দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ আজ রোববার (৭ জানুয়ারি) সকাল ৮টায় শুরু হয়ে শেষ হয়েছে বিকেল ৪টায়। একতরফা নির্বাচনের অভিযোগ তুলে শুরু থেকেই নির্বাচন বর্জন করে অন্যতম বিরোধী দল বিএনপি ও সমমনা কয়েকটি দল। নানা প্রতিবাদ-কর্মসূচি, অসহযোগ আন্দোলনসহ সবশেষ ভোট বর্জনের দাবিতে দেশব্যাপী ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি পালন করছে দলগুলো।
নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ ২৮টি রাজনৈতিক দল নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। এদিকে, চলমান অস্থিরতার সুযোগে ট্রেন, বাস ছাড়াও ভোটকেন্দ্রে নাশকতা চালাচ্ছে একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী। একই সময়ে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের বিপরীতে এবার ২৯৯টি আসনে ভোটগ্রহণ হয়েছে। তবে নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের হঠাৎ মৃত্যুতে সেখানে ভোটগ্রহণ স্থগিত করা হয়।
নির্বাচনে মোট ভোটার রয়েছেন ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন এক হাজার ৯৬৯ প্রার্থী। সারাদেশে ভোটকেন্দ্র ৪২ হাজার ২৪টি। এবার ভোট হচ্ছে ব্যালট পেপারে, ইভিএমে নয়। অন্যদিকে নির্বাচনকে ঘিরে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সশস্ত্র বাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, বিশেষ বাহিনী ও আনসার-ভিডিপি সদস্যদের মোতায়েন করা হলেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতা, অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। দক্ষিণ এশিয়া তথা গোটা এশিয়া উদীয়মান শক্তি হিসেবে বরাবরের মতো বাংলাদেশের নির্বাচন গুরুত্ব পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে থেকে ভোটগ্রহণের দিন পর্যন্ত প্রায় প্রতিদিনই এসব মাধ্যমে নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়েছেন শেখ হাসিনা ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।
রোববার প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যমগুলোর সংবাদ এক নজরে…
‘বিরোধীদলের ভোট বর্জনের মধ্যেই বাংলাদেশে চলছে ভোট গ্রহণ’ শিরোনামে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা সরাসরি হালনাগাদ সংবাদ প্রকাশ করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থ এবং সবমিলিয়ে পঞ্চম মেয়াদে জয়লাভ করতে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে একতরফা নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগও রয়েছে।
যে (বিতর্কিত ও একতরফা) নির্বাচন আয়োজন করা হচ্ছে, তা পশ্চিমা অংশীদারদের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ককে বিশেষভাবে প্রভাবিত করতে পারে, বিশেষত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে। আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের বরাতে প্রতিবেদনে বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়েছে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স শিরোনাম করেছে, বাংলাদেশের নির্বাচনে ভোটারের সংখ্যা কম, ক্ষমতায় থাকছে শেখ হাসিনাই। রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশিদের বড় একটি অংশই সাধারণ নির্বাচন থেকে দূরে ছিল। এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থ বারের মতো ক্ষমতায় আসছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধান বিরোধী দল এই নির্বাচন বয়কট করেছে। তারপরেও ভোটের দিন ব্যাপক সহিংসতা দেখা গেছে।
বিএনপি এবং কয়েকটি ছোট মিত্রদের ভোট বয়কটের পর ১৭ কোটি জনসংখ্যার দেশটি ভার্চুয়াল একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে বলে প্রতিবেদনে সতর্ক করেছে রয়টার্স।
প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম এএফপির শিরোনামে বলা হয়েছে, বিরোধীদল ছাড়া বাংলাদেশে ভোট হচ্ছে। আর মার্কিন প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম সিএনএনের শিরোনামে গুরুত্ব পেয়েছে বিরোধী দলের ভোট বর্জন।
এছাড়া আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম ফ্রান্স২৪, দ্য উইক, আইরিশ এক্সামিনারে প্রকাশিত খবরের শিরোনামেও বিরোধী দলগুলোর ভোট বর্জনের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।
ফ্রান্স২৪ এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভোট বর্জনের কারণে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা অনেক দুর্বল প্রার্থী ও প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখোমুখি হচ্ছে। দ্য উইকের শিরোনামে বলা হয়েছে, টানা চতুর্থ মেয়াদে শেখ হাসিনার সম্ভাব্য বিজয় আঞ্চলিক রাজনীতিতে প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে সংঘাতময় ও উদ্বেগজনক পরিবেশে নির্বাচন চলছে। আরেকটি গণমাধ্যম মিন্ট ‘বাংলাদেশের নির্বাচন: ভারতের জন্য শেখ হাসিনার পুনর্নির্বাচনের মানে কী?’ এমন শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা।