসে কূলের দিকে নিয়ে আসছে এমন একটি ভিডিও সাম্প্রতিক বন্যার ভিডিও দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, শিশুকে নিয়ে এক যুবকের বন্যার পানিতে ভেসে থাকার আলোচিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক বন্যার নয় বরং, ভিডিওটি পুরোনো যা গত মে মাস থেকে ইন্টারনেটটে পাওয়া যাচ্ছে।
বন্যায় গবাদিপশু ভেসে যাওয়ার ভিডিওটি ফেনীর নয়

ফেনীতে সাম্প্রতিক বন্যার পানিতে গরু ভেসে যাওয়ার দৃশ্য দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, বন্যায় গরু ভেসে যাওয়ার ভিডিওটি ফেনীতে সাম্প্রতিক বন্যার নয় বরং এটি মেক্সিকোর ২০২০ সালের পুরোনো ভিডিও।
সেনাবাহিনী কর্তৃক বন্যার্তদের উদ্ধার কাজের ছবি দাবিতে পুরোনো ছবি প্রচার





বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বন্যার্তদের উদ্ধারে বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে নেমেছেন দাবিতে কয়েকটি ছবি সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে।
বন্যার্তদের উদ্ধার অভিযানে নামা সেনা সদস্যদের ছবি দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলোর অন্তত তিনটি ছবি সাম্প্রতিক সময়ের নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত ছবিগুলোর একটি ২০১৮ সালে মৌলভিবাজারে এবং একটি ২০২২ সালে সুনামগঞ্জে তোলা হয়। এছাড়াও আরেকটি ছবি ২০২২ সাল থেকেই ইন্টারনেটে বিদ্যমান রয়েছে।
নোয়াখালীতে বন্যার দাবিতে পুরোনো ও ভিন্ন ঘটনার ছবি প্রচার


নোয়াখালীতে স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যা হয়েছে দাবিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুটি ছবি প্রচার করা হয়েছে।
প্রচারিত ছবিগুলো নোয়াখালীর বন্যা পরিস্থিতি কিংবা সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং সিলেট ও ভারতের আসামের পুরোনো দুটি ছবি উক্ত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার দৃশ্য দাবিতে ছড়ালো ভারতের ছবি

বাংলাদেশের বন্যার দৃশ্য দাবি করা দুটি ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রথম ছবিতে দেখা যায়, একটি শিশু বন্যার পানিতে ভাসমান একটি পাতিলে শুয়ে আছে। দ্বিতীয় ছবিতে এক ব্যক্তিকে দেখা যায়, যিনি বন্যার পানি থেকে কিছু বিড়ালছানা বাঁচাতে মাথার ওপর বাঁশের ঝুড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, আলোচিত দুটি ছবি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বন্যার নয় বরং প্রথম ছবিটি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের চলমান বন্যার, এবং দ্বিতীয় ছবিটি ২০১১ সালে ভারতের ওড়িশা রাজ্যে সংঘটিত বন্যার দৃশ্য।
ছবিটি এআই দিয়ে তৈরি

বিশ্লেষণে ভাইরাল ছবিটি এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তবে বন্যার বাস্তব দৃশ্য প্রকৃতপক্ষে আরো করুণ।
আলোর প্রতিফলন, শিশুটির চোখের অভিব্যক্তি, কপালের ভাঁজ ও ঠোঁটের অস্বাভাবিকতা ইত্যাদি অসংগতি অনুযায়ী আপাতদৃষ্টিতে অনেকেই ভাইরাল ছবিটিকে এআই জেনারেটেড বলেই ধারণা করেছেন। তাছাড়া, এআই ছবি যাচাইয়ের বিভিন্ন ওয়েবসাইটও ছবিটিকে ৬০% থেকে ৯১% পর্যন্ত এআই বলে ফলাফল দিয়েছে।
তথ্য বিশ্লেষণ- রিউমর স্ক্যানার এর বিভিন্ন সংবাদ থেকে