৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা আগামী ২৭ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর লাগাতার হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির কারণে এ পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছেন প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীরা। তারা প্রধান নির্বাচন কমিশন (সিইসি) বরাবর লিখিত আবেদনও করেছেন।
সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) লিখিত এ পরীক্ষা পেছানো হবে কি না, তা নিয়ে এখনো আলোচনা করেনি। নির্বাচন কমিশন (ইসি) থেকে পিএসসি কোনো বার্তাও পায়নি। ফলে ২৭ নভেম্বর থেকেই পরীক্ষা গ্রহণের প্রস্তুতি এগিয়ে নিচ্ছে সংস্থাটি। পিএসসি কর্মকর্তারা বলছেন, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মসূচির কারণে দেশের পরিস্থিতি বেশি খারাপ হয়, তখন বিষয়টি ভেবে দেখা হবে। একই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো বার্তা বা প্রার্থীদের আবেদন বিবেচনা করার নির্দেশনা এলে আলোচনা করে সেক্ষেত্রে পরীক্ষা পেছানোর সিদ্ধান্ত হতে পারে।
লিখিত পরীক্ষা নিয়ে পিএসসির পরীক্ষা শাখার (ক্যাডার) একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পরীক্ষা পেছানোর কোনো পরিকল্পনা পিএসসির নেই। আমাদের প্রশ্নপত্র তৈরির কাজ শেষ। ২৭ নভেম্বর থেকেই পরীক্ষা শুরুর জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। যদি নির্বাচন কমিশন থেকে অনুরোধ করা হয়, সেক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা পরীক্ষা পেছানোর ব্যাপারে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। সংস্থাটির অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ৪৩তম বিসিএসের মৌখিক পরীক্ষা হরতাল-অবরোধের মধ্যেই নেওয়া হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষা শুধু ঢাকায় পিএসসির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে নেওয়া হয়। সেটাও পেছানো হয়নি। আর লিখিত পরীক্ষা হবে বিভাগীয় পর্যায়ে। প্রার্থীরা নিজ নিজ বিভাগের কেন্দ্রে পরীক্ষা দেবেন। এজন্য সমস্যা হওয়ার কারণ দেখছি না।
পিএসসি চেয়ারম্যান সোহরাব হোসাইন বলেন, নির্বাচন কমিশন থেকে এখনো আমাদের কিছু জানানো হয়নি। কারা আবেদন করেছেন, কতজন আবেদন করেছেন; সেটাও জানি না। তবে প্রার্থীদের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে এটুকু বলতে পারি—দেশের সার্বিক পরিস্থিতি যদি আরও বেশি খারাপের দিকে যায়, সেক্ষেত্রে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর এরমধ্যে ইসি যদি কোনো চিঠি দেয়, সেটাও বিবেচনায় নেওয়া হবে।
তবে নির্বাচন কমিশন সচিব বা সংস্থাটির অন্য কারও সঙ্গে এ নিয়ে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। ফলে নির্বাচন কমিশন আদৌও প্রার্থীদের আবেদন আমলে নিয়ে কোনো পদক্ষেপে নেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়। রোববার (১৯ নভেম্বর) সিইসি বরাবর লেখা একটি আবেদনপত্র নির্বাচন কমিশনে সশরীরে হাজির হয়ে জমা দেন প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে লিখিত পরীক্ষায় অংশ নিতে অপেক্ষায় থাকা কয়েকজন প্রার্থী। আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ২৭ নভেম্বর থেকে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১৫ দিন ঢাকাসহ সারাদেশে ৪৫তম বিসিএস লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। পিএসসি এরই মধ্যে সময়সূচি প্রকাশ করেছে। পরীক্ষার্থী হিসেবে সময়সূচি অনুযায়ী পরীক্ষা দিতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি তুলে ধরে সেখানে বলা হয়, তবে তফসিল ঘোষণার পর চলমান হরতাল-অবরোধ আরও ব্যাপক ও মারাত্মক আকার ধারণ করায় পরীক্ষার পরিবেশ নিয়ে তারা শঙ্কিত। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ ও পিএসসির সঙ্গে আলোচনা করে স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে পরীক্ষা আয়োজনের ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান পরীক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, গত ৬ জুন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিমিনারি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হয়। এতে মোট ১২ হাজার ৭৮৯ জন ৪৫তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণ হয়েছেন। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষার রুটিন অনুযায়ী টেকনিক্যাল ক্যাডার ও উভয় ক্যাডারের বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা হবে ২৭ নভেম্বর। সাধারণ ক্যাডার ও উভয় ক্যাডারের প্রার্থীদের বাংলা দ্বিতীয়পত্র পরীক্ষা হবে ২৮ নভেম্বর। ৪৫তম বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা চলবে আগামী ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ৪৫তম বিসিএসের মাধ্যমে মোট দুই হাজার ৩০৯ জন ক্যাডার নেওয়া হবে। নন-ক্যাডারে নেওয়া হবে এক হাজার ২২ জন।