ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না, বাড়বে সর্বোচ্চ করহার

করমুক্ত আয়সীমা বাড়ছে না, বাড়বে সর্বোচ্চ করহার

উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির ফলে জীবনযাত্রার ব্যয় যেখানে ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, সেখানে নতুন করে ব্যক্তিশ্রেনীর করমুক্ত আয়সীমা স্বস্তি দিচ্ছে না। সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) মতে, বর্তমান মুদ্রাস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে। এমন পরিস্থিতিতে নিম্ন মধ্যবিত্তের মতো একটি শ্রেণির করের বোঝা হ্রাস করতে অর্থনৈতিক ও ব্যবসায়িক প্রায় সব সংগঠনের দাবি ছিল করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করা।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি না করার চিন্তাভাবনা করছে। ফলে, সাধারণ মানুষের এমন অস্বস্তি থেকে সহসা মুক্তি মিলছে না।

তবে, উচ্চ আয়ের করদাতা অর্থাৎ ধনিক শ্রেণির কাছ থেকে আরও কর আদায়ে সর্বশেষ স্তরের করহার ২৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। এর মাধ্যমে আয়করে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছে আয়কর বিভাগ।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা গণমাধ্যমকে বলেন, বিভিন্ন মহলের প্রস্তাব ও চাপ থাকা সত্ত্বেও করমুক্ত আয়সীমা বৃদ্ধি করার আপাতত পরিকল্পনা নেই। যদি করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে ৩ লাখ থেকে আরও বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে করদাতাদের বড় একটি অংশ আওতার বাইরে চলে যাবে। অন্তত কয়েক লাখ করদাতা করনেটের বাইরে চলে যাবে। যা এনবিআরের জন্য স্বস্তির বিষয় নয়। আমাদের প্রধান উদ্দেশ্যই কর ও করনেট বৃদ্ধি করা। এই অবস্থায় উচ্চবিত্তের ওপর করহার আরও বৃদ্ধি করার প্রস্তাব আসছে। কারণ ওই শ্রেণিকে একটু বাড়তি কর দিতে হলে সেটি সাধারণ মানুষের জন্য কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবে না। বরং আয়-বৈষম্য কিছুটা হলেও হ্রাস পাবে।

মূল্যস্ফীতির কারণে সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় করমুক্ত আয়সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছিল দেশের শীর্ষ বাণিজ্য সংগঠন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই)। সংগঠনটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বর্তমান মূল্যস্ফীতি এবং নিম্ন আয়ের মানুষের প্রকৃত আয় বিবেচনায় নিয়ে আমরা ব্যক্তি শ্রেণির করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং সিনিয়র সিটিজেন ও নারীদের জন্য ৫ লাখ টাকা নির্ধারণের সুপারিশ করেছি। বর্তমানে প্রায় এক কোটি টিআইএনধারী রয়েছে। এর মধ্যে আনুমানিক ৩৫-৪০ লাখ মানুষ আয়কর রিটার্ন দাখিল করে। বাকিদের আয়কর রিটার্ন দাখিলের আওতায় আনা দরকার।

জানা যায়, বর্তমানে দেশে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। নারী ও ৬৫ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়সের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ টাকা। প্রতিবন্ধীদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য করমুক্ত আয়সীমা ৫ লাখ টাকা। তৃতীয় লিঙ্গের করদাতাদের করমুক্ত আয়সীমা ৪ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী আয়ের প্রথম ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকার ওপর কোনো কর দিতে হবে না। পরবর্তী ১ লাখ টাকার ওপরে করদাতাকে ৫ শতাংশ, এর পরের ৩ লাখ টাকায় ১০ শতাংশ, পরবর্তী ৪ লাখ টাকায় ১৫ শতাংশ, পরবর্তী ৫ লাখ টাকার ওপর ২০ শতাংশ ও বাকি আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হবে। আসছে প্রস্তাবনায় ৫ লাখ টাকার ওপরের আয়ের ওপর করহার ২৫ থেকে বৃদ্ধি করে ৩০ করার চিন্তাভাবনা করছে এনবিআর।

আয়কর আইন অনুযায়ী, করমুক্ত আয়সীমা অতিক্রম করলেই ন্যূনতম কর দিতে হবে। সে ক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি এবং চট্টগ্রাম সিটির করদাতাদের ৫ হাজার টাকা; অন্য সিটির করদাতারা ৪ হাজার টাকা এবং অন্য এলাকার করদাতাদের ন্যূনতম ৩ হাজার টাকা কর বাধ্যতামূলক। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ১ কোটির বেশি কর শনাক্তকরণ নম্বরধারী (টিআইএনধারী) আছেন। তাদের মধ্যে ৪০ লাখ টিআইএনধারী আয়কর রিটার্ন জমা দিয়েছেন। নিয়ম অনুযায়ী এখন ৪৪ ধরনের সেবা পেতে আয়কর রিটার্ন স্লিপ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ফলে ক্রমাগতভাবে রিটার্ন জমা দেওয়া মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়সীমা ৩ লাখ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছিল। এর আগে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে করমুক্ত আয়ের সীমা আড়াই লাখ থেকে বাড়িয়ে ৩ লাখ টাকা করা হয়। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ২ লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে আড়াই লাখ টাকা করা হয়েছিল।

সংবাদটি শেয়ার করুন