`বিশ্বব্যাপী গত বছর (২০২৩) খাবারের দাম আগের বছরের তুলনায় ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ কমলেও একই সময় বাংলাদেশে খাবারের দাম ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বেড়েছে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) তথ্যের সঙ্গে সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র দেখা গেছে। এফএওর খাদ্য মূল্যসূচক ২০২৩ প্রতিবেদন বলছে, ২০২২ সালের ডিসেম্বরের তুলনায় ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে (পয়েন্ট টু পয়েন্ট) খাদ্যের দাম ১০ দশমিক ১ শতাংশ কমেছে। আর সারা বছর (২০২২ এর তুলনায় ২০২৩ এ) ব্যবধানে কমেছে ১৩ দশমিক ৭ শতাংশ। ওই প্রতিবেদন বলছে, এ সময় প্রায় সব ধরনের খাদ্যপণ্যের দাম কমেছে শুধু চিনি ছাড়া।
প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বাংলাদেশের খাদ্য মূল্যস্ফীতি (পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট) জানুয়ারিতে সর্বনিম্ন ৭ দশমিক ৭৬ শতাংশ থেকে আগস্টে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০২৩ সালে গড় খাদ্য মূল্যস্ফীতি কখনো ১০ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশের কম ছিল না।
পরিসংখ্যানে (বিবিএস’র) দেখা যায় ২০২৩ সালের শুরু থেকেই খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ঊর্ধ্বমুখী। বছরের শেষ ভাগে এসে তা আরও বেড়েছে। সরকারের নানান পদক্ষেপেও খাদ্যপণ্যের দামে লাগাম টানা যায়নি। বেড়েছে ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য। গত আগস্ট মাসে হঠাৎ খাদ্য মূল্যস্ফীতি প্রথমবারের মতো দুই অঙ্কের ঘরে উঠে যায়, যা ছিল গত এক দশকের মধ্যে সর্বোচ্চ। পরের তিন মাস খাদ্য মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ শতাংশের ওপরে। অক্টোবরে মূল্যস্ফীতি ছিল ১২ দশমিক ৫৬ শতাংশ, যা গত ১১ বছর ৯ মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদন গত সপ্তাহে উল্লেখ করেছে, খাদ্যের বাড়তি থাকা দাম বাংলাদেশের ৭১ শতাংশ পরিবারের জন্য উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। দেশে এক বছর ধরেই খাদ্যে উচ্চ মূল্যস্ফীতি বিরাজমান। বছরজুড়ে প্রতিবেশী দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান, ভুটান ও নেপালে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাংলাদেশের চেয়ে বেশ কম ছিল।
বৈশ্বিক যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে বিশ্ব অর্থনীতিতে কিছুটা দুরবস্থা সৃষ্টি হলে বছরের শুরুতে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের ঘাটতি, পণ্য ও কাঁচামাল আমদানিতে ডলার সংকট, পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে দ্রব্যমূল্যের সরবরাহ সংকটও ছিল। তারপরও এ বছর গম, চিনি ও ভোজ্যতেলের মতো বিভিন্ন আমদানিভিত্তিক নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমেছে।
কিন্তু দেশে ডলার সংকট এবং জ্বালানির দাম বাড়ায় উচ্চতর আমদানি ব্যয়ের কারণে আমদানিকারকরা পণ্যের দাম কমায়নি। এতে বাংলাদেশের স্থানীয় বাজারে এর সুফল পাননি ভোক্তারা। বরং বছরজুড়ে ওইসব সমস্যা পুঁজি করে একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বাজার সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। প্রকৃতপক্ষে যতটুকু দাম বাড়ার কথা তার চেয়ে কয়েকগুণ দাম বাড়িয়ে অবৈধ মুনাফা লুটেছে অতি মুনাফালোভীরা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে যা হচ্ছে, সেটাকে ব্যবসা বলা যাবে না। ভোক্তাকে জিম্মি করে ডাকাতি চলছে। এটা সম্পূর্ণ অনৈতিক। বাজারে সুশাসনের ঘাটতির কারণেই সমস্যা হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা যেমন খুশি দাম নির্ধারণ করছেন, সরকারের কোনো বিধি-বিধানের তোয়াক্কা করা হচ্ছে না, আবার সরকার এসব নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে।