ঢাকা | রবিবার
২৪শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৯ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শ্রীপুরে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বসতবাড়ীতে হমালা-ভাংচুর

গাজীপুরের শ্রীপুরে স্কুল পড়–য়া মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাব ও ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় বসতবাড়ীতে হমালা, ভাংচুর, লুটপাট ও পরিবারের সদস্যদেরকে মারপিট করে বাড়ী থেকে বের করে দিয়েছে বখাটেরা। ঘটনার পর থেকে মেয়ে ও ছোট ছেলেকে নিয়ে তারা বিভিন্ন এলাকায় স্বজনদের বাড়ীতে রাত যাপন করছে। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা পারভীন আক্তার বাদী হয়ে (০৯ জুলাই) শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। গত ০৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের পটকা গ্রামে পোশাক শ্রমিক জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ীতে এ ঘটনা ঘটে।

রবিবার (১১ আগস্ট) দুপুরে কয়েকজন সংবাদিক শ্রীপুর থানায় গেলে ভুক্তভোগীর সাথে কথা বললে তারা সাংবাদিকদের কাছে বিচার দাবী করেন।

অভিযুক্তরা হলো পটকা গ্রামের ইয়াকুব আলীর ছেলে মামুন (২০), মোমিন উল্লাহর ছেলে বাপ্পি (২২), শহিদুল ইসলামের ছেলে জাহিদ (১৯)।

ভুক্তভোগী পারভীন আক্তার জানান, গত প্রায় ২০ বছর আগে তার স্বামী বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুদ্দিনের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমকে নিয়ে নোয়াখলীর কমলনগর উপজেলার চরফলকন (জাজিরা) গ্রাম থেকে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোসিংগা ইউনিয়নের পটকা গ্রামে এসে বসবাস করতে থাকেন। তার স্বামী ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার রাসেল সোয়েটার পোশাক কারখানায় ফিনিশিং সুপারভাইজার পদে চাকরি করেন। তাদের স্কুল পড়–য়া মেয়ে (১৪) এবং ছেলে (১২) রয়েছে। তার মেয়ে স্কুলে আসার পথে মামুন প্রতিদিন তাকে প্রেমের প্রস্তাব দিতো। তার প্রস্তাবে রাজি না হলে স্থানীয় বখাটে মামুন, বাপ্পি, জাহিদসহ তাদের ৮/১০ জন সহযোগী তার মেয়েকে উঠিয়ে নেয়ার হুমকি দেয়। এ ঘটনায় শ্রীপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের এবং ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিদের জানালে কেউ সমাধানে এগিয়ে আসেনি। তাদেরকে জানানোর খবর পেয়ে মামুন স্থানীয় বখাটে বাপ্পি, জাহিদসহ তাদের ৮/১০ জন সহযোগীকে নিয়ে ০৮ জুলাই রাত সাড়ে ৯টায় তার বাড়ীতে হামলা করে। এসময় তার স্বামী জাহাঙ্গীর কর্মস্থলে ছিল। তারা পারভীন আক্তারকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে এবং তার মেয়েকে জামা-কাপড় ছিড়ে শ্লীলতাহানী করার চেষ্টা করে। অস্ত্রের আঘাতে হামলায় আহত পারভীন আক্তার দীর্ঘ ১৮ দিন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। এসময় হামলাকারী বখাটেরা বাড়ীর সকল আসবাবপত্র ভাংচুর করে নগদ ৭০ হাজার টাকাসহ মূল্যবান মালামাল লুটে নেয়। ঘটনার পর থেকে ওই পরিবার তাদের দুই সন্তানকে নিয়ে বিচারের আশায় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে ধরনা দিচ্ছে। তাদেরকে আবার হামলা করার ভয়ে তারা বাড়ী ছেড়ে একেকদিন একেক আতœীয়ের বাড়ীতে রাত যাপন করছেন। বিষয়টি স্কুলের প্রধান শিক্ষককে জানালে তিনি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বরাবর লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দিলে তারা সেখানেও অভিযোগ করে। পরে ইউএনও থানায় ফোন দিয়ে ওসি সাহেবকে ব্যবস্থা নেয়ার কথা বললেও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। উল্টো থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সোহেল রানা অভিযুক্তকে পাগল বলে থানা থেকে বারবার তাড়িয়ে দেয়।

রবিবার (১১ আগস্ট) সাংবাদিকেরা থানায় গেলে ভুক্তভোগীর সামনে জিজ্ঞাসা করলে অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) সোহেল রানা থানার পরিবেশ স্বাভাবিক হলে মামলা নেওয়ার প্রতিশ্রæতি দেন। ঘটনার প্রায় দেড় মাস হয়ে গেলেও কেন ব্যবস্থা নেননি জানতে চাইলে তিনি বলেন উপ-পরিদর্শক (এসআই) আমিনুর রহমান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তারপর থেকে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন