ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে ফিরল ১০০ টনের বেশি স্বর্ণ!

যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে ফিরল ১০০ টনের বেশি স্বর্ণ!

ব্রিটিশ শাসনকালে ভারত থেকে বিপুল স্বর্ণ নিয়ে যান ইংরেজরা। প্রায় দু’শ বছরের পরাধীনতায় ভারত ঠিক কত পরিমাণ স্বর্ণ খুইয়েছে, স্পষ্টভাবে এর কোনো হিসাব নেই। তবে সেই ইংরেজদের দেশ থেকে এবার টনে টনে স্বর্ণ ফিরিয়ে আনার খবর সাধারণ মানুষের মনে কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি ইংরেজদের নিয়ে যাওয়া স্বর্ণই ভারত ফিরিয়ে এনেছে। এর উত্তর হচ্ছে, না। যুক্তরাজ্য জমা রাখা নিজেদের স্বর্ণই ফিরিয়ে আনছে ভারত।

যুক্তরাজ্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ‘ব্যাংক অফ ইংল্যান্ড’ ডলার পাওয়ার বিনিময়ে এসব স্বর্ণ বন্ধক রাখা হয়েছিল। এখন এসব স্বর্ণ স্থান পাবে ভারতের কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ ব্যাংক অব ইন্ডিয়ার (আরবিআই) ভল্টে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, ইতোমধ্যে ১০০ মেট্রিক টন স্বর্ণ যুক্তরাজ্য থেকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

যুক্তরাজ্যের কোথায় জমা ছিল এসব স্বর্ণ?

জানা যায়, ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের ভূগর্ভস্থ ৯টি বিশালাকার ভল্টের শেলফে সারিবদ্ধ করে সাজানো থাকে এসব স্বর্ণের বার। শুধু ভারত নয়, বিভিন্ন দেশের স্বর্ণও ওই ভল্টে জমা থাকে। তবে কেউ চাইলেই পরিদর্শনে জন্য ওইসব ভল্টে যেতে পারেন না। একমাত্র ইংল্যান্ডের রাজা বা রানিই ওই ভল্টে যেতে পারেন এবং জমা সোনা দেখতে পারেন। অনেকের মনে প্রশ্ন উঠে, কেন ভারতকে স্বর্ণ রাখতে হয় এক সময়কার ঔপনিবেশিক শক্তি ইংল্যান্ডের কাছে? যে ইংরেজ শাসকরা প্রায় দুইশত বছর এই উপমহাদেশ শোষণ করেছেন, তাদের কাছেই স্বর্ণ রাখতে হলো কেন ভারতকে। ১৯৪৭ সালে দেশবিভাগের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনের পর থেকে নয়াদিল্লির মধ্যে একটি ভীতি জন্ম নেয়।

আশঙ্কা করা হয়, ভারতের বাজারে যদি আর কোনো বিদেশি কোম্পনিকে ব্যবসা করতে দেয়া হয়, তবে হয়তো ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির মতোই তারা এই অঞ্চলের ক্ষমতা ফের কুক্ষিগত করে ফেলবে। তাই ভারতের বাজার সীমাবদ্ধ রাখা হয়। এমন সিদ্ধান্ত ধীরে ধীরে ভারতকে অর্থনৈতিক সংকটের দিকে ঠেলে দিতে থাকে। এক দিকে ভারতের বাজারে বিদেশি সংস্থার প্রবেশ নিষেদ (‘নো এন্ট্রি’), অন্য দিকে বিদেশ থেকে বিভিন্ন পণ্যের আমদানির কারণে ভারতের আর্থিক ভান্ডারে টান পড়তে শুরু করে। রপ্তানির চেয়ে আমদানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়।

ভারত মূলত জ্বালানি তেল আমদানি করে থাকে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোই এর অন্যতম উৎস। ১৯৯১ সালের আগে ভারতে প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেলের সিংহভাগই আসত ইরাক থেকে। এদিকে নব্বইয়ের দশকের গোড়ার দিকে কুয়েত দখল ইস্যুতে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে ইরাক। সেইসঙ্গে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের চোখরাঙানি। সব মিলিয়ে তেলের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। ভারতে তেলের সঙ্কট দেখা দেয়। তেল কিনতে প্রয়োজন হয় বিপুল ডলার। কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ভারতের মুদ্রা চলে না। কীভাবে ডলার পাওয়া যাবে তার পথ খুঁজতে থাকে তখনকার সরকার। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) এবং বিশ্ব ব্যাংক থেকে ডলার নেয়া ছাড়া উপায় ছিল না নয়াদিল্লির। কিন্তু সেখান থেকে ডলার নিতে গেলে মেনে চলতে হত তাদের দেয়া শর্ত। অনেকের মতে, আইএমএফ হোক বা বিশ্ব ব্যাংক, নামে স্বতন্ত্র হলেও তাদের উপর যুক্তরাষ্ট্রেরই একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ। ভারত সেই সময় বিকল্প পথ খুঁজতে থাকে। তখনই স্বর্ণ বিদেশি ব্যাংকে রাখার পরিকল্পনা মাথায় আসে সরকারের। তবে ওয়াশিংটনের দৃষ্টি এড়িয়ে স্বর্ণ অন্য কোনো বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখাই ছিল অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

আরও জানা যায়, গোপনে নিজেদের স্বর্ণ ব্যাংক অব ইংল্যান্ড এবং ব্যাংক অব জাপানের কাছে জমা রাখে ভারত। তার বিনিময়ে ডলার নেয়। এই পুরো অপারেশনটা ভারত সরকার গোপনে করার চেষ্টা করলেও কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে তা ফাঁস হয়ে যায়। বিদেশে জমা রাখা স্বর্ণই ভারত ফেরাতে শুরু করেছে। ভারতের কাছে এখন রয়েছে ৮২২ মেট্রিক টন স্বর্ণ। বিগত পাঁচ বছরে ভারত ২০৩ দশমিক ৯ মেট্রিক টন সোনা কিনেছে। তার মধ্যে কিছু মজুত রয়েছে যুক্তরাজ্যেরর আরবিআইয়ের কাছে। কিছু অন্য বিদেশি ব্যাংকে জমা রাখা হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন