ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গাজায় ৮ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনিদের ইচ্ছাকৃতভাবে অনাহারে রেখার অভিযোগ এনেছেন জাতিসংঘের খাদ্য অধিকার বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি মাইকেল ফাখরি।
রোববার (০৪ মার্চ) এই তথ্য জানিয়েছে আল জাজিরা।
এ বিশেষ প্রতিনিধি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপের আহ্বান জানিয়ে হুশিয়ার করে বলেন, গাজায় ‘ইতোমধ্যে দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে’। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া পোস্টে ফাখরি এসব জানান। গাজায় ১০টি শিশু অনাহারে মারা যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিতের পর জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি ফাখরি এই বক্তব্য দেন।
মাইকেল ফাখরি বলেন, ফিলিস্তিনি জনগণকে ৮ অক্টোবর থেকে অনাহারে রেখে তৈরী করা এই দুর্ভিক্ষের অবসান ঘটাতে বা এর আরও ছড়িয়ে পড়া ঠেকানোর একমাত্র উপায় হল তাৎক্ষণিকভাবে যুদ্ধবিরতি চালু করা। এবং এই যুদ্ধবিরতি আদায় করার একমাত্র উপায় হল ইসরায়েলের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ আরোপ করা’, যোগ করেন তিনি। জাতিসংঘের বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত ফাখরি মানবাধিকার বিষয়ক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কাউন্সিল তাকে নিয়োগ দিয়েছে। তিনি বরেন, Israel has been intentionally starving the Palestinian people in Gaza since October 8. Now famine may very well be already occurring. The only way to end/prevent this famine is an immediate ceasefire. And the only way to get a ceasefire is to sanction Israel. https://t.co/MXchFFWYkh
— Michael Fakhri (@MichaelFakhri) March 3, 2024
জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে সংস্থাটির এক জ্যেষ্ঠ ত্রাণ কর্মকর্তা (২৭ ফেব্রুয়ারি) জানান, গাজার অন্তত পাঁচ লাখ ৭৬ হাজার বা মোট জনগোষ্ঠীর এক চতুর্থাংশ মানুষ দুর্ভিক্ষের দ্বারপ্রান্তে রয়েছেন। এই কর্মকর্তা হুশিয়ারি দেন, জরুরি উদ্যোগ না নেওয়া হলে গাজার সব এলাকায় বড় আকারে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়বে। জাতিসংঘের মানবিক উদ্যোগ সমন্বয় কার্যালয়ের সমন্বয় পরিচালক রমেশ রাজাসিংঘাম আরও বলেন, ‘সহিংসতা অব্যাহত থাকলে (এই সমস্যার সমাধানে) তেমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। দক্ষিণ গাজার জনবহুল এলাকাগুলোতে দুর্ভিক্ষ ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এ কারণে আমরা আবারও যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছি।’ তিনি আরও জানান, গাজার দুই বছরের কমবয়সী প্রতি ছয় শিশুর একজন অপুষ্টিতে ভুগছে এবং মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। সার্বিকভাবে, গাজার ২৩ লাখ ফিলিস্তিনিদের সবাই প্রয়োজনের তুলনায় ‘খুবই সামান্য’ খাবার খেয়ে বেঁচে আছেন, যা তারা ত্রাণ হিসেবে পান।
এদিকে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা গাজাবাসীর ওপর ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১০৪ জন নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবারের এ হামলায় অন্তত ৭৬০ জন আহত হয়েছে বলে গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের বরাত দিয়ে সিএনএন জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবরে থেকে গাজায় ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ১৩ হাজার শিশুসহ মোট ৩০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ৭০ হাজার মানুষ। গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এতে এক হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং হামাসের হাতে জিম্মি হন প্রায় ২৫৩ জন মানুষ। জিম্মিদের মধ্যে ১৩০ জন এখনো গাজায় আছেন এবং ৩১ জন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এ ঘটনার পর থেকে প্রায় হামাসকে নির্মূলের লক্ষ্যে গাজায় পাঁচ মাস ধরে সর্বাত্মক ও নিরবচ্ছিন্ন হামলা চালাচ্ছে ইসরায়েল। এই হামলায় নিহত ৩০ হাজারেরও বেশি মানুষের বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিহত শিশুর সংখ্যা প্রায় ১৩ হাজার ও নারীর সংখ্যা প্রায় আট হাজারের মতো। এছাড়া মিশর, কাতার ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতাকারীরা ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের আশাবাদ, ১০ বা ১১ মার্চ, অর্থাৎ, রমজান মাস শুরুর আগে থেকেই এই যুদ্ধবিরতি কার্যকর হবে।