দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ‘একপাক্ষিক’ ও ‘পাতানো প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ’ নির্বাচন হিসেবে অভিহিত করেছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সংস্থাটি জানিয়েছে, নির্বাচনের দিনও অন্তত ৫১ শতাংশ আসনে জাল ভোট, প্রকাশ্যে সিল মারা ও বুথ দখলের ঘটনা ঘটেছে।
বুধবার (১৭ জানুয়ারি) টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার প্রাথমিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী এই সংস্থা।
টিআইবি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়া ২৯৯টি আসনের মধ্যে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে আটটি বিভাগের ৫০টি আসনে গবেষণা চালিয়েছে উল্লেখ করে তারা জানায়, নির্বাচনের দিন শতভাগ আসনেই একাধিক অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বিভিন্ন শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনায় নিষ্ক্রিয় থেকেছেন, যার পরিমাণ ৮৫ দশমিক ৭ শতাংশ আসনে।
এছাড়াও সংস্থাটি জানায় নির্বাচনে সব দলের প্রার্থীদের জন্য সমানভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি। ফলে ৭৭ দশমিক ৬ শতাংশ আসনে তথ্য প্রবাহ নিয়ন্ত্রণ বা যোগাযোগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হয়েছে। প্রতিপক্ষের পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ৭৫ শতাংশ আসনে। সাংবাদিক ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের কেন্দ্রে প্রবেশে বাধা দেওয়া হয়েছে ৬১ শতাংশ আসনে।
৫৫ শতাংশ আসনে ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা হয়েছে উল্লেখ করে টিআইবি জানায়, বুথ দখল, প্রকাশ্যে সিল মারা ও জাল ভোটের ঘটনা ঘটেছে ৫১ শতাংশ আসনে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের যারা অনিয়মের অভিযোগ করেছেন, তাদের ৫১ শতাংশ অভিযোগ তদন্ত করে দেখা হয়নি। প্রতিপক্ষের ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি ৪৯ শতাংশ আসনে।
৪৩ শতাংশ আসনে ভোট গণনায় জালিয়াতি হয়েছে প্রায়। নগদ টাকা বা পরিবহন খরচ ও খাবার দিয়ে ভোট কেনার ঘটনা ঘটেছে ৩৮ শতাংশ আসনে।
নির্বাচন কমিশন এই নির্বাচনে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা ও আইনগত সীমারেখার নামে কখনো অপারগ হয়ে, কখনো কৌশলে একতরফা নির্বাচনের এজেন্ডা বাস্তবায়নের অন্যতম অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছে জানিয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেছেন, অন্যান্য রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান, বিশেষ করে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ও প্রশাসনও একই এজেন্ডার সহায়ক ভূমিকায় ব্যবহৃত হয়েছে। এই নির্বাচনের সার্বিক অভিজ্ঞতা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের ভবিষ্যতের জন্য অশনি সংকেত। যা গৌরবময় মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনা ও স্বপ্নের সাথে সাংঘর্ষিক।