ঢাকা | রবিবার
১৩ই এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ,
৩০শে চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

জাতিসংঘে যুদ্ধবিরতির পক্ষে ১৫৩, বিপক্ষে ১০ ভোট

জাতিসংঘে

ইসরায়েলী বাহিনী গাজায় দুই মাসেরও বেশি সময় ধরে নির্বিচার হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন হারাচ্ছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ ভোটে ১৫৩ সদস্য দেশ গাজায় তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে সমর্থন জানিয়েছে, আর বিপক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ১০।

বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) বার্তাসংস্থা রয়টার্স এই তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ১৯৩ সদস্যের মধ্যে তিন চতুর্থাংশ সদস্য সম্মতি দেয়। বেশ কিছুদিন ধরেই জাতিসংঘের কর্মকর্তারা গাজার উদ্বেগজনক মানবিক সংকট নিয়ে সতর্কবাণী দিয়ে আসছেন। এ ভোটের মধ্যদিয়ে স্পষ্ট হয়েছে দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও ইসরায়েল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। দেশটি যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দিলেও প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন মন্তব্য করেন, গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ‘নির্বিচার’ বোমাহামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক মহলের সমর্থন হারাচ্ছে। এদিকে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের নেতারা এক যৌথ বিবৃতিতে আলাদা আলাদা করে বলেন, ‘হামাসকে পরাজিত করার উদ্যোগে ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিকদের অন্তহীন দুর্ভোগ সহ্য করতে হচ্ছে, যার মূল্য অনেক চড়া।’

এদিকে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জাতিসংঘের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে এবং সব দেশকে এই সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়ার জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ সৃষ্টির অনুরোধ জানিয়েছে। নির্বাসিত হামাস নেতা ইজজাত এল-রেশিক টেলিগ্রামে পোস্ট করে জানান, ইসরায়েলের উচিত ‘আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে আগ্রাসন, গণহত্যা ও জাতিগত নিশ্চিহ্নকরণের উদ্যোগগুলো বন্ধ করা।’

আট দেশের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে ভোট দেয়। এ ক্ষেত্রে যুক্তি ছিল, যুদ্ধবিরতিতে একমাত্র হামাসই উপকৃত হবে। ভোটের আগে জাতিসংঘে ইসরায়েলের রাষ্ট্রদূত গিলাদ এরদান বলেন, ‘যুদ্ধবিরতির অর্থ একটাই—হামাসের টিকে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করা। ইসরায়েল ও ইহুদীদের নিশ্চিহ্ন করতে সংকল্পবদ্ধ, গণহত্যা-প্রিয় জঙ্গিদের টিকে থাকা নিশ্চিত করা।’ ভোটের আগে বাইডেন বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত ‘বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ’ ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের যুদ্ধকে সমর্থন করছে, যার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ইসরায়েল গাজায় বেসামরিক ব্যক্তিদের ওপর নির্বিচারে বোমাহামলা চালিয়ে সেই সমর্থন হারাতে বসেছে’, যোগ করেন বাইডেন।

এক নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানে বাইডেনের এই বক্তব্যে প্রথমবারের মতো এবং সবচেয়ে প্রকট হয়ে দুই মিত্রদেশের নেতাদের চিন্তাধারার পার্থক্য প্রকাশ পেয়েছে। বাইডেন আরও জানান, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর উচিত তার কট্টরপন্থী সরকারে পরিবর্তন আনা এবং পরিশেষে ইসরায়েল ‘স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের’ ধারণাকে ‘না বলতে পারে না’। ইসরায়েলের কট্টরপন্থীরা এই দুই-রাষ্ট্র নীতির ঘোর বিরোধিতা করে থাকে।

উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি ভূখণ্ডে হামলা চালিয়ে এক হাজার ২০০ ইসরায়েলিকে হত্যা করে হামাস। জিম্মি হয় প্রায় ২৪০ জন। এরপর হামাসকে নির্মূলের অঙ্গীকার করে ইসরায়েল। মাঝে সাত দিনের যুদ্ধবিরতি বাদ দিলে বাকি প্রায় পুরো সময়টা গাজা উপত্যকায় নির্বিচার স্থল ও বিমানহামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।

এদিকে হামাসকে নির্মূল করার এই আগ্রাসনে অন্তত ১৮ হাজার ২০৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই বেসামরিক শিশু ও নারী। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও অন্তত ৫০ হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। এ নিয়ে জাতিসংঘ ও গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, এই হামলার ফলে গাজার বেশিরভাগ মানুষ অনাহারে আছেন এবং ৮৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন