৬ষ্ঠ বিরল উপজেলা পরিষদ নির্বাচন-২০২৪ এর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে বাবু এর বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। ১৯ মে ২০২৪ দুর্নীতি দমন কমিশন দিনাজপুর কার্যালয়ে তার বিরুদ্ধে ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বাবু শ্রী সতিশ চন্দ্র রায় এর পিএ এর পদ ব্যবহার করে আদম ব্যাপারী হিসেবে অর্থ আত্মসাৎ, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরী নিয়োগে বাণিজ্য, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছানোর কাজে গ্রাহককে জিম্মি করে অবৈধ অর্থ আদায়, ভেজাল পণ্য মোড়কজাত করে বিপণনের সময় র্যাব এর অভিযানে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল-জরিমানা, বিএমডিএ এর পরিচালক পদে থেকে অর্থ আত্মসাৎ, দিনাজপুর পৌরশহরে কোটি টাকার বাড়ী, ঢাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে দোকানের মালিক হওয়াসহ নানাবিধ অভিযোগে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। তিনি বর্তমানে জেলা আওয়ামীলীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক।
আদম ব্যাপারী বাবু
আবেদনকারী দুদক কার্যালয়ে দায়েরকৃত অভিযোগে জানান, ১৯৯৬ সালে আওয়ামীলীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর এ সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য ও তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী বাবু শ্রী সতিশ চন্দ্র রায় এর পিএ এর পদ ব্যবহার করে আদম ব্যাপারী হিসেবে সৌদী আরবে পাঠানোর জন্য উপজেলার ১৭ জন যুবকের প্রত্যেকের কাছ থেকে ২ লাখ করে মোট ৩৪ লাখ অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগে রাজধানী ঢাকা’র রমনা থানায় মামলা দায়ের হয়। পুলিশ মিন্টো রোডে প্রতিমন্ত্রীর বাসভবনে পিএ বাবুকে খোঁজ করতে গেলে সে আত্মগোপন করে। ক্ষোভে প্রতিমন্ত্রী তাঁকে বহিষ্কার করে। স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ তাঁর পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ২ বিঘা জমি বিক্রয়ের অর্থ দিয়ে সেই মামলা থেকে তাঁকে রক্ষা করেন।
নিয়োগ বাণিজ্য
অভিযোগে আরো জানান, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক পদ ব্যবহার করে ২০১৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৩৯ টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরী কাম নৈশ্য প্রহরী নিয়োগে ১৩ লাখ করে অর্থ প্রত্যেক নিয়োগ প্রত্যাশীদের নিকট হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। সে সময় ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ দলীয় কোন নেতাকর্মীর সুপারিশ তিনি কর্ণপাত করেননি। আবার জগতপুর কলেজ এর গভর্নিং বডির সভাপতির দায়িত্বে থাকাকালীন কলেজ ফান্ডের প্রায় ২৪ লাখ অর্থ আত্মসাৎ করে তৎকালীন অধ্যক্ষকে মামলার বেড়াজালে পতিত করে নিজেই আর্থিক সুবিধা ভোগ করছেন। এছাড়াও বিভিন্ন পদে নিয়োগ এর জন্য কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন কৌশলে।
ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ নামে অর্থ আত্মসাৎ
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ বিনামূল্যে পৌঁছে দেয়ার ঘোষণা দেয়ার পর হতে তিনি দিনাজপুর শহরের লিলি মোড়ে ইলেক্ট্রিক মালামালের দোকান দিয়ে বসেন এবং বাধ্যতামূলকভাবে তাঁর দোকান থেকে মালামাল তুলতে সকলকে চাপ প্রয়োগ করেন। এ নিয়ে বিদ্যুৎ শ্রমিকরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে স্থানীয় সংষদ সদস্যকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা না খেয়ে আছি। কাজ করতে পারছি না। সংসদ সদস্য জানতে চান কেন কি হয়েছে। তখন বিদ্যুৎ শ্রমিকরা জানায় আপনার দলের সাধারণ সম্পাদক এর দোকান থেকে মালামাল ক্রয় না করলে সেই সংযোগ উদ্বোধন করা হয় না। বাহিরে যে মালামাল ১৬০০ টাকা সেই একই মালামাল উনার দোকানে ২২০০ টাকায় কিনতে হয়! তাই গ্রাহকদের জিম্মি করে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ায় আমরা না খেয়ে আছি।
ভেজাল পণ্য মোড়কজাত করে বিপণন
অভিযোগে তিনি আরো জানান, দিনাজপুর শহরের অন্ধ হাফেজ মোড়ে তৃপ্ত ফুড এন্ড বেভারেজ নামক প্রতিষ্ঠানের মোড়কে ভেজাল পণ্য (সয়াবিন তেল, জুস, চকলেট) মোড়কজাত করে বিপণনকালে গত ১ আগস্ট ২০১৫ খ্রিস্টাব্দে র্যাব-১৩ এর অভিযানে বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়াই খোলা সয়াবিন তেল, সরিষার তেল বোতলজাত ও ভেজাল জুস, চকলেট, মুড়ি প্রভূতি খাদ্য দ্রব্য বিপণনের দায়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুকে ২ লাখ টাকা জরিমানা এবং এর ব্যবস্থাপককে ৬ মাসের কারাদন্ড ও ৮০ হাজার টাকা জরিমানা করে। সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাম্প্রতিক সময়ে আবারো ভাইরাল হয়েছে।
সরকারি বাসভবনকে গোয়াল ঘরে পরিণত
এছাড়াও অভিযোগে বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান এর সরকারি বাসভবনে তিনি না থেকে দিনাজপুর শহরের অন্ধ হাফেজ মোড়ের বাসায় তিনি বসবাস করেন। আর বিরল উপজেলা পরিষদের সরকারি বাসভবনে না থাকার সুবাদে তিনি এখানে দুগ্ধজাত গরু পালন শুরু করলে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়। আর সে অভিযোগের বার বার তদন্তের নোটিশ দিয়েও জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক চাপের মুখে তদন্ত কাজ বছরে পর বছরেও সম্পন্ন করতে পারেননি।
বিএমডিএ এর পরিচালক পদে থেকে অর্থ আত্মসাৎ
সাম্প্রতিক বিষয়ে অভিযোগে বলেন, বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) এর পরিচালক পদে দায়িত্ব পালনকালে
নামমাত্র প্রকল্প তৈরী করে কোটি কোটি অর্থ আত্মসাতের অভিযোগের তদন্ত চলমান রয়েছে। যার প্রেক্ষিতে বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩২৯ কোটির প্রকল্পে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) শহিদুর রহমান এর বিরুদ্ধে দুদক মাঠে নেমেছে।
বাড়ী-ফ্ল্যাট-দোকান
অভিযোগকারী তাছাড়াও বলেন, একেএম মোস্তাফিজুর রহমান বাবু রাজনীতিটাকেই পেশা হিসেবে গ্রহণ এবং প্রতিষ্ঠিত করে সম্পদশালী হয়েছেন। তিনি রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে অন্য কোন পেশায় না থেকেও দিনাজপুর শহরে কোটি টাকা মূল্যের বাড়ী, রাজধানী ঢাকা শহরে ২ টি বিলাসবহুল ফ্লাট ও উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মার্কেটে ৬ টি দোকানের মালিকানা গড়ে তুলেছেন।
উল্লেখিত অভিযোগে অভিযুক্ত এ কে এম মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগকারী তদন্ত সাপেক্ষে এলাকাবাসী বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এ বিষয়ে তাঁর সাথে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে ব্যর্থ হয়েছে এই প্রতিবেদক।