ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শুল্ক কমানোর পর উল্টো দাম বেড়েছে রমজানের ভোগ্যপণ্যের!

শুল্ক কমানোর পর উল্টো দাম বেড়েছে রমজানের ভোগ্যপণ্যের!

পবিত্র রমজানে বাজারে পণ্যের দাম সহনীয় রাখতে চাল, চিনি, তেলসহ কিছু পণ্যের শুল্ক-কর কমিয়েছে সরকার। কিন্তু বাজারে এর কোনো প্রভাব তো পড়েইনি, উল্টো গত এক সপ্তাহে রমজানসংশ্লিষ্ট কয়েকটি পণ্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।

গত বুধবার পর্যন্ত বাজারে এসব উদ্যোগের প্রভাব পড়তে দেখা যায়নি। বসায়ীরা বলেছেন, দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের পদক্ষেপ যথাযথ নয়। ডলার সংকটে সাধারণ ব্যবসায়ীরা এতদিন ভোগ্যপণ্য আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেনি। তখন সরকার নজর দেয়নি। ফলে রমজানের এসব ভোগ্যপণ্য আমদানির সুযোগ নিয়েছেন সীমিত কয়েকজন আমদানিকারক।

ব্যবসায়ীরা মন্তব্য করেন, রমজানের আগমুহূর্তে আমদানিতে শুল্ক-কর কমানোর অর্থ অনেকটা বড় আমদানিকারকদের বাড়তি সুবিধা দেয়ার মতো।

এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি চালের আমদানি শুল্ক-কর ৬৩ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়। আর সম্পূরক শুল্ক কমানো হয় ২০ শতাংশ। এছাড়া পরিশোধিত-অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলের ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

এছাড়া, চিনি আমদানিতে প্রতি টনে আমদানি শুল্ক কমিয়ে ১ হাজার টাকা করা হয়েছে, আগে যা ছিল ১ হাজার ৫০০ টাকা। আর খেজুর আমদানিতে শুল্ক ৫৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে। কিন্তু দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহত্তম পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে চিনি ও ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে গেছে।

বাজারে পাইকারি পর্য়ায়ে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৩৪ টাকা দরে, যা এক সপ্তাহ আগে ১৩২ টাকায় বিক্রি হতো। এছাড়া গত সপ্তাহে পাইকারিতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৬১ টাকা, পাম তেল ১৩১ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৪ টাকা দরে বিক্রি হলেও এখন সয়াবিন তেল ১৫৫ টাকা, পাম তেল ১৩৪ টাকা ও সুপার পাম তেল ১৩৭ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।

ডলার সংকটের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীরা আমদানির ঋণপত্র খুলতে পারেননি। ব্যাংকমালিক কিংবা কোনো না কোনোভাবে ব্যাংকের সাথে সম্পৃক্ত আমদানিকারকরাই প্রভাব খাটিয়ে পণ্য আমদানির সুযোগ পেয়েছেন। রমজানসংশ্লিষ্ট পণ্যসহ দেশের পুরো ভোগ্যপণ্যের বাজার এখন সর্বোচ্চ ১০-১৫ জন বড় আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হাতে সীমাবদ্ধ। ফলে রমজানের আগমুহূর্তে শুল্ক-কর কমিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণ হবে বলে মনে হচ্ছে না। বরং এটা আমদানিকারকদের বাকি পণ্য আমদানিতে শুল্কছাড়ের সুযোগ করা দেয়া। যার কোনো সুফল ভোক্তারা পাবে না বলে জানিয়েছেন ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এ জামান এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী নুরুল আলম।

সাধারণ ব্যবসায়ীরা ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ঋণপত্র খুলতে পারছেন না—কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অভ বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসেন বলেন, বিষয়টা গত কয়েক মাস ধরে শুনে আসছি। তা সমাধানে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টরা কার্য়কর কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। রমজানের আগমুহূর্তে এখন পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণের তোড়জোড় শুরু করেছে সরকার। আমদানি থেকে শুরু করে বাজারজাত পর্য়ন্ত পূর্ণ প্রতিযোগিতা না থাকলে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

রাজধানীর কারওয়ান বাজার শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) ঘুরে বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুল্ক কমানোর পরও খুচরা পর্যায়ে ওই ভোগ্যপণ্যগুলোর দাম কমেনি। কারওয়ান বাজারের এক বিক্রয়কর্মী বলেন, খোলা চিনি ১৪০ টাকা এবং প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা কেজি, ছোলা ১১০ টাকা কেজি, বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭০ টাকা লিটার বিক্রি করছেন তারা।

সংবাদটি শেয়ার করুন