শত বছরের গ্রামীণ ঐতিহ্য বকচর মাছের মেলা। মেলায় সব বয়সী ও শ্রেণি পেশার মানুষের ঢল নামে। এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বাংলা সালের হিসেব অনুযায়ী প্রতি বছর মাঘ মাসের তৃতীয় সপ্তাহের বুধবার বগুড়ার ধুনট উপজেলার হেউডনগর-কোদলাপাড়া এলাকায় বকচর মেলার আয়োজন করা হয়।
মেলার প্রায় সপ্তাহখানেক আগেই স্বজনদের দাওয়াত করেছেন স্থানীয়রা। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন নতুন জামাই-বউ। মেলার প্রধান আকর্ষণ মাছ। তবে এর সাথে বিভিন্ন সামগ্রী কিনতে দূর-দূরান্ত থেকে এসেছেন বিপুল সংখ্যক মানুষ। সব মিলে হাজারো মানুষের প্রাণের মেলবন্ধন হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী বকচর মেলা।
বছরের এ সময়টাতে এ অঞ্চলের মেয়েরা স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়ি আসেন। পরে এ মেলাতে জামাইরা আসেন মাছ-মিষ্টি কিনতে। মেলায় ওঠা বড় আকারের মাছ ও মিষ্টি কিনে জামাই ফেরেন শ্বশুরবাড়ি। সেই মাছ-মিষ্টিতে এলাকার প্রতি বাড়িতে চলে জামাই উৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সকাল থেকেই মেলামুখি হাজারো মানুষের ¯্রােত। মেলার সিংহভাগ জায়গা মাছ ব্যবসায়ীদের দখলে। এর মধ্যে আড়তদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা রয়েছেন। ট্রাকে ট্রাকে মাছ আড়তে নামছে আর খুচরা ব্যবসায়ীরা সেগুলো কিনে দোকানে ভরছেন। মেলায় ৫ কেজি থেকে শুরু করে ৩০ কেজি ওজনের বাঘাইড় মাছ আমদানী হয়েছে। মাছের আকার ভেদে ৭৫০ টাকা থেকে দুই হাজার টাকা কেজি দরে এই বাঘাইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে।
মেলায় আসা বাবুল ইসলাম, ফজলে রাব্বি, জাহিদুল ইসলাম, আব্দুল হামিদ, সাইদুল ইসলাম জানান, প্রতিটি মেলাই বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ। মাত্র একদিনের মেলায় এতো মানুষের সমাগম ঘটে তা ভাবতেও পারা যায় না। অথচ এ মেলায় সেটিই ঘটেছে। যা স্বচক্ষে দেখা হলো। পাশাপাশি মাছের মেলাখ্যাত বকচর মেলায় এসে বড় বড় মাছ দেখার সঙ্গে সাধ্যানুসারে মাছও কেনা হলো বলে তারা জানান।
মেলার মাছ ব্যবসায়ী সিরাজগঞ্জের আলহাজ্ব আব্দুস ছামাদ জানান, এবারের মেলায় যমুনা নদী ও চলন বিলের বড় বড় বিভিন্ন প্রজাতির মাছসহ পুকুরে চাষ করা মাছের প্রচুর আমদানি ঘটেছে। তবে ৫-১০কেজি ওজনের মাছের চাহিদা বেশি। ক্রেতার চাহিদা বুঝে ব্যবসায়ীরা মেলায় এই ওজনের মাছের বেশি আমদানি করেছেন।