কর্ণফুলী নদীতে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিলের গোডাউনে অগ্নিকাণ্ডে পুড়ে যাওয়া কাঁচামাল মেশার পর নদীর পানিতে অ্যাসিডের অস্তিত্বের প্রমাণ পেয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। ফলে নদীর পানি মৎস্য ও জলজ প্রাণীর অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (৭ মার্চ) চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার ইছানগরে এস আলম রিফাইন্ড সুগার মিল পরিদর্শনে এসে এ তথ্য জানিয়েছেন পরিবেশ অধিদপ্তর, চট্টগ্রামের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার।
পরিবেশ অধিদপ্তরের এই উপ-পরিচালক বলেন, দুদিন আগে আমাদের একটি টিম সুগার মিলের গোডাউন থেকে নদীতে যাওয়া পানি কর্ণফুলী নদীর পানির নমুনা সংগ্রহ করে। এখন পর্যন্ত আমরা একটি উপাদানের পরীক্ষা শেষ করতে পেরেছি। পরীক্ষায় দেখতে পেয়েছি পানিতে অ্যাসিড রয়েছে। পানির যে স্ট্যান্ডার্ড মান তার চেয়ে নিচের দিকে রয়েছে। এ অবস্থায় জলজ প্রাণীদের বেঁচে থাকা কঠিন। তাই ওগুলো জলজ প্রাণী) পানিতে ভেসে উঠছে। সব পরীক্ষা শেষ হতে পাঁচদিন লাগবে। রিপোর্ট হাতে পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি তদন্ত কমিটিকে এ রিপোর্ট দেওয়া হবে।
এদিকে চট্টগ্রামে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অনতিবিলম্বে চিনিকলের গোডাউনের পোড়া বর্জ্য নদীতে ফেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, এখনো পোড়া চিনি মিশ্রিত লাভা নদীতে যাচ্ছে। আমরা কারখানা কর্তৃপক্ষকে এই মুহূর্তে বর্জ্য মিশ্রিত পানি নদীতে ফেলা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছি। তারা তাদের কারখানার আশপাশে এ বর্জ্য মেশা পানি ফেলার ব্যবস্থা করবেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, পোড়া চিনির লাভায় কালো রঙ ধারণ করেছে কর্ণফুলীর পানি। পাশের নালা বেয়ে নদীতে মিশছে শত শত কিউসেক বর্জ্য মেশা পানি। পোড়া চিনির গন্ধে দূষিত হচ্ছে বাতাস। কর্ণফুলী নদীর পানিতেও মরা মাছ ভাসতে দেখা যায়। মঙ্গলবার রাতে এস আলম সুগার মিলের দেয়াল কেটে পোড়া লাভা মিশ্রিত পানি পাশের নালাতে ছেড়ে দিলে তা নদীতে এসে পড়তে শুরু করে। এ সময় নদীতে জোয়ার থাকায় ওই বর্জ্য জোয়ারের পানিতে ভেসে কালুরঘাট পার হয়ে হালদা নদী পর্যন্ত গিয়ে পৌঁছেছে।
কার্বন, হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের একটি যৌগ চিনি। কার্বন ও অক্সিজেন দুটোই আগুন জ্বলতে সহায়ক। ৩৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রায় অপরিশোধিত চিনি গলে ভোলটাইল কেমিক্যালে (ঝুঁকিপূর্ণ রাসায়নিক) পরিণত হয় উল্লেখ করে নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক আলিউর রহমান বলেন, সেই ভোলটাইল কেমিক্যাল এস আলম সুগার রিফাইনারির ভস্মীভূত বর্জ্য কর্ণফুলী নদীতে এসে সম্পূর্ণ নদী এখন বিবর্ণ-বিষাক্ত হয়ে পড়েছে। এতে নদীর মাছ ও অন্য প্রাণিসম্পদ মরে পানিতে ভাসছে। এ দূষণ কর্ণফুলীর ইকোসিস্টেম দারুণভাবে বিপন্ন করছে। পানির দ্রবীভূত অক্সিজেনের মাত্রা কমে গিয়ে মাছ মৃত অবস্থায় ভেসে উঠছে। এছাড়া আরও বহুমাত্রিক বিপর্যয় ঘটছে, যা আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
আজ ভোরে কারখানার আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে উল্লেখ করে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাইন উদ্দিন বলেন, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর ১৮টি ইউনিটের প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে এসেছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় এখনো হালকা আগুন দেখা যাচ্ছে। আজ বিকেলের মধ্যে আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হবে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে দেরি হওয়ার কারণ হলো, যে কাঁচামালগুলো ছিল সেগুলো দাহ্য। পানি দেওয়ার পরও সেগুলো আবার জ্বলে ওঠে। কারখানায় এক লাখ মেট্রিক টন চিনির কাঁচামাল মজুত ছিল। এর মধ্যে ৮০ শতাংশ রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৪ মার্চ বিকেল পৌনে ৪টার দিকে কর্ণফুলী থানার এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজ নামের ওই চিনিকলে আগুন লাগে। এরপর খবর পেয়ে বিকেল ৩টা ৫৩ মিনিটে স্থানীয় পাঁচটি ফায়ার স্টেশনের ৯টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। পরে আগুন নিয়ন্ত্রণে যোগ দেয় সেনা, নৌ, বিমান বাহিনী ও কোস্ট গার্ড।