ঢাকা | শুক্রবার
২২শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ,
৭ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বাবার পথ ধরে শ্রীপুরের প্রথম নারী সাংসদ টুসি

গাজীপুরের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে গাজীপুর-৩ (শ্রীপুর-পিরুজালী-মির্জাপুর-ভাওয়ালগড়) আসনটি জেলার অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ একটি আসন। বাংলাদেশ কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলী এ আসনটিতে পাঁচবার সংসদ সদস্য হিসেবে নেতৃত্ব দেন। তিনি একবার স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছিলেন।

বাবার পথ ধরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটিতে কন্যা অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি নৌকা প্রতীকে বিজয়ী হন। রুমানা আলী টুসি এ আসনের প্রথম নির্বাচিত নারী সংসদ সদস্য। নানা কারণে নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি বিজয়ী হন। বিজয় প্রসঙ্গে তৃণমূলের বিভিন্ন ইউনিটের নেতৃবৃন্দ নানামুখী মন্তব্য করেছেন।

গাজীপুর জেলা স্বেচ্ছাসেবকলীগের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন জর্জ বলেন, বাবার পথ ধরে এবং বাবার আদর্শ ধারণ করে তিনি মানুষের কাছে ভোট চেয়েছেন। ভোট প্রার্থনার সময় তাঁরই রাজনৈতিক সহযোদ্ধা এবং সহোদর বড় ভাই গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় তাঁর পাশে থেকে ভোট প্রার্থনা করেছেন।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম আকন্দ বলেন, রুমানা আলী টুসি সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। তখন থেকেই তিনি বাংলাদেশ কৃষকলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বহুমুখী অর্পিত দায়িত্ব তিনি যথাযথভাবে সম্পাদন করেছেন। নানা কারণে তিনি পরীক্ষিত একজন নারী হিসেবে দলীয় কর্মকান্ডে সক্ষমতার প্রমাণ দেন। তাছাড়া তৃণমূল জনপ্রিয়তায়ও তিনি উচ্চতম অবস্থানে থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ে বিজয়ী হন।

শ্রীপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি ও শ্রীপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট শামসুল আলম প্রধান বলেন, উচ্চ শিক্ষিত, সৎ নারী হিসেবে ইতোমধ্যে সকল শ্রেণী পেশার মানুষের কাছে অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন। নারীদের মধ্যেও তাঁর এ যোগ্যতা নির্বাচনী প্রচারের সময় ইতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি করেছে। আর তাই ভবিষ্যতের জন্য এ নারীকে গাজীপুর-৩ আসনের মানুষ তাঁদের সংসদীয় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য মনোনীত করেছে।

কেওয়া গ্রামের হামিদা খাতুন বলেন, ছোট বেলা থেকেই রুমানা আলী টুসিকে তার বাবা প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলীর সাথে দেখেছি। সেদিনের টুসি আজ একজন যোগ্য নারী নেত্রী। যেদিন আমাদের এখানে ভোট চাইতে এসেছে সেদিন দেখে অবাক হয়েছি। সেদিনই মনে হয়েছিল টুসিকে মানুষ জনপ্রতিনিধিত্ব করার ক্ষমতা দিবে। আজ তাই ই হয়েছে।

শ্রীপুর পৌরসভার ১ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা জসীম উদ্দিন বলেন, ভোটের কয়েকদিন আগে শ্রীপুরের শাপলা সিনেমা হলের কাছে নির্বাচনী জনসভায় টুসি বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁর সহোদর বড় ভাই অ্যাডভোকেট জামিল হাসান দুর্জয় তাঁর বাবা-মা ও পরিবারের সাথে শ্রীপুরের মানুষের সম্পর্কের ব্যাপারে কথা বলতে গিয়ে আবেগাল্পুত হয়ে পড়েন। সেদিন শুধু তারা দুই ভাই-বোন কাঁদেনি, উপস্থিত সকল মানুষ বাস্তবধর্মী স্মৃতি শোনে কেঁদেছিল। মানুষ সেদিন বুঝতে পেরেছিল রহমত আলীর পরিবারের সাথে শ্রীপুরের মা মাটির সম্পর্কের ইতিবৃত্ত। যারা নৌকার পক্ষে ছিল না সেদিনের পর অনেকে সঠিক বিষয় বুঝতে পেরে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নৌকার পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল। সব কিছুর সংমিশ্রণে আজ আমাদের টুসি গাজীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য।

গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সুলতান মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, আওয়ামীলীগ করে কেউ দলীয় প্রতীকের বাইরে যেতে পারে না। ব্যাক্তিত্বে বিরোধ থাকতে পারে কিন্তু দলের সাথে বিরোধ করলে সে দলে থাকার যোগ্যতা হারায়। এই জায়গা থেকে গাজীপুর জেলা ছাত্রলীগ জেলার প্রতিটি ইউনিটের নেতা কর্মীদেরকে সংগঠিত করে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে। গাজীপুর জেলা পর্যায়ের সংসদীয় আসনগুলোতে বিজয়ের নেপথ্যে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দৃঢ় সংকল্প নিয়ে কাজের প্রমাণ রেখেছে।

প্রসঙ্গত, সাবেক প্রতিমন্ত্রী প্রয়াত অ্যাডভোকেট রহমত আলীর কন্যা আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী অধ্যাপিকা রুমানা আলী টুসি ১ লাখ ২৬ হাজার ১৯৬ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্ব›দ্বী ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজীপুর জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান এমপি মুহাম্মদ ইকবাল হোসেন সবুজ পেয়েছেন ১ লাখ এক হাজার ৬৭৪ ভোট।

সংবাদটি শেয়ার করুন