বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্বের ৭০ শতাংশের বেশি শ্রমিক। কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান যে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা (ওএসএইচ) রয়েছে তা এই ঝুঁকি সামলাতে যথেষ্ট নয়। শুধু তাই নয়, অতি গরমে বিশ্বজুড়ে প্রতিবছর ১৮ হাজার ৯৭০ জন শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রকাশিত ‘জলবায়ু পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা ও স্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে সোমবার (২২ এপ্রিল) এসব তথ্য উঠে এসেছে।
বিশ্বের প্রায় সব অঞ্চলেই জলবায়ু পরিবর্তন কর্মীদের সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের ওপর মারাত্মক ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আইএলওর ২০২০ সালে সমীক্ষা অনুযায়ী, গোটা বিশ্বের ৩৪০ কোটি শ্রমিকদের মধ্যে ২৪০ কোটির বেশি শ্রমিক কর্মক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে তাপদাহের ঝুঁকিতে রয়েছেন। ২০০০ সালে যেখানে এই ঝুঁকিতে ছিল ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশ শ্রমিক, বর্তমানে তা বেড়ে ৭০ দশমিক ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
মাত্রাতিরিক্ত তাপপ্রবাহের কারণে প্রতিবছর দুই কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার শ্রমিক পেশাগত দুর্ঘটনার শিকার হন উল্লেখ করে প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, তাঁদের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৭০ জন মারা যান ও ২০ লাখ ৯০ হাজার শ্রমিক পঙ্গু হয়ে জীবনের মূল্যবান সময়গুলো হারান। ২০২০ সালের আরেকটি জরিপে দেখা গেছে, কর্মক্ষেত্রে তাপদাহের শিকার হয়ে বিশ্বজুড়ে দুই কোটি ৬২ লাখ মানুষ দীর্ঘস্থায়ী কিডনি রোগে ভোগেন।
সংস্থাটি বলেছে, তাপদাহ ছাড়াও শ্রমিকদের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের নানা প্রভাব রয়েছে। এসব প্রভাব শ্রমিকদের ওপর ‘বিপদের পাহাড়’ সৃষ্টি করছে। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়ছেন। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কর্মীদের মধ্যে স্বাস্থ্যগত যেসব ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে তার মধ্যে রয়েছে ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার রোগ, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা, কিডনি অকেজো হওয়া এবং মানসিক সমস্যা।
প্রতিবেদনে উল্লেখিত বিপজ্জনক প্রভাবগুলো হলো—প্রতিবছর বিশ্বের ১৬০ কোটি শ্রমিক অতিবেগুনি রশ্মির ক্রিয়ায় ননমেলানোমা স্কিন ক্যানসারে আক্রান্ত হন। তাঁদের মধ্যে ১৮ হাজার ৯৬০ জন মৃত্যুমুখে পতিত হন। প্রতিবছর কর্মক্ষেত্রে বায়ুদূষণের শিকার হন ১৬০ কোটি শ্রমিক। তাঁদের মধ্যে আট লাখ ৬০ হাজার জন পেশাগত কারণেই মারা যান।
কৃষি খাতে কীটনাশকের ঝুঁকিতে রয়েছে ৮৭ কোটির বেশি শ্রমিক। এতে দেখা যায়, কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় বছরে তিন লাখের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে। এ ছাড়া বছরে ১৫ হাজারের বেশি শ্রমিকের মৃত্যু ঘটছে জীবাণুবাহিত ও সংক্রামক ব্যাধির কারণে।
এটি স্পষ্ট যে, জলবায়ু পরিবর্তন এরই মধ্যে শ্রমিকদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করেছে। এসব সতর্কতা আমাদের আমলে নেওয়া উচিত উল্লেখ করে আইএলওর ওএসএইচ টিমের প্রধান মানাল আজ্জি বলেছেন, জলবায়ু পরিবর্তন প্রতিরোধী নীতি গ্রহণের সময় আমাদের অবশ্যই শ্রমিকদের পেশাগত সুরক্ষা ও স্বাস্থ্যের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শুধু নীতি গ্রহণ নয়, পাশাপাশি কাজও করতে হবে। শ্রমিকদের জন্য নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশ আইএলওর মৌলিক নীতিমালার মধ্যেই রয়েছে। সুতরাং আমাদের সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে হবে বলে জানান তিনি। এছাড়া, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বর্তমানে বিভিন্ন দেশের কর্মকাণ্ডও প্রতিবেদনটিতে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে নতুন আইন, প্রবিধান এবং নির্দেশিকা সংশোধন বা তৈরি করা। একই সঙ্গে কাজের পরিবেশে উন্নত করতে জলবায়ু প্রশমন কৌশল গ্রহণ করা।