শুক্রবার, ২০শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ৫ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বুয়েটের ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে: অনলাইন সমীক্ষা

বুয়েটের ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থী ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অনলাইন সমীক্ষা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা অনলাইনে একটি সমীক্ষা চালিয়েছেন। এতে প্রায় ৬ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে পরিচালিত সমীক্ষায় দেখা গেছে, ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীর ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান জানিয়েছেন।

বুধবার (০৩ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক মহল দ্বারা প্রভাবিত হাতেগোনা কয়েক জন বর্তমান এবং সাবেক শিক্ষার্থী, সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ আনছে উল্লেখ করে উক্ত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রমাণ ছাড়া এমন বানোয়াট অভিযোগেরও তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। আশা করছি, তাঁরা ক্ষুদ্র স্বার্থচিন্তা থেকে সরে এসে বৃহত্তর স্বার্থকে গ্রহণ করে নেবেন। দুই দিনব্যাপী অনলাইন জনমত জরিপের জন্য তাঁরা নিজ নিজ ইনস্টিটিউশনাল ই–মেইল ব্যবহার করে ছাত্ররাজনীতির পক্ষে–বিপক্ষে অনলাইনে ভোট গ্রহণ করেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

জনমত জরিপে অংশ নেওয়া ৫ হাজার ৮৩৪ জন। যাদের মধ্যে ছাত্ররাজনীতির বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন ৫ হাজার ৬৮৩ জন। অর্থাৎ ৯৭ শতাংশ শিক্ষার্থীই ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান করছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, বুয়েটে ছাত্ররাজনীতিবিহীন ক্যাম্পাসের পক্ষে আন্দোলনে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গোষ্ঠীর মিথ্যা তথ্য অপপ্রচার ও আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার বিভিন্ন চেষ্টা দেখা গেছে। শুরু থেকেই এখন পর্যন্ত তাঁদের দাবির বিপরীতে বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে এবং অপপ্রচার চালানো হচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ২০২০–এর জুলাই মাসে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি লঙ্ঘন করে ছাত্রদল যখন বুয়েটে তাদের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করে, তখনো আমাদের তৎকালীন অগ্রজ ব্যাচ ‘পৌনঃপুনিক ১৫’ তাদের এই কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ করে এবং ভিসি স্যার বরাবর ত্বরিৎ পদক্ষেপ গ্রহণের আবেদন করে। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা তখনো এর প্রতিবাদ জানাই এবং সামনেও আমরা ক্যাম্পাসে সকল ধরনের ছাত্ররাজনীতি প্রবেশের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা অব্যাহত রাখব। পরবর্তীতে অন্য কোনো সংগঠনও যদি এমন বক্তব্য দিয়ে আমাদের আন্দোলনের দাবি এবং অবস্থানকে ঘোলাটে করার অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়, তবে আমরা তাদেরও প্রত্যাখ্যান করব। আমরা আবারও সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে চাই, আমাদের অবস্থান কোনো একক ছাত্রসংগঠনের বিরুদ্ধে নয়। আমরা ছাত্ররাজনীতিই ক্যাম্পাসে প্রবেশের বিরুদ্ধে। অতএব এটি করতে চায় এমন যেকোনো সংগঠনের বিরুদ্ধেই আমাদের অবস্থান সমান এবং অনড়। শিক্ষার্থীরা বলেন, হিযবুত তাহ্‌রিরের মতো নিষিদ্ধ মৌলবাদী সংগঠনের অস্তিত্বকেই আমরা সমর্থন করি না। সেখানে এরূপ নিষিদ্ধ সংগঠনের সমর্থন বা সহানুভূতি গ্রহণ করার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্যাম্পাসে সব দলের ও মতের লেজুড়বৃত্তিক সাংগঠনিক রাজনীতি এবং মৌলবাদী দলসমূহের বিপক্ষে আছি এবং থাকব।

আরও পড়ুনঃ  উপকুলে ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’ আতংক

তারা জানান, আমাদের এই অবস্থান সকল দল ও মতের ছাত্ররাজনীতির ক্ষেত্রেই সমানভাবে প্রযোজ্য। বুয়েটে বর্তমানে কোনো লেজুড়বৃত্তিক ছাত্র রাজনৈতিক দলেরই কার্যক্রম নেই। পাশাপাশি আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনগুলোর অপতৎপরতার বিরুদ্ধে দেশের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক প্রতিষ্ঠানগুলোর সোচ্চার ভূমিকার প্রতি সর্বদাই আস্থাশীল এবং সহযোগিতাপূর্ণ। যে ছাত্ররাজনীতিমুক্ত বুয়েট ক্যাম্পাস শতশত ছাত্রদের ভোগান্তি, আর্তনাদ অবশেষে সনি আপু, দ্বীপ ভাই এবং আবরার ভাইয়ের রক্তের বিনিময়ে আমরা অর্জন করেছি, কোনো রাজনৈতিক অপতৎপরতায় আমরা সেই অর্জন হারাতে রাজি নই। তাই আমাদের বর্তমান আন্দোলনে হস্তক্ষেপ অথবা আন্দোলনকে পুঁজি করে যেকোন স্বার্থ সিদ্ধির চেষ্টা এবং একই সঙ্গে আন্দোলনের প্রেক্ষাপটকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার যেকোনো সম্ভাব্য প্রচেষ্টাকে আমরা ধিক্কার জানাই। এসময় শিক্ষার্থীরা আরো বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা আমাদের সঙ্গে রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন