দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন বলে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন, তাদের মধ্যে ১১৮ জন প্রার্থী ঋণখেলাপি। আইন অনুযায়ী-কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না।
এ সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে ৩০০ আসনের বিপরীতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্রসহ ২ হাজার ৭১৩ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনের অনুরোধে এসব প্রার্থীদের সিআইবি তথ্য যাচাই-বাছাই করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। যাচাই-বাছাইয়ে ১১৮ জন প্রার্থী ঋণখেলাপি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন। পরে এ তথ্য নির্বাচন কমিশনে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সোমবার (৪ ডিসেম্বর) বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনায় খেলাপি প্রার্থীদের তথ্য পাঠানো হয়েছে। এখন কমিশন বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেবে। আইন অনুযায়ী- ঋণখেলাপিরা নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন না। তাই মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত তথ্যের সঙ্গে সম্ভাব্য প্রার্থীর দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখেন রিটার্নিং কর্মকর্তারা। কোনো প্রার্থী ঋণখেলাপি থাকলে তার মনোনয়নপত্র বাতিল করে দেন। এ কারণে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারাও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকেন। এ ছাড়া আপিলের শুনানির সময় নির্বাচন কমিশনেও ঋণখেলাপি প্রার্থীদের ঠেকাতে ব্যাংক কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকেন।
এ ছাড়াও গণপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ অনুযায়ী— প্রার্থীদের নামে খেলাপি ঋণ থাকলে তা মনোনয়নপত্র দাখিলের আগে নবায়ন বা পরিশোধ করতে হয়। আর যথাসময়ে ঋণ নবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রার্থী হতে পারেন। অন্যথায় প্রার্থী হতে পারবেন না। এর আগে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা অংশ নেবেন, তাদের খেলাপি ঋণের তথ্য রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে দেওয়ার জন্য ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দিয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ (এফআইডি)। গত মঙ্গলবার এফআইডির থেকে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশ দেওয়া হয়। এরপর বৃহস্পতিবার দেশের সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) কাছে এ নির্দেশনা পাঠিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, প্রার্থীদের ঋণখেলাপি সম্পর্কিত তথ্য নির্ভুলভাবে দেওয়ার দায়িত্ব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের। ভুল তথ্য দিলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় ব্যাংকের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত থেকে প্রার্থীদের খেলাপি ঋণের তথ্য মিলিয়ে দেখবেন এবং কোনো ঋণখেলাপি প্রার্থী হয়েছেন কি না। তবে যেসব প্রার্থী নিজস্ব নির্বাচনী এলাকার পরিবর্তে অন্যত্র ব্যাংক হিসাব বা ঋণ হিসাব পরিচালনা করে আসছেন, তাদের তালিকা রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছ থেকে ব্যাংকের এমডিরা বিশেষ দূতের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন এবং বিশেষ দূত বা ফ্যাক্স বা ই–মেইলের মাধ্যমে এ তথ্য নির্বাচন কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক (সিআইবি) ও সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের কাছে পাঠান।
জাতীয় নির্বাচনে ঋণখেলাপিদের অংশগ্রহণ ঠেকাতে ১৯৯১ সালে প্রথম খেলাপিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এদিকে সারাদেশে প্রার্থীদের জমা দেওয়া মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে ১৯৮৫ জন প্রার্থী বৈধ ও ৭৩১ জন প্রার্থী অবৈধ বলে ঘোষণা করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সোমবার (৪ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ বলেন, যাদের প্রার্থিতা বাতিল হয়েছে তারা ৫ ডিসেম্বর থেকে ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপিল করতে পারবেন। ১০ ডিসেম্বর থেকে আপিল শুনানি শুরু হবে। চলবে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। তফসিল অনুযায়ী, রিটার্নিং কর্মকর্তার সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কমিশনে আপিল দায়ের ও নিষ্পত্তি হবে ৫ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ সময় ১৭ ডিসেম্বর। রিটার্নিং কর্মকর্তারা প্রতীক বরাদ্দ করবেন ১৮ ডিসেম্বর। নির্বাচনী প্রচার চলবে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত। আর ভোটগ্রহণ হবে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি (রোববার)।