সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালে ঘোষিত কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে বৃহস্পতিবার (০৪ জুলাই) বেলা ১১টায় ফের রাজপথে অবস্থান কর্মসূচি পালন করার ঘোষণা দিয়েছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (০৩ জুলাই) শাহবাগে দ্বিতীয় দিনের মতো অবস্থান কর্মসূচি পালন শেষে এই ঘোষণা দেয় তারা।
এদিন লাগাতার আন্দোলনের অংশ হিসেবে বেলা আড়াইটায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে থেকে মিছিল বের করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি চত্বর-টিএসসি-হাইকোর্ট-মৎস্যভবন হয়ে শাহবাগে অবস্থান করেন তারা। সেখানে বিকেল পৌনে ৪টা থেকে পৌনে ৫টা পর্যন্ত অবস্থান করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আজকের কর্মসূচিতে নারী শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিলো উল্লেখযোগ্য। অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুরো শাহবাগ এরিয়াতে যান চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ জনগণ গাড়ি ছেড়ে হেঁটে গন্তব্যের দিকে যেতে থাকেন। তবে অ্যাম্বুলেন্স নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য জায়গা করে দেয় শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষার্থীদের মুখে এসময় ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’- ইত্যাদি স্লোগানে মুখরিত ছিল শাহবাগ এলাকা। পাশাপাশি অবরোধ কর্মসূচিতে বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থী বক্তব্য দেন।
এসময় ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা। দাবিসমূহ হলো :
১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা।
২. পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠনপূর্বক দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরির সমস্ত গ্রেডে অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেয়া (সুবিধাবঞ্চিত ও প্রতিবন্ধী ব্যাতীত)।
৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেয়া।
৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহন করা।
মুক্তিযোদ্ধারা কোনো বৈষম্য চায়নি। তারা চেয়েছিল সবার অধিকার নিশ্চিত করতে উল্লেখ করে গণমাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান ঢাবির গনিত বিভাগের শিক্ষার্থী ফারাবী রহমান শ্রাবণ বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা চেয়েছিল সাম্য, সুযোগের সমতা।কিন্তু সরকারি চাকরিতে এই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা কখনোই সবার অধিকার নিশ্চিত করে না। আমি মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হিসেবে সকল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আপনারা দয়া করে শিক্ষার্থীদের এই ন্যায্য দাবির পাশে দাঁড়ান। এছাড়াও সমাজ বিভাগের শিক্ষার্থী নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা দেড় ঘণ্টা শাহবাগ মোড় অবরোধের পর আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করছি। আগামীকাল হাইকোর্ট এই কোটা পুনর্বহালের রায় প্রদান করবে। তাই আমরা আগামীকাল সকাল ১১টায় আমাদের অবস্থান কর্মসূচি শুরু করবো। এ সময় আমরা সেন্ট্রাল লাইব্রেরির সামনে অবস্থান গ্রহণ করবো। যদি হাইকোর্টের এই রায় আমাদের বিরুদ্ধে যায় তাহলে আমরা সে অনুযায়ী নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বাধ্য হবো।