ঢাকা | মঙ্গলবার
২৬শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
১১ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কর্ণফুলীপাড়ের শুঁটকির কদর দেশ জুড়ে

কর্ণফুলীপাড়ের শুঁটকির কদর দেশ জুড়ে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক উপায়ে তৈরি করা বিষমুক্ত শুঁটকির কদর রয়েছে দেশ জুড়ে। নদীর দক্ষিণপাড় ইছানগর, জুলধা, ডাঙারচর এলকায় রয়েছে ১৫টি শুঁটকির পল্লি। বছরের ৮-১০ মাস এসব শুঁটকিপল্লিতে তৈরি করা হয় নানান প্রজাতির মাছের শুঁটকি। প্রতি মাসে একেকটি শুঁটকিপল্লি থেকে ১০-২০ টন শুঁটকি তৈরি হয়। এসব শুঁটকি বিক্রির জন্য আনা হয় দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকিবাজার চট্টগ্রাম নগরের আসদগঞ্জে।

জানা যায়, বঙ্গোপসাগর থেকে জেলেরা ফিশিং ট্রলার করে মাছ ধরে আনেন। তার পর সে মাছগুলো ট্রলার থেকে কিনে নেয় শুটকিপল্লির মালিকরা। এরপর এসব মাছগুলোর শুঁটকি তৈরি করা হয়। মূলত বাজারে যেসব মাছের দাম এবং চাহিদা কম সেসব মাছের শুঁটকি হিসেবে চাহিদা রয়েছে বেশি। মাছ পাওয়ার ওপর নির্ভর করে শুঁটকির উৎপাদন। যে মাসে যত মাছ পাওয়া যাবে সে মাসে তত শুঁটকি উৎপাদন বেশি হবে।

সরেজমিন কর্ণফুলীর এসব শুঁটকিপল্লি ঘুরে দেখা যায়, কর্ণফুলী নদীর পাড়ে বাঁশের মাচার ওপরে সারিসারি করে রোদে শুকানো হচ্ছে চিংড়ি, লইট্যা, ফাইস্যাসহ বিভিন্ন জাতের মাছ। বিষমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন শুঁটকি শুকানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন বিভিন্ন বয়সি নারী ও পুরুষ শ্রমিকরা। শুটকিপল্লিতে কয়েক ধাপে শুঁটকি শুকানো হচ্ছে। প্রথমে মাছ কেটে পরিষ্কার করছে একটি দল। আরেক দল সেই ধোয়া মাছ শুকাচ্ছে, কেউ-বা হালকা শুকানো মাছে লাগাচ্ছেন লবণ। কেউ কেউ ভালো-খারাপ শুঁটকি বেছে নিচ্ছেন। একদল শুটকিগুলো চাঙে শুকাতে দিচ্ছে। এসব শুঁটকির মধ্যে রয়েছে-ছুরি, ফাইস্যা, লইট্টা, লাক্কা, কোরাল, সুরমা শোল, কাচকি, বুচো, বাইলা, সল্প ফিশ, টাচ ফিশ, চাবিলে ইত্যাদি। তবে নিষিদ্ধ শাপলাপাতা মাছ কেটে শুঁটকি তৈরি করতে দেখা যায় এক শুঁটকি শ্রমিককে।

২০ বছর ধরে শুঁটকি তৈরি সঙ্গে জড়িত মালিক আলাউদ্দিন জানান, ‘আগে অনেক প্রকারের শুঁটকি তৈরি করা হতো কিন্তু মাছসংকটের কারণে এখন পাঁচ-ছয় প্রকারের শুঁটকি তৈরি করা হয়। সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক উপায়ে আমরা বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদন করি। আমাদের শুঁটকিপল্লি থেকে মাসে ১০ টন শুটকি তৈরি হয়।

শুটকিশ্রমিক আব্দুস সালাম জানান, আমি গত পাঁচ বছর ধরে এই শুঁটকির কাজ করছি। এখানে

ছোট শ্রমিকদের ১৫০-২৫০ টাকা, নতুনদের ৪০০- ৫০০ টাকা এবং অভিজ্ঞদের ৬০০-৭০০ টাকা দৈনিক মজুরি দেওয়া হয়। শেফায়েত উল্লাহ নামের ১২ বছরের এক কিশোর জানান, আমি, মা ও বড় আপু এই শুঁটকিপল্লিতে কাজ করি। আমি স্কুলে পড়াশোনা করি। আজ স্কুল বন্ধ ছিল, তাই কাজ করতে এসেছি।

কর্ণফুলীর শুঁটকির বিষয়ে কর্ণফুলী সিনিয়র মৎস্য অফিসার স্বপন চন্দ্র দে জানান, বিষমুক্ত শুটকির জন্য কর্ণফুলীতে আমরা শুটকি শ্রমিকদের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ দিচ্ছি এবং বিভিন্ন পরামর্শের মাধ্যমে তাদের বিষমুক্ত শুঁটকি উৎপাদনের বিষয়ে সচেতন করছি। এছাড়া কর্ণফুলী এখনো শুঁটকির বিষয়ে কোনো প্রকল্প আসেনি। তিনি আরো বলেন, প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে এসব শুটকি উৎপাদন হচ্ছে কি না, সে বিষয়টি দেখতে আমরা মাঝেমধ্যে এসব শুঁটকিপল্লিগুলোতে পরিদর্শনে যাই।

দেশের সর্ববৃহৎ শুঁটকিবাজার চট্টগ্রাম নগরীর আছাদগঞ্জ শুঁটকি ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ওসমান হায়দার জানান, কক্সবাজার, টেকনাফ, মহেশখালী থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে এখানে শুঁটকি আনা হয়। কর্ণফুলী থেকেও সারা বছর বৃহৎ একটা অঙ্কের শুঁটকি আসে এখানে। সারা দেশে এসব শুঁটকি খুচরা ও পাইকারিভাবে নেওয়া হয়। গুণমান ভালো হওয়ায় দেশের বাইরেও এখানকার শুঁটকির চাহিদা রয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন